আজপবিত্র লাইলাতুল মেরাজ। এই রাতে আমাদের প্রিয় নবী দঃ উর্ধাকাশে আল্লাহতায়লার সান্নিধ্য লাভের জন্য গিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি মক্কা শরীফের মসজিদে হারাম থেকে ফিলিস্তিনের মসজিদে আকসা পর্যন্ত যান বোরাক নামের একটি বাহনে করে, বোরাক শব্দটির বাংলা হলো বিদ্যূত চমক।
আপনারা শুনলে অবাক হবেন ঐবাহনটির গতি ছিলো বিদ্যূতের সম পরিমান গতি। আধুনিক বিদ্যূতের তৈরীর সূচনায় ওই বোরাকের এক বিশাল অবদান আছে। সে বিষয়ে একদিন কথা বলার ইচ্ছা রইলো।
যাইহোক নবীজি ফিলিস্তিনের মসজিদে আকসায় গিয়ে দেখেন দুনিয়ার সব নবীগন অপেক্ষা করছেন নামাজের ইমামের জন্য। আল্লাহর রাসুল দঃ জিব্রাইলে আমিন ফেরেশতাকে জিজ্ঞাসা করলো এরা কার জন্য অপেক্ষা করছে? জিব্রাইল বললেন ইয়ারাসুল আল্লাহ এরা আপনার অপেক্ষায় ছিলো,আজকের ইমাম হলেন আপনি। একথা শুনেআল্লাহর রাসুল নামাজে ইমামতির জন্য দাড়ালেন।সে জন্য আমাদের নবীকে বলা হয় ইমামুল মুরসালিন বা নবী গনের ইমাম।
সিদ্রাতুল মুন্তাহা বা সীমান্ত কুল বৃক্ষের নিকট এসে হযরত জিবরাঈল আলায়হিস সালাম তাঁকে বললেন, এটাই আমার শেষ সীমানা; এই সীমানা অতিক্রম করলে আমি পুড়ে ছারখার হয়ে যাব। এখন শুধু আপনি আর আপনার রব।
সিদ্রাতুল মুন্তাহা থেকে তিনি রফ্রফে চড়ে ৭০ হাজার নূরের পর্দা পাড়ি দিয়ে স্থান কালের উর্ধে লামাকান ও লাযামানে উপনীত হন। তিনি নিকট থেকে নিকটতর হলেন। নূর আর নূরের আতিশয্যে তিনি একাকার হয়ে গেলেন। আল্লাহ্র দীদার লাভ করলেন। বিস্ময় ও আনন্দে নৈকট্য ও পরিপূর্ণতার অপূর্ব অনুভবে অভিভূত হয়ে গেলেন। আল্লাহর যা ওহী করার ছিল তা করলেন।
যেমন কুরআনে আল্লাহ বলেনঃ তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। তিনি তো তাঁর রব্-এর মহান নিদর্শনসমূহ দেখলেন (সূরা নজর : আয়াত ১৭-১৮)।
রাসুল জিজ্ঞাসা করলেন কেন ? জিব্রাইল বললেন এর চেয়ে এককদম বেশী গেলে আমার নুরের পাখা জ্বলে শেষ হয়ে যাবে। রাসুল দঃ একা একা আল্লাহর বাড়িতে প্রবেশ করলেন।
রাসুল আল্লাহর বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে নিজের জুতাগুলো খুলে নিলেন। কারন মুসা আঃ যখন তুর পর্বতে আল্লাহর সাথে দেখা করতে আসলেন তখন আল্লাহ মুসা আঃ কে দু জোড়াজুতা খুলে প্রবেশ করতে বললেন। রাসুল সে কথা মনে করে যখন রাসুল এটি করতে গেলেন তখন আওয়াজ আসলো হে বন্ধু মোহাম্মদ তোমার জুতার ধুলি দিয়ে আমার আরশের মাটিকে ধন্য করে দাও।
নবী দঃ জুতা নিয়ে প্রবেশের পর আল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন আমার জন্য কি এনেছেন বন্ধু ? নবী বললেন আমার উম্মতের গুনাহ নিয়ে এসেছি। দেখুন নবী দঃ এর উম্মতের প্রতি ভালোবাসা এমন সময়েও তিনি উম্মতকে ভুলেননি।
দীদার লাভকালে প্রিয়নবী হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মহা আনন্দ-আবেগে দেহ-মনের সমস্ত প্রেম, শ্রদ্ধা, ভক্তি, সম্মান ব্যক্ত করেন এবং উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে : আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু ওয়াত্ তাইয়েবাতু-- সমস্ত শ্রদ্ধা, ভক্তি, সম্মান, ইবাদত ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ্ জাল্লাহ শানুহু এর জবাবে ইরশাদ করেন, আসসালামু আলাইকা আয়্যুহান নাবীও ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু- হে নবী সালাম, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত আপনার প্রতি। এই সময় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উম্মতের কথা মনে পড়ে গেল। তখন তিনি বলে উঠলেন : আস্সালামু আলায়না ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন- সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর।
তিনি আরো বললেন : আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। জবাব এলো : ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রসূলুহু- আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহম্মদ দঃ তাঁর বান্দা ও রসূল।
এক তথ্য থেকে জানা যায় যে, আরশে আজীমে যখন আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ও তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মধ্যে উপরোক্ত সালাম ও সাক্ষ্য বিনিময় হচ্ছিল তখন ফেরেশতা জগতের সকল ফেরেশতা ও রূহগণ অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে পাঠ করছিলেন : আল্লাহুম্মা সল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মদ।
বিদায় কালে নবী দঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য দিনে ৫ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ নিয়ে ফিরলেন। নবী দঃ এর পুরো মেরাজের সময়কাল হলো ২৭বছর আর তিনি ফিরে দেখেন তার ওজুর পানিও শুকায়নি।
তাহলে কিভাবে সম্ভব হলো।চিন্তা হচ্ছে?? শুনুন আইনষ্টাইন কি বলে? আইনষ্টাইন বলেছিলেন E= mc2। কোন বস্তুবা বাহন যদি আলোর গতিবেগের দ্বিগুন গতিতে গমন করে তাহলে তাসময়কে অতিক্রম করতে পারবে. তাহলে আমরা ধারনা করতে পারি। রাসুল দঃ বাহনরফরফ যা দিয়ে তিনি উর্ধাকাশে গিয়েছিলো তার গতি ছিলো আলোর গতিবেগের দ্বিগুন।কে জানে ভবিষ্যত দুনিয়ার মানুষ হয়তো এ সূত্র ধরেই টাইম মেশিন নামক যন্ত্র আবিস্কার করে ফেলবে!!!!
অনেক কঠিন কঠিন কথা বলে বিরক্ত করার জন্য সরি।
ও আরেকটা কথা মেরাজের রাতে নফল নামজ পড়তে পারেন ২০ রাকাত। প্রতি রাকাতে এই আয়াতটি তেলাওয়াত করতে হবে সাথে সুরা ইখলাস ২০ বার।
سُبْحَانَالَّذِيأَسْرَىبِعَبْدِهِلَيْلًامِنَالْمَسْجِدِالْحَرَامِإِلَىالْمَسْجِدِالْأَقْصَىالَّذِيبَارَكْنَاحَوْلَهُلِنُرِيَهُمِنْآَيَاتِنَاإِنَّههُوَالسَّمِيعُالْبَصِيرُ
"সুবহানাল্লাজি আছরা বি আবদিহি লায়লাম্মিনাল মাসজিদিল হারামি ইলাল মাসজিদিল আকসা-আল্লাজি বারকনা হাউলাহু লিনুরি ইয়াহু মিন আয়াতিনা ইন্নাহু হুওয়াস সামিউল বাছির। "
তিনি পরমপবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, যার চতুর্দিকে আমি বরকতময়তার বিস্তার করেছি, তাকে আমার নিদর্শন হতে প্রদর্শনের জন্য। নিশ্চয় তিনিসর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্ট। (বনী ইসরাইল-১)
সবার জন্য শুভ কামনা রইলো, শুভেচ্ছা মেরাজ রাত্রির।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৪৭