দরদর করে ঘামলাম আজ। 'দরদর করে' কথাটিও বুঝলাম খুব ভালো করে। আগে কেবল শাব্দিক পরিচয় ছিল ওর সাথে।
রিক্সায় বসে রেডিওটা টিউন করলাম আজও। অথচ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম 'আর কক্ষনই না।' রেডিওটা একটানা বকে গেল কপালের ঘাম মুছতে মুছতে। আমি ঘাড়েরগুলো মুছে চলেছি একটু পরপর। ড্রাইভারের সাদা চুলে কড়া রোদ অনেক বেশি প্রতিফলিত হচ্ছিল। হিংসে হচ্ছিল অনেক।
কিন্তু আমি অনেকবার ডাকলাম রিক্সায় বসে। সম্ভবত হেলম্যাট এর কারণে। একদমই শোনে নি। অথচ যখন মোড় নিয়েছিলাম ডান দিকে, তখন একবার চোখাচোখি হয়েছিল। আমি ব্যাপারটাকে হাল্কা করতে চাইলাম। তাই একটু এগিয়েই যখন ছোটখাট একটা জ্যাম-এ আটকা পরে আমার রিক্সা আর ওর বাইকটা প্রায় কোলাকুলি করতে বসেছিল, বেশ কয়েকবার ডেকেছি হাসিমুখে। কিন্তু ওকে বেশ বিব্রত মনে হলো। খুব দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে গেলেই যেন বেঁচে যায়।
রিকাবীবাজার মোড়ের আঁস্তাকুড়টার সাম্রাজ্য আরো বেড়েছে দেখলাম। ওটার পাশে ব্যস্ততা বেড়েছে স্যান্ডু গেঞ্জী আর লুঙ্গিগুলোর। আর রাস্তা দিয়ে ওটার সামনে দিয়ে খুব দ্রুত চলে যাওয়া রিক্সায় বসা যাত্রীগুলোর হাসিও কমে গেছে। কেউ কেউ অবশ্য খুব জোরেও হেসে উঠছে নাক চেপে রাখতে না পেরে। সেন্ডু গেঞ্জীগুলো নিশ্চয় খুব অবাক হয় সবার এইসব ভীমরতি দেখে!
আমি যখন রিক্সা থেকে নেমে গেলাম তখন স্ট্যাডিয়ামের ফ্লাডলাইটগুলো ক্লান্ত দু জোড়া চোখ মেলে খুব অসহায় ভাবে তাকিয়ে ছিল। আর থরে থরে সাজানো সবুজ চামড়ার ভেতর সঙ্গোপনে পেকে যাওয়া আমগুলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।
তারপর হাঁটতে হাঁটতে আমার চোখ চলে যায় ওদের জানলায়। ছাতা দিয়ে দৃষ্টি ঢাকি প্রায় পুরোটা। ছাতার একদম প্রান্ত ঘেষে ফোকাস করি চারতলায়। কিন্তু আমি একটাও রিক্সা পাই না হাঁটতে হাঁটতে। তখন আমার একিলিসের কথা মনে পড়ে...
নেশায় পেয়ে বসেছিল সেদিন আমায়। একটার পর একটা মুণ্ডু খসে পড়ছিল শরীর থেকে। পুরোটা গলা কেটে ফেলার সেই অনুভূতিটা এখনও সজীব। অদ্ভুত সেই নেশা। কী তীব্র মাদকতা! স্বপ্নেও এমন হবে, ভাবি নি কখনও। কিন্তু আমি নিজেকে থামাতেই পারছিলাম না। একটা একটা মস্তকহীন ধড় মুখ থুবড়ে পড়ছিল। আমি কেবল তলোয়ার চালিয়েই যাচ্ছিলাম...
এবং সবশেষে আমি মিথ্যে বললাম। আরেকটা বিকেলকে ধোকা দিলাম সন্ধ্যের কথা বলে। যদিও কাল রাতে বসন্ত হয়েছিল আকাশের মুখে। কিন্তু ইলেকট্রিসিটি চলে আসায় খুব দ্রুত নামতে হয়েছিল ছাদ থেকে...
আরও একটি বাক্সবন্দী দিনকে আলিঙ্গন করে নিয়ে...
১৩০৭০৯১৬০৯