কেউ শুনবে ওদের সেই সংগ্রাম মুখর ঘৃন্য জীবনের কথা।
জীবন আর মৃত্যুর ব্যাবধান কি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের নাকি তার থেকেও কম। তৃতিয় বিশ্বের দরিত্রতম দেশের হতদরিদ্র নাগরিক হয়ে জন্মানোর সুবাদেই হয়তোবা তাদের এই সংগ্রামমুখর জীবন আর মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয় ।
ডাঙ্কি রুট-প্রথম পর্ব
মালদোভিয়া রোমানিয়ার পাশে ছোট্র একটা দেশ। দেশের তুলনায় লোকসংখ্যা আরো কম। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গভুক্ত ছিল। এখন সম্পুর্ন স্বাধীন। রাজধানীর নাম ’কিসিনেও’ বা ’কিসিনেভ’। ছিমছাম শহর ।অনেক অনেক বছর রাশিয়ার দখলদারিত্বে থাকার দরুন রুশ ভাষাটা যদিও সবার ঠোটে ঠোটে তবুও ওদের প্রধান ভাষা মালদোভিয়ান(আদপে রুমানিয়ান)।
মালদোভিয়া প্রধান র্অথকারী ফসল সম্ভবত আঙ্গুর।রাস্তার দুপাশে মাইলের পর মাইল আঙ্গুর ক্ষেত দেখতে দেখতে চোখে ক্লান্তি আসে। আঙ্গুর থেকে তৈরি ওদের রেড ওয়াইন ভুবন বিখ্যাত।
পুরো রাজধানীতে সর্বসাকুল্যে জনা দশেক বাঙ্গালী থাকে। আর কিছু পাকিস্থানী। যাদের বেশীর ভাগই আদম বেপারী। স্থানীয় ভাবে ডাঙ্কার নামে পরিচিত। তারা অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার একটা সহজতম রুট হিসেবে উক্রাইন কিংবা মালদোভিয়াকে ব্যাবহার করে। এই রুটকে বলে ডাঙ্কি রুট।
ছোট শহর,অল্প ক’জন বিদেশী সবাই সবাইকে চেনে। এমনকি ঘুরতে ঘুরতে তারা এখন শহরের পরিচিত মুখ হয়ে গেছে।
আমি আমার এক বন্ধুর আলয়ে ক’মাসের জণ্য আতিথ্য গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আগে থেকেই জানতাম তার ব্যাবসার ধরন ধারন কিন্তু এখন জানলাম চাক্ষুস। তারও ব্যাবসা আর সবার মত পয়সার বিনিময়ে লঙ্কান ’পাকি’ভারতীয় কিংবা বঙ্গ সন্তানদের ইউরোপে চালান করা। কখনো ব¯তায় ভরে কখনো গাড়িতে ঠেসে কখনো বরফের রাস্তা দিয়ে দাবড়িয়ে পৌছে দিয়ে আসে তাদের গন্তব্যে॥
অবশ্য পারাপারের জন্য ঘাটে ঘাটে লোক থাকে। ব্যাবসাটা ওদেশের প্রসাশনিক দৃস্টিকোন থেকে পুরোপুরি অবৈধ। কিন্তু আমার কাছে এটাকে সম্পুর্ন অবৈধ মনে হোত না।
প্রথমত তারা কোন ড্রাগ বা অস্ত্র চোরাচালানীর সাথে জড়িত নয় দ্বীতিয়ত এদেশের ক্ষতি হচ্ছে তেমন কোন কাজ তারা করছে না । বরংচ যে লোকগুলো(আদম) অন্যদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এখানে এসে সপ্তাহ মাস কখনো বছর থাকছে তারা তাদের যে বৈদেশিক মুদ্রাগুলো খরচ করছে তা এখানকার সরকারের কোষাগারকে সম্মৃদ্ধ করছে। এখানে আঙ্গুর বাগান আর শীতের বরফ ছাড়া এমন কিছু নেই যে ভ্রমন পিপাসুরা পঙ্গপালের মত ছুটে আসবে!
ওরাও এটা বুঝতে পেরে মুখেই বলত অবৈধ কিন্তু সব দেখেও না দেখার ভান করত। দুচারজন ঘুষ খোর কর্মকর্ত এসে কখনো সকনো হানা দিত কিংবা টেলিফোনে শাসাত দু'চারটাকা কামাইয়ের ধান্দায়।
তবে সেটাও ঘটত কদাচিৎ কেননা তারা তখনো ঘুষ খাওয়ার কায়দাকানুন পুরো রপ্ত করতে পারেনি।
শুধুমাত্র বাইরের দেশ থেকে যখন চাপ আসত তখন আই ওয়াশের জন্য ব্যাপারিদের সাথে সমোঝোতার ভিত্তিতে দু চার পাঁচজনকে জেলে পুরত। ..ক্রমশ
পরের পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৮