প্রথমআলো (উত্তর আমারিকা সংস্করণ) পত্রিকায় প্রকাশিত আমার একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।
পাঠ করতে পারেন।
সকলে অশেষ ধন্যবাদ।
দোলকের বৃত্তবাসনা
.........//স্বপ্নীল ফিরোজ
বাতাসে লাঞ্জনাধুলো ওড়ে। সংরাগে পুড়ে আমাজন। তথাস্তু বাতাস মাথা থেকে টুপি খুলে বহুমাত্রিক
অর্চনে।
বিন্দু জানে দোলকের বৃত্তবাসনা জন্মান্তরবাদ ছাড়িয়ে ঢের পথ দূরে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বন তুমি কি হাজার পাখির কাকলীতেও পেলে না মায়াবী কুজন?
দূরাচারী এক বিরহী ডাহুক বুঝি বাজায় পাতার বাঁশি নিরুর মতোন!
বনের গভীর ছায়ায় যেখানে পড়েনি রোদ কখনো সেই নাভিমূলে টের পাই কে যেন গুণ টানে।
একটি চাপা দীর্ঘশ্বাসপাখি আমি যাচাই-বাছাই না করেই উড়িয়ে দিলাম শূন্যে! সবুজ পাতার চাহনির দিকে সে উড়ে গেল।
ক্যাকটাস
.............//স্বপ্নীল ফিরোজ
আগে যদি জানতাম আমি একটি পাহাড়
বানাতাম। ছাতাবৃক্ষ মাথায় করে মেলা
দিতাম সাহারায়।
তাহলে গতকাল রাতের মতো বিবাগী দুঃখগুলো
প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে ধুয়ে দিতো বিষের গতর।
বৈশ্বিক উষ্ণতায় পুড়ে গেলে গৃহের টান, পরবাসী
মেঘে বেজে উঠে বিষন্ন ভায়োলিন।
আকাশে স্মৃতিভস্ম ছাই ওড়ে আর আমার আড়ষ্ট
চোয়ালের ডাল থেকে অসীমে ডানা মেলে গানের
পাখি বুলবুল।
বিমূর্ত বেদনার ঘোরকালো মেঘ বর্ষণে বর্ষণে
অনায়াসে গড়ে দিতে পারে আজ সাহারায়
সবুজ বনায়ন। মরুর বিস্ময় ক্যাকটাস শতমুখী
কাঁটা, নিদাঘ সন্তাপে ফোটায় দারুণ কুসুম।
আমি পতঙ্গপ্রাণ মৃত্যুর নিয়তি ডানায় ঝেড়ে
ফেলি বুভুক্ষু জীবন।
মনস্তাপ
......//স্বপ্নীল ফিরোজ
জোৎস্নার মদিরা পান করে উন্মাদ হ্রদ। প্রগলভার
লাল কাপড় উড়ে থিরথির জলে। অভীপ্সার অর্গল খুলে দেয় বৈশাখী ঝড়। ঝাঁকে ঝাঁকে উল্কার মতো আমার নিউরোন কোষে আগুনের ফুল্কি ওড়ে।
এখন তুমি আমার হৃদপিন্ড এফোঁড়ওফোঁড় করে ফেলতে পারো বর্শার আঘাতে। আমি তপস্যার
অলীক মাধুরী পান করে হোমাপাখির মতো
পড়তে পড়তে শূন্যতায় উড়তে পারি।
বিষের শরীরে মৃত্যুকে মনে হয় আলিঙ্গন ;
মনস্তাপে চোখের ভেতর টলটলে মুক্তো বাষ্প
হলে সবুজ পৃথিবীতে আমার ছায়া হারানোর
দুঃখগুলো হতে পারে রূপকথার গল্প।
জন্মভূমি
.........//স্বপ্নীল ফিরোজ
মধুলোভী ভাল্লুকের জিহবায় পুড়ে যাচ্ছে আমার স্বপ্নের বাগানে ফোটা সব মধুফুল। পুড়ে যাক সব ইচ্ছের ডানা, তবুও তুমি মধুময় থেকো হে জন্মভূমি!
চাকভাঙা মধুর অন্তরালে বাদার বাঘের চোখ বর্শার ফলা হয়ে গেঁথে থাকে অন্তরাত্মায়। আর
বিষাক্ত সাপের তীব্র ছোবল জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য
সবকিছু ছাপিয়ে দাদনের টাকার অগ্নিশিখায়
পুড়ে যে হৃদয় কে রাখে তার খবর?
তবুও সুখের মতো হাতে লেপ্টে থাকা ঘন গাঢ় মধু
আর মোমের আলোয় উদ্ভাসিত মধুফুলের এক
মধুময় জীবন লেপ্টে থাকুক তোমার গায়।
অতন্দ্র প্রহরী ভালবাসার বিড়াল
...................//স্বপ্নীল ফিরোজ
সমুদ্র পাহাড় মনের চেয়ে বড় নয়। মানচিত্র পোড়ে গেলে মনের ভেতর
যে খাঁজ আমরা কেটেছি এ শূন্যতা কি আর পূরণ হবে শুধু রক্তে!
তুমি সারি সারি পাহাড়ের মতো আমার পেছনে এসে দাঁড়াও।
আমার কাঁধে হাত রাখো- দেখো আমি কিভাবে ঘুম পাড়িয়ে রাখি প্রমত্ত পদ্মা।
এসো আমরা হাত ধরে ঘুরি,জড়িয়ে থাকি নদীর মতো। সাদা-কালো মেঘেরা প্রজাপতি হয়ে উড়ুক এক আকাশে।
এসো আমরা ভালবাসার মদিরা পান করে ঠোঁটে ঠোঁট রাখি। আর আমাদের যুগল হৃদয় ছিদ্র করে যে ইঁদুর তার জন্যে সারাক্ষণ অতন্দ্র প্রহরী ভালবাসার বিড়াল পুষি।
আমার স্বত্বাজুড়ে উষ্ণযুগল নিঃশ্বাস একজোড়া সাদা কবুতর।
হন্তারক সময়
........//স্বপ্নীল ফিরোজ
সেই কবে- দুরন্ত সকাল নিজের উচ্চতাকে টপকে
সোনা রোদে আলোকিত করতে চেয়েছিল এক অন্ধকার গলিপথ।
জানা ছিল না ব্লাকহোল ফিরিয়ে দেয় না কিছুই
এমনকি কাচের হৃদয়।
কোথাও কোন প্রতিধ্বনি নেই তারপর শুধুই স্বপ্নচাষ।
সেই থেকে রাতদিন টুকরো কাচের স্বপ্নবীজ আমি
মুঠো মুঠো ছড়িয়েই যাচ্ছিলাম সাগরের নোনা জলে।
অনেক সাধনায় জোয়ার এলে সফেদ ফেনায় ভেসে উঠে সমুদ্র যোনী।অস্তয়মান সূর্যের লাল বীর্যে গর্ভবতী বেলাভূমি প্রসব করে নির্ভেজাল সোনার হৃদয়।
হন্তারক সময় তুমি ধ্বংস হও
যদি না পারো ফিরিয়ে দিতে
সোনার সকাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৭