somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসকর আলী, আমি আপনাকে এখানে দেখতে চাইনি

২৩ শে মে, ২০০৯ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনাম খুবই উদারনৈতিক হাহাকারবাদী শোনাবে নিশ্চিত। একটু সচেতনরা বলবেন এইসব রোমান্টিসিজম বাদ দেন। হয়ত আমিই অন্য কোন প্রসঙ্গে বলব....আসকর আলী বিশেষ সুবিধা কিভাবে পাবেন যখন রাষ্ট্রের এত মানুষ বঞ্চিত।

গল্পের প্রাক কখন: খ্রিষ্টীয় ও জর্মন (বড় ছাতা, মানবতাবাদ/পশ্চিমা) মানবিকতা ও উন্নয়নের সাথে নানা ভূমিকায় কাজ করছি, পেট/পেশার কারণে। এর মধ্যে বহুল ব্যবহৃতটি নিশ্চয়ই লিয়াজো ও ভাষান্তরীকের, মাঝেসাঝে কেরাণীরও(এই প্রসঙ্গ নিয়ে পরে বাতচিতের আশা রইল)। জর্মন বস নানা উদ্যোগ ও উদ্যোম নিয়ে মানবকর্ম করছেন। (কিছু শ্লেষ ও শ্রদ্ধা একই সাথে রইল, পেশাদ্বারীত্বের রাজনীতি আর কি)। এরমধ্যে একটি হল কক্সবাজারের বিভিন্ন বস্তিতে যেয়ে যেয়ে কাজের (উন্নয়ন কর্ম নি:সন্দেহে) সম্ভাবনা যাচাই। এমনি এক পর্যায়ে তিনি খোঁজ পেয়েছিলেন জনৈক মহিলার, যিনি ভয়ানক রকম চর্মরোগে আক্রান্ত। তিনি তার ছবি তোলেন এবং পরবর্তীতে ডাক্তারকে সেই ছবি দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষুধ কেনেন। এর পরের বার আমরা যখন সেই বস্তিতে যাই তখন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল সেই মহিলাকে খুঁজে বের করা।



দীর্ঘক্ষণ খোঁজার পরও কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না, আমরা জনে জনে জিগ্গেস করছিলাম। অবশেষে আমরা যখন হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম (৭০০০-৮০০০ জনের বস্তিতে কাউকে খুঁজে পাওয়া খুব সহজ নয়), ঠিক তখনি একজন পুরুষ একটি বিশেষ স্মারক মনে করে মহিলাকে চিনতে পারলেন এবং আমাদের পথ দেখিয়ে একটি ছাপড়া ঘরের সামনে উপস্থিত হলেন।



আমার সেই মুহুর্তের অসতর্ক মাথা আর যাই হোক এটা প্রত্যাশা করেনি। এখন স্বীকার করি আসলে ধাক্কা খেয়েছিলাম। আমরা দাঁড়িয়ে আছি একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীর সামনে। যেই মহিলাকে আমরা খুঁজছি তিনি তারই স্ত্রী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কক্সবাজার এয়ারপোর্টের একপাশ থেকে বস্তি উচ্ছেদ করে আরেকপাশে স্থানান্তরণ করা হয়, আসকর আলীও সপরিবারে উচ্ছেদকৃত হন।



আমি তার সামনে ন্যুজ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, আর আমার সামনে পুরো বাংলাদেশ ন্যুজ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি কোন কথা বলি না, আমি সমবেদনা জানাতে চাইনা। নিজের নগ্নতার লজ্জা নিয়ে সমবেদনা জানানোর কোন সাহস হয় না।



একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর খাঁটি কৃতজ্ঞতা স্পর্শ করে সবাইকেই। যেই মহৎ একাগ্রতা তাকে প্রয়োজনীয় ঔষুষ সরবরাহ করেছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বাভাবিক। কিন্তু আমি লজ্জিত হই। ব্যক্তির সাহায্য গ্রহণে হইনা, রাষ্ট্রের নির্লজ্জতায় লজ্জিত হই।



এই সেই সাদা হাত কঠোর লুটতরাজ/বানিজ্য/ ঔপনিবেশ থেকে মহান মানবতাবাদী সাদা রং। আমার সামনে শতকের পর শতক জ্বলজ্বল করে ওঠে। ব্যক্তি সাদা হাতে আমার কোন বিদ্দ্বেষ নেই। নেই যেমন অন্য রং এ। কিন্তু ইতিহাসের লজ্জা আমি মুছব কি করে। স্বয়ং সম্পূর্ণ না হবার চেষ্টা করবার লজ্জা, দারিদ্রের লজ্জা আমি মুছবো কি করে? ডাকাতের কাছে ঘর ছেড়ে দেবার লজ্জা আমি মুছব কি করে?

নিপূণ পেশাদ্বারীতে শিক্ষিত ফটফট ইংরেজী বলে বলে আমি আমার কাজ করতে থাকি.....দালাল/নৃবিজ্ঞানী/ট্রান্সলেটর কত না ভূমিকার। আর আমার ভেতরটা কাঁদতে থাকে; সাদা চামড়ার কাছে নগ্ন হবার কান্না নয় নিজের আব্রু রক্ষা/বহাল/অধিকার না করার কান্নায় আমার মধ্যে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।

উদারনৈতিক রাষ্ট্রের বাহাস, শ্রেণী শোষণ, নব্য উন্নয়নবাদী গিনিপিগ এবং আমাদের অসারতা বোবা কান্নার মত রক্তক্ষরণ ঘটাতে থাকে।

৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ার রক্তচোখ: ক্রোধের নগর

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫২


ষড়ঋপু সিরিজের দ্বিতীয় কাহিনী ”ক্রোধ”

রাত্রি নেমেছে শহরের উপর, কিন্তু তিমির কেবল আকাশে নয়—সে বসেছে মানুষের শিরায়, দৃষ্টিতে, শ্বাসে। পুরনো শহরের এক প্রান্তে, যেখানে ইট ভেঙে পড়ে আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২



প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা, তুমি কি শুরু করেছো- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! রাতে তুমি ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমাতে যাও। প্রতিদিন তোমার মুখে ঘুমের দোয়া শুনতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি আমি আর আমাদের দুরত্ব

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৩



তুমি আর আমি
দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে,
নেই কোন লোভ চুম্বনের ,
ছোঁয়ারও কোন প্রয়োজন নেই
অথচ প্রতিটি নিঃশ্বাসে কেবলি তুমি।

তোমার হাসি সুবাসিত নয়,
কিন্তু সে আমায় মাতাল করে
যেন তরংগ বিহীন কোন সুর বাজে
মন্থর বাতাসে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নববর্ষের শোভাযাত্রা নাম বদল করছি না, পুরোনো নাম–ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি: ঢাবি উপাচার্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:০৪



পয়লা বৈশাখে ফি বছর চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

'৭৪ সালের কুখ্যাত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এখন সময়ের দাবী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫


বিগত আম্লিক সরকারের আমলে যে কুখ্যাত আইনের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করে গায়েব করার চেষ্টা চলতো তা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন ব্যবহার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×