আমেরিকার প্রথম বিল্ডার/ফাদার অফ দি নেশান হচ্ছে জর্জ ওয়াশিঙ্গটং, আধুনিক ফ্রান্সের জনক নেপোলিয়ন, আধুনিক ইংল্যান্ডের জনক ইংল্যান্ডের রয়াল ফ্যামিলি। এছাড়াও আধুনিক এমেরিকার যিনি প্রোগ্রেসিভ লিডার হিসেবে খ্যাত, যার জন্যে আমেরিকা বাংলাদেশের মত একটা কান্ট্রি থেকে উঠে আজকের সুপার পাওয়ার তার পিছনে অবদান টেডি রোসভেল্ট/থিওডর ডি রোসভেল্টের। তিনিই এই দেশটার ভেঙ্গে যাওয়া অর্থনীতিকে টেনে জাতে তুলেন, মনপলিজম কন্ট্রোল করে বিজনেসে কম্পিটিশন বৃধি করেন। এছাড়া জে এফ কেনেডি, ডব্লিও বুশরা তো আছেনই। এত কথা কেন বলছি?
বলার একটা কারণ আছে। অবাক হলেও সত্য এরা সবাই "ফ্রী মেসন" নামক এক সিক্রেট সোসাইটির সদস্য। এই সোসাইটির আনুষ্ঠানিক জন্ম এমেরিকান রিপাবলিকের জন্মেরও ৩০০ বছর আগে।
মনে প্রশ্ন জাগার কথা কি এই ফ্রী মেসন, কি করে তারা বা কি উদ্দেশ্য তাদের।
সত্যি কথা বলতে ফ্রী মেসন সত্যিকার অর্থে কি করে তা শুধু যারা ফ্রী মেসনের হাই লেভেলের (ওদের ভাষায় ডিগ্রীধারী) ছাড়া কেওই বলতে পারে না। এমনই সিক্রেট এই সোসাইটি বা কমিউনিটি। এরা নিজেদের কাজ কারবার নিয়ে নিজের বউয়ের সাথেও আলাপ করে না/ করতে পারে না।
প্রথম প্রথম যখন ব্লগে ঢুকি তখন কিছু ভাই এই ফ্রী মেসনারী কমিউনিটি নিয়ে কিছু লেখা পোস্ট করেছিলেন। তখন খুব একটা বুঝতাম না/ পাত্তা দিতাম না তাদের ক্ষমতা নিয়ে, ভাবতাম বাড়াবাড়ি করে লেখা।
কিন্তু আজকে স্কুল থেকে ফ্রী মেসনদের প্রাচীন এক বিল্ডিংয়ে ট্রিপে নিয়ে গেল। স্কুল নিয়ে গেছে তা না। কিছু টিচার যারা ফ্রী মেসনের সদস্য তারা নিয়ে গেছে। বিল্ডিঙের আক্ষরিক সৌন্দর্য বলে সময় নষ্ট করব না, শুধু এটাই বলব আমার জীবনের দেখা সবচেয়ে সুন্দর বিল্ডিং। ঢুকার সাথে সাথে মনে হল প্রাচীন মিসরীয় পিরামিডে ডুকে পরলাম। বিল্ডিংটি নির্মিত হয় ১৯১০ সালে।
আমাদের ২৫ জনকে একটা গ্রুপ করে একজনকে সাথে দেয়া হল, যে ২০ তলা বিল্ডিঙের বিভিন্ন রুম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবে। অবাক হলেও সত্য প্রত্যেকটা রুম এক কথায় একই রকম। মেসানরা যখন মিটিঙ্গে বসে তখন তাদের রুমের দরজা অবশ্যই বন্ধ রাখতে হয়। কেও ঢুকতে চাইলে নিদিষ্ট একটা কোড বলে দরজার ওপাশ থেকে তারপর ঢুকাতে হয়। রুমের পশ্চিম পাশে বসেন মাস্টার অফ দা লজ, পূর্ব পার্শে বসেন তার সেক্রেটারিরা। দক্ষিণ পাশে বসেন আরেক সেক্রেটারি আর উত্তর পাশ খালি। রুমের একদম মাঝখানে এক কাঠের বক্স তার চারপাশের ফ্লোর শুধু মোজাইক করা। রুমের বাকি ফ্লোর কার্পেট বিছানো। বাক্সের দুই পাশে দুটি আর এক পাশে একটি মোট তিনটি মোমবাতি যা তিনজন মাস্টারকে সিম্বলাইজ করে। পূর্ব পাশে বাম দিকে দুটি কলাম যার একটার উপর পৃথিবী আরেকটার উপর বিশ্বের গ্লোব যা মেসনারী ইউনিভার্সাল এটা সিম্বলাইজ করে। আর মাস্টার অফ দা লজের মাথার উপর ট্রাই-এঙ্গেলের মধ্যে একটা G যা মূলত জ্যামিতির প্রথম অক্ষর। আজকে যে রুম গুলোতে ঘুরলাম তার সবগুলোতে এই জিনিসগুলো সেইম, শুধু রুমের কালার, কার্পেটের কালার, কলামের কালার ভিন্ন। এই সেই রুম যেগুলোতে এমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোসভেল্টরা বসেছেন, তারা এমেরিকান ভবিষ্যৎ নির্মাণ করেছেন। ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠল।
ঢুকার পর থেকে আমার প্রশ্নবাণে গাইড ভদ্রলোক অতিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু অনেক টেকনিক্যালি প্রশ্ন করেও কোন কিছুরই পূর্ণ উত্তর ভদ্রলোকের মুখ থেকে বের করতে পারি নি। কেন এই সোসাইটি সিক্রেট এটার উত্তরে উনি বলেন কারণ মেসন মেম্বার রা চায় না তাদের মিটিং অন্য কেও জানুক। কেন চায় না এই প্রশ্নের উত্তর আর দেন নি। কথা ঘুরিয়ে অন্য কথায় চলে যান।
কি মেসনদের লক্ষ্য বা কর্ম এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন চ্যারিটি বা দান। তারা হসপিটাল বানায় এই বানায় সেই বানায়। কিন্তু এসবের পিছনে তাদের কি লাভ এটা জিজ্ঞেস করলে বলেন মেসানরা লাভের জন্যে এসব করে না ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে আর তাদের প্রাচীন পাপ থেকে মুক্তি পেতে করেন। কি তাদের প্রাচীন পাপ এই প্রশ্নের জবাব ভদ্র লোক আর দেন নি। কেন দেন নি আমি জানি না। তিনি হয়ত সেই অধিকার রাখেন না বা জানাতে নিষেধ আছে।
মেসন কিভাবে হতে হয় এটা কিন্তু আবার সুন্দর ভাবে ব্যাক্ষা করেন। মেসন হতে হলে মিনিমাম বয়স ২১ বছর হতে হবে। একজন সুপ্রিম গডে বিশ্বাস করতে হবে, কিন্তু সে গড আল্লাহ, নাকি জেওভা ইট ডাসেন্ট ম্যাটার। ম্যাসান হতে হলে বাইবেল/তোরাহ/কোরানে যেকোনো একটা বই অই মাঝখানের বক্সে রেখে তার উপর ম্যাসানদের প্রতীক স্কয়ার স্ক্যাল অ্যান্ড কম্পাস রেখে শপথ নিতে হবে। এই তিনটা বইতে মেসানরা বিশ্বাস করে। কোন এথিস্ট বা প্যাগান ম্যাসান হতে পারে না। কোন মহিলাও পারে না। তারপরেও অনেক কিছু অজানা থেকে যায়। যতদূর জানি এই সোসাইটির জন্ম সোলাইমান (আ)/কিং সোলোমন টেম্পল থেকে, এটা বলার পর ভদ্রলোক বলেন আসলে ঠিক। কিং সোলোমন তার টেম্পলে (বায়তুল মুকাদ্দাসে) পশ্চিম পাশে বসতেন তাই আমাদের মাস্টাররাও পশ্চিম দিকে বসেন। কিং সোলমনের রুমের মাঝে এরকম একটা বক্স ছিল যার চারপাশে মোজাইক করা আর এই রুমগুলোর বক্স সেটাই রিপ্রেসেন্ট করে। কিন্তু মেসনদের সাথে ইলুমিনাটির কি রিলেশন সেই প্রশ্নের পর ভদ্রলোক কোন জবাব না দিয়ে পাশ কাটান। এই ভাবেই কেটে যায় দিনটি।
(ছবিতে দেখা যাচ্ছে পূর্ব দিক, সেক্রেটারিদের চেয়ার আমার পিছনের দেয়ালে। আমারপিছনে সেই সোলোমন টেম্পলের বক্স। পিছনে দেখা যাচ্ছে দুই পাশে দুটি দরজা, এক দরজার পাশে দুটি ছোট কলাম একটার উপর পৃথিবীর গ্লোব আরেকটার উপর ইউনিভারসের গ্লোব। মাস্টার অফ দা লজ বসেন আমি যেদিকে তাকিয়ে আছি সেদিকের দেয়ালে। পিছনে অই ভদ্রলোক ব্যক্ষা করছেন সব। )
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:২৯