Click This Link
ছবিঃ আমি
গাড়ি চলছে রোলার কোস্টারের গতিতে, আর আমরা হা করে গিলছি প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য। কখনো পাহারি ঝিরির উপর দিয়ে, কখনো গভীর খাদের পাশ দিয়ে আবার কখনো মেঘের ভিতর দিয়ে, এভাবে কখন যে থানছি ঘাটে এসে পৌছেছি টেরই পেলাম ন।কিন্তু এরি মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আর আমরা আমাদের ব্যাগ, খাবার, তাবু নিয়ে হাজির হয়েছি থানছি ঘাটে। অন্ধকারের মধ্যেই কোনভাবে হাচরে পাচরে ঊঠে বসলাম নৌকাতে একসাথে সবাই এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই থানছি বাজার ঘাটে।
ছবিঃচন্দন
বেশি প্যাচাল না পাইরা সবাই দৌর খিচাইলাম রেস্ট হাউসের দিকে, কারন এই রেস্ট হাউসে এখন জায়গা পাওয়া কপালের ব্যাপার। ইদানিং প্রচুর ট্যুরিস্ট আসে এখানে ( যদিও তা কক্সবাজারের তুলনায় একদমি নগন্য, কারন এত ঝামেলা করে ৩-৪ দিন নৌকা ভ্রমন করা আর জঙ্গলে থাকা-খাওয়া-বাথরুম করার মত মন মানসিকতা কক্সবাজার পার্টির নাই )। কিন্তু এই দোতলা রেস্ট হাউসটা ২০ জনের বেশি মানুষের জায়গা দিতে অক্ষম। তাই এখানে আসলে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে আসাটাই ভাল, যেমন আমাদের সাথে বেশ কিছু তাবু ছিল।
থানছি রেস্ট হাউস
যাই হোক, আমরা রেস্ট হাউসে আমাদের মালপত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে বাজারে ঘুরতে বের হলাম, ঘড়িতে তখন সময় প্রায় রাত ৮ টা। টিংকু ভাই আর চন্দন ভাই কিছু স্থানীয় লোকজনের সাথে হেভি আলাপ জুরে বসল। সেই স্থানীয়দের কাছেই শুনতে পেলাম, এই যে নাফাখুম, যেটা নিয়া সবার এত আগ্রহ, এই নাফাখুমের মতই নাকি আরেকটা ঝরণা আছে, সেখানে জেতে হলে নাফাখুম থেকেও আরও ২ দিন ট্রেক করতে হয়। কিন্তু রাস্তা বলে কিছু নাই আর পথও অতি দুর্গম। আমরা অনেক খোজা খুজি করেও থানছি বাজারে এমন কাউকে পেলাম না যে আমাদের সেখানে নিয়ে যেতে পারে।আপাতত নাফাখুম ঘুরে আন্ধার মানিক ই যেহেতু আমাদের টার্গেট, আমারা তাই সেটা নিয়ে অত মাথা ঘামালাম না, পরের টা পরে দেখা যাবে।
কিন্তু আরেকটা ঝিরির খবর পেলাম, যেটা থানছি বাজারের পাশ দিয়েই গেছে, এই ঝিরিটা পর্যটকদের কাছে উপেক্ষিত, কেউ যায় না সেখানে। কিন্তু ঝিরিটা নাকি সেইরকম সুন্দর একটা ট্রেইল দিয়ে গেছে এবং একটা সময় এই ঝিরি দিয়ে গেলে বিশাল বিশাল মারবেলের মত গোল গোল পাথর দেখা যাবে। আমরা ঠিক করলাম এই ঝিরিটাই দেখতে যাব।
পরদিন সকাল ৬ টার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠলাম, আর উঠে দেখি সে এক অদ্ভুত দৃশ্য, পুরা থানছি বাজার ঢেকে গেছে মেঘে। ফটাফট ক্যামেরা বের করে তুলে নিলাম কতগুলা ছবি।
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/shazzad_shibli123_1297780181_6-IMG_1525.jpg
মেঘে ঢাকা থানছি - ছবিঃ আমি
নাস্তা শেষে টিংকু ভাই আমাদের সবাইকে জুতা দিলেন ( মানে জুতা কিনা দিছেন আরকি )।সেই জুতা পইরা আমরা অতি জুত সহকারে চপাস চপাস কইরা হাটতে হাটতে নির্গত হইলাম সেগুন ঝিরিতে, যার কথা গতরাতে শুনছি।
স্থানীয় এক লোক, নাম তার মফিজ ( আসলেই মফিজ নাম ) আমাদের গাইড করে নিয়ে গেল। পরিবেশ অতি মনোরম, মানুষের ক্যাচ ক্যাচ ঘ্যাচ ঘ্যাচ নাই, আমরা হাটতেছি, আর যুথি ভাবি প্রকৃতির ছবি, সাথে আমাদের ছবি ক্যাপচার করতে করতে চলছেন আমাদের সাথে।তার NIKKON D 90 ক্যামেরা খানা মাশাল্লাহ, কয়েক কেজি ওজন হবে। এই জিনিস নিয়া ট্রেক করাটা কেবলমাত্র প্যাসনেট ফটোগ্রাফারের পক্ষেই সম্ভব।
ছবিঃ শারমিন চৌধুরী যুথি
সেগুন ঝিরি
ছবিঃ শারমিন চৌধুরী
আমরা কিছুক্ষের মাঝে বিশাল একটা অশ্বথ গাছের নিচে এসে বসলাম, গাছের নিচে ২০ ফুট বিশাল একটা ডাল ভাঙ্গা। মফিজ জানালো এই গাছের উপরে নাকি রাতের বেলা আগুন দেখা যায় এবং রাতের বেলা মানুষজন এই জায়গাটা এরিয়ে চলে। বিশ্রাম শেষে আবার হাটা, কিছুক্ষনের মধ্যেই ঝিরির মুখে এসে পৌছলাম। হাটতে হাটতে একটা সময় একদম অন্ধকার একটা প্যাসেজে এসে পৌছুলাম, দু দিকে পাথুরে দেয়াল, আর মাঝ খান দিয়ে সুরসুর করে বয়ে চলেছে ঝিরি। এই প্যাসেজটা দেখে অনেকটা ব্যাট কেভ এর কথা মনে পরে যায়।
একটা সময় দেখি চারদিকে খালি পাথর আর পাথর, প্রতিটা পাথরই মারবেলের মত নিখুত গোল আর মাঝখান থেকে একে বেকে বয়ে চলেছে ঝিরি। চারিদিকে পিনপতন নিরবতা ভেঙ্গে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে পাখির ডাক, আর বাতাসে বুনো গন্ধ। এই অনুভুতি ভাষায় বর্ননা করার মত না।
চলবে.।.।.।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৪২