ডিসেম্বর মাস চঞ্চলের স্কুল বন্ধ । তাই নানা বাড়ি বেড়াতে এসেছে মায়ের সাথে এ বছর চঞ্চল ক্লাস ফাইভ এ উঠল । চঞ্চলের খালার বাড়ি পাশের গ্রামে । ধুলা উড়াতে উড়াতে চলে আসে খালার কাছে । সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চঞ্চল বেড়ায় খলার বাড়িতে । যাওয়ার পথে দেখে রাস্তার পাশে তিনটা কুকুরের ছানা । চঞ্চল এদের পেয়ে বেশ খুশি । একটা কুলে নিলে বাকি দুইটা পিছে পিছে চলে আসে । চঞ্চলের মা খুব রাগ হয় কুকুরের বাচ্চা দেখে । কিন্তু চঞ্চলের নানা ভাই বলে থাক নাতি সখ করে এনেছে ।
থাকুক আমি এই কুকুর গুলো রাখার ব্যবস্থা করছি । বিকালে বাজার থেকে কুকুরের বাচ্চার জন্য চঞ্চলের নানা একটা ভাতের মার যাতে খাওয়াতে পারে সেই রকম একটা বড় বোতল নিয়ে আসে । চঞ্চল সে কি মায়া কুকুরের জন্য ।সারা দিন চঞ্চলের পিছু পিছু থাকে কুকুরে ছানা গুলো । গত একমাসে তাদের সাথে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে । কুকুরের বাচ্চা গুলো চঞ্চল নিজের হাতে বোতলে ভাতের মার ভরে খাওয়াবে । গোসল করাবে আর । ধান খেতের মধ্য নিয়ে ছুটা ছুটি করবে । এক মাসে কুকুর ছানা গুলো বেশ একটু বড় হয় । সারা ক্ষণ কুকুর ছানা গুলো চঞ্চলের পায়ের পাশে পাশে থাকে । অবুঝ প্রানি কি একটা মায়ায় জরিয়ে যায় চঞ্চলের সাথে । চঞ্চল ও তাদের সাথে মিশে যায় পরম মমতায় । কিন্তু চঞ্চলের স্কুল খুলে যাবে তাই কুকুর গুলো রেখে আসতে তার খুব মন খারাপ হয় । কুকুরে বাচ্চা গুলো চঞ্চলের রিক্সা পর্যন্ত এসে লেজ নাড়াতে থাকে । চঞ্চল তার বাবা মায়ের সাথে চলে যায় কুকুর ছানা গুলো চেয়ে থাকে
চঞ্চল রিক্সা থেকে পিছন ফিরে দেখে কুকুর গুলো চেয়ে আছে । চঞ্চল বাবার মায়ের সাথে ঢাকা চলে আসে । চঞ্চল তার নানা কে চিঠি লিখে যে কুকুর গুলো যাতে বাড়িতে থাকে এবং খেয়াল রাখে । তাদের যেন ঠিক মত খাবার দেয়া হয় ।
কুকুর গুলো মাঝে চঞ্চল যেখান থেকে রিক্সায় উঠে চলে যায় । প্রায় সকালে কুকুর গুলো ঐ জায়গায় যে দাড়ায় তিনটা এক সাথে । চঞ্চলের নানা বলে আয় চলে আয় চঞ্চল চলে আসবে । কুকুর যেন চঞ্চল নামের সাথে সব বুঝতে পারে ।
এক বছর পর চঞ্চল তার মা বাবা সবাই আবার গ্রামের বাড়িতে আসে ।
রিক্সা থেকে বাড়ি নামতেই কুকুর তিনটা এক দৌরে চঞ্চলের কাছে চলে আসে । এখন কুকুর গুলো অনেক বড় । চঞ্চল কে পেয়ে কুকুর গুলো চঞ্চলের পাশে যায় । পায়ের কাছে তার নিজের শরীর আগলে দাড়ায় । কুকুর নাক দিয়ে চঞ্চলের গায়ের গন্ধ নিতে থাকে । চঞ্চল খুব অল্প সময়েই বুঝে যায় কুকুর তাকে চিনতে পেরেছে । চঞ্চল তকুকুর গুলো মাথায় হাত দেয় । এখন চঞ্চল যে খানে কুকুর সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত । চঞ্চল পুকুরে নামলে কুকুর । খেলতে গেলে কুকুর । বাজারে গেলে কুকুর ।
। বেশ মজা করে সারা দিন কুকুরে সাথে । এক দিন রাতে বেলা কুকুর খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছে । চঞ্চলের বাবা একটু রাগ হয়ে বলল-
চঞ্চলের ঘরে কুকুর গুলো রেখে আসো । খাটের তলে ঘুমাবেনে । না হয় রাতে ঘুমানো যাবে না। তাই চঞ্চলের মা বলল চঞ্চল কে কুকুর গুলো যেন তার ঘরে নিয়ে রাখে ।
চঞ্চল কুকুরের মাথায় হাত রাখলে তিন টা কুকুর চুপ হয়ে যায় । সেই রাতেই ডাকাত আসে এই বাড়িতে । তারা বাড়ির সবাই কে এক সাথে করে হাত পা বাধে । তাদের কাছে বড় দা , কিরিজ , চাকু , চাপাটি , টেঁটা । সবাই চুপ চাপ দাড়িয়ে । পাচ ডাকত বাড়িতে আর দু ডাকত বাড়ির বাহিরে । সবার হাত বাঁধা । এক ডাকত চঞ্চলের রুম খুলে । চঞ্চল কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কুকুর গুলো ঘুমিয়ে আছে । এক ডাকাত চঞ্চলের ধরে আনতে গেলে কুকুর গুলো ডাকত কে তাকিয়ে দেখে । চঞ্চল বলে আপনি কে । এক ডাকত চঞ্চলের চুল ধরলে , চঞ্চল মা বলে কেঁদে দেয় । আর এই কি তিন কুকুর মিলে ডাকাতদের উপর লাফিয়ে পরে । তিন কুকুর মিলে ডাকাতদের কামরাতে থাকে । যে চঞ্চলের চুলে হাত দিয়েছিল ওকে কামড়ে মাংস তুলে নেয় । কুকুরে চিল্লাচিল্লি চেঁচামেচি তে গ্রামের সবাই জেগে উঠে। ডাকাতের
দায়ের কুবে আর টেঁটার আঘাতে দুই কুকুর মামা যায় । তিন ডাকাত আহত হয়ে ধরা পড়ে । সারা গ্রামের মানুষ কুকুর দেখার জন্য বাড়িতে ভীর জমায় । বাড়ির সাবাই কুকুরের জন্য কান্না করে । যে একটা কুকুর বেঁচে আছে সেটাও আঘাত প্রাপ্ত হয় । চঞ্চলের বাবা সেই কুকুর নিয়ে সকালে পশু ডাক্তারের কাছে যায় । বাড়ির সবাই কুকুরের জন্য খুব কষ্ট পায় । চঞ্চলের সে কি কান্না ।চঞ্চলের মা পর্যন্ত ছেলের সাথে কুকুরের জন্য কান্না করে । যে তার ছেলে কে কুকুর গুলো এত ভালবাসত । যে কুকুর
টা বেঁচে ছিল তা পরিবারের সবার কাছে খুব আপন হয়ে যায় ।চঞ্চল গলা জরিয়ে তাকে তার গ্রামে রেখে ঢাকা আসে । স্কুল ছুটি হলে শুধু চঞ্চল কুকুর টাকে দেখার জন্য
সে গ্রামে আসে । চঞ্চলের মা কিছু না কিছু রান্না করে দেয় কুকুরের জন্য ।
অনেক বছর পড় একটা সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ কুকুর টা মারা যায় ।
তখন চঞ্চল এস এস সি পরীক্ষা চলছিল । চঞ্চল পরীক্ষা ফেলে চলে আসে । ১৯৮৫ সালের ঘটনা । সেই বছর চঞ্চল আর পরীক্ষা দিতে পারে নাই । কুকুর তিনটা একটা পুকুর পারে কবর দেয় শিমুল গাছের নিচে । এখনো চঞ্চল নানা বাড়ি গেলে পুকুরের উত্তর পাশে একটু যায় , শিমুল গাছের তলে । কুকুর গুলো তাদের পরিবার কেউ মনে করে । তখন অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করে ছিল এই কুকুর গুলো ।
আজ পর্যন্ত চঞ্চল কাউকে কুকুর বলে কোন দিন গালি দেয় না। এখন পর্যন্ত
চঞ্চলের পরিবারের সবার হৃদয়ে কুকুর গুলো বেঁচে আছে ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৪