বেদনাদায়ক একটি সুইসাইড। চোখের পলকে নি:শেষ করে দিল তিলে তিলে গড়ে ওঠা স্বপ্নতরীকে। তা কি জানতো অনন্তপুরের সেই মেয়েটি? দিনমজুর বাবা-মা’র সাদামাটা মেয়েটি চেহারায় খুব বেশি জাকজমক না হলেও মেধায় দুর্দান্ত আলো ফুটিয়ে চলেছে। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে এ যেন তুখোড় স্বপ্নবাজের আবির্ভাব! ছনের ঘর, কুপি বাতি, মাটির প্লেট, দু:খ এবং অবিরত চোখের পানি যার নিত্যসঙ্গী।
দরিদ্র বাবার একটাই স্বপ্ন, মেয়ে পড়াশোনা শেষে একদিন বড় চাকরি করবে, ছোট ভাইকে মানুষ করবে, মলিন সংসারে হাসি ফুটাবে। মেয়েটিও সেই সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মা গোপনে পাশের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন, বাবা ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে কুলির কাজ করেন আর সে দু-চারটি ছোট্ট বাচ্চাকে পড়িয়ে সামান্য কিছু টাকা ইনকাম করে। ওটা দিয়েই নিমতামভাবে চলছে কুঁড়েঘরে থাকা চারজনের সংসার।
ইতোমধ্যে মেয়েটি স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে ঢাকার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। তাতে বাবা-মা’র নিরস অন্তরে কিছুটা তৃপ্তির ঢেকুর ওঠছে। ওদিকে দুধের শিশু ভাইটিও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। সে এখন প্রাইমারি স্কুলে যাতায়াত করে। তবে চিরচেনা অভাব কিন্তু তাদের পিছু ছাড়েনি। গ্রামের অনেকে বাবাকে পরামর্শ দিয়েছিল, মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেও, মেয়ে-টেয়ে এত পড়ালেখা করার কি দরকার? বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে মানুষ ভালো থাকে না! পরে তো আরও ঝামেলায় পরবে। তখন তো বিয়েও দিতে পারবে না! কিন্তু বাবা অনড়।
সোজাসাপ্টা উত্তর-আমি কোলে-পিঠে মেয়েটিকে বড় করেছি। আমার বিশ্বাস সে কোনোদিন আমার ঘাম ঝরানো স্বপ্নে লাথি মারবে না।বুকভরা আশায় থু থু ছিঁটাবে না।
এদিকে মেয়েটিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করে দিয়েছে। এমনকি সংসারের বেহালদশার কথা ভেবে ডিপার্টমেন্টের এক স্যারের সহায়তায় ঢাকায় খুব ভালো মানের একটি টিউশনি জোগাড় করেছে। মাস শেষে সামান্য কিছু টাকা বাড়িতেও দিতে পারছে। নম্রভদ্র মেয়েটি ক্লাসে কারো সাথে খুব বেশি কথা বলেনা। সবটা সময়ই চুপচাপ থাকে। কিন্তু পরিবেশ তাকে থাকতে দিল না! কাকতালীয়ভাবে পরিচয় হলো সুদর্শন এক ছেলের সাথে।এরপর ভাবের আদান-প্রদান! একটা সময় তা শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ালো।
অন্যদিকে কয়েকমাস যাবৎ মেয়ের বেখাপ্পা আচরণে চিন্তার ভাঁজ পড়ল মা-বাবার কপালে। সেটা আরও ভয়াবহ রূপ নিল। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল গ্রামের সেই শান্তশিষ্ট মেয়েটি নাকি এখন প্রেগন্যান্ট! বিয়ে তো হয়নি তাহলে? ঢাকায় বসে সবই শুনছে ওই মেয়েটি। তার কি করা উচিত? সেই তো গরিব পিতা-মাতার আশার নৌকায় চুনকালি মেখে দিয়েছে। তাছাড়া সঙ্গী ছেলেটিও তাকে এড়িয়ে চলছে। একি হয়ে গেল, একদিন আমিও তো লাজুকতার জন্য কারো সাথে বলতে পারতাম না, সেই আমি-ই কিনা? ছি: ছি:! নাহ! আমি অপরাধী, একটি স্বপ্নদেখা পরিবারকে স্বজ্ঞানে আমিও খুন করলাম। মেয়ে হলের ছাদে দাঁড়িয়ে সে এসব ভাবছে।
তারপর যা হবার তাই-ই হলো। আত্মহত্যা। আর অভিশাপ দিয়ে গেল অসভ্য সমাজকে, প্রেমিকরূপী সমাজের একশ্রেনীর কামুকদের, চোখের জলে ভাসিয়ে গেল টগবগে একটি স্বপ্নকে....
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:০৫