somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ Whale Rider-তিমির পীঠে চড়ে ছুটে চলা এক জাতির গল্প...

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্যাতিক্রমি একটা মুভি, ব্যাতিক্রমি অভিনয় আর মনকে নাড়া দেওয়া মেসেজ আছে এমন একটা মুভি নিয়ে লিখছি। এটা কোন তথাকথিত বিগ বাজেটের হলিউড মুভি না, এতে নেই কোন সুপারস্টার বা চোখ ধাঁধানো স্পেশাল ইফেক্ট। কিন্তু একটা গল্প আছে মুভিটায়, একটা দুঃখী উপজাতির গল্প...যারা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে আধুনিকতার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, গল্প আছে একটা পিচ্চি মেয়ের, যে শুধুমাত্র মেয়ে হবার কারনেই হারিয়ে ফেলছে তাঁর জীবনের অনেককিছু। এই মুভিতে অসাধারণ অভিনয় করে সর্বকালের সবচেয়ে কম বয়সে (১৩ বছর ৩০৯ দিন) অস্কার মনোনয়ন লাভ করে মুভির প্রধান অভিনেত্রী Keisha Castle-Hughes (যেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে আরেক পিচ্চি ২০১২ সালে)।


মুভিটা ২০০২ সালের, একটা ড্রামা মুভি...যেটা আমি দেখেছিলাম ইউনিভার্সিটির একটা কোর্স কারিকুলাম হিসেবে। একটা অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়েছিলো এই মুভিটার উপর, দেখার আগে ভেবেছিলাম যে কি না কি মুভি স্যার দেখাবেন, সময়টা নষ্টই হয় কিনা! কিন্তু আমার ধারনা ছিল একেবারেই ভুল, আগাগোড়া চমৎকার একটা মুভি...যেটা দেখানোর জন্য স্যারকে পরে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম!

মুভির নাম Whale Rider, ২০০২ সালের একটা মুভি যার IMDb রেটিং ৭.৬ আর RT ফ্রেশ রেটিং ৯০% (স্কোর ৭.৭)। প্রখ্যাত অনেক সমালোচকই এই মুভিকে ফুল মার্ক্স দিয়েছেন, স্বয়ং রজার এবার্ট দিয়েছেন ৪/৪...এবং Keisha Castle-Hughes সম্পর্কে বলেছেন "THIS is a movie star!" ওই বছর সেরা অভিনেত্রীর অস্কার পেয়েছিলেন শারলিজ থেরন, Monster মুভিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স এর জন্য। কে জানে, থেরনের অমন একটা পারফরম্যান্স না থাকলে হয়ত অস্কারটা Keisha Castle-Hughes ই পেয়ে যেত!


মুভিটা তৈরি হয়েছে New Zealand এর সুপ্রাচীন মাওরি উপজাতিদের নিয়ে। মুভির প্রধান চরিত্র হচ্ছে Pai (Keisha Castle-Hughes), যে তাঁদের উপজাতির নেতার নাতনী। মাওরিদের বিশ্বাস তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন Paikea, এবং তিনি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তিমি মাছের পীঠে চড়ে... তাই Paikea কে বলা হয় Whale Rider। মাওরিদের নেতাকে হতে হবে সেই Paikea এর সরাসরি বংশধর, এবং অবশ্যই পুরুষ। যুগের পর যুগ তাই হয়ে এসেছে, কিন্তু Pai যে মেয়ে! Pai অনুভব করে তাঁর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে আছে...সে ই হবে পরবর্তী গোত্রপ্রধান, রক্তে সে সাগরের টান অনুভব করে সর্বদা...কিন্তু গোত্রের বর্তমান প্রধান, তাঁর দাদা সেটা মনে করেন না। Karo, Pai এর দাদা তাঁর নাতনীকে যথেষ্ট ভালবাসলেও এক্ষেত্রে তাঁর হাত বাধা, তাঁর কিছু আচরনে মনে দুঃখ পায় ছোট্ট Pai। বাবার সাথে এলাকা ছেড়ে সাগরপার থেকে ইটপাথরের শহরে যাওয়া পাকাপোক্ত করে ফেলে Pai, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আটকে যায় সাগরেরই টানে।


Karo ইতিহাসকে উপেক্ষা করে কোনভাবেই একটা মেয়েকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করতে চান না। তাই তিনি গ্রামের কমবয়সী ছেলেদের নিয়ে ট্রেনিং দিতে থাকেন, আশা হয়ত এখান থেকেই বেরিয়ে আসবে তাঁদের পরবর্তী গোত্রপ্রধান। কিন্তু সে আসায় গুরেবালি, কারন সেইসব ছেলেরা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই হেরে যায় Pai এর কাছে। Karo এর সময় ফুরিয়ে আসছে, দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে সেই নেতাটিকে...কিন্তু কোন পথ খুঁজে না পেয়ে তিনি দিশেহারা। Pai এর সাথে তাঁর দাদার সম্পর্কের অবনতি ঘটে, শেষ পর্যন্ত কি হবে কেউ জানে না। Pai কি তাঁর আজন্ম স্বপ্নকে বাস্তব করতে পারবে? সেই স্বপ্নপুরনে সবচেয়ে বড় বাঁধাটি কিন্তু তাঁর নিজেরই অনমনীয় মানসিকতার দাদা! :)


একটা ফ্যামিলি মুভি, পরিবারের সবাই মিলে একসাথে উপভোগ করার মত। মুভিটা পরিবারের প্রতি ভালোবাসার, নিজের ভাগ্যকে নিজেই গড়ে নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার, হতাশার তলানি থেকে আবার উঠে আসার। ভালো লাগা মুভি, দেখলে যে কেউই আবেগে আক্রান্ত হবেন। আর Pai এর চরিত্রে পিচ্চি যেই অভিনয় করেছে, একেবারে মাইন্ড ব্লইং! মুভিতে দেখা যায় কিভাবে প্রাচীন উপজাতিগুলো লড়াই করে যাচ্ছে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য, এটা আসলে সারা পৃথিবীর সকল উপজাতিদের জন্যই প্রযোজ্য। সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, ঐতিহ্য হারিয়ে যায়...আমরাও কি অতি আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে আমাদের ঐতিহ্যকেই হারিয়ে ফেলছি না? ভেবে দেখার বিষয় এটা, মুভিটা না দেখে থাকলে দেখে নিতে পারেন...আশাকরি একটা সুন্দর সময়ই কাটাবেন! :D

ডাউনলোড লিংক- Click This Link
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×