ডান কাঁধে ক্যামেরাটা ঝুলছে, প্রথম সিকিউরিটি পোস্ট পার হলাম, দেখলাম কেউ কিছু বলছেনা । খুশি হবার সাথে সাথে কিছুটা হতবাকও বটে। গ্যালারীতে ঢোকার আগে দ্বিতীয় পোস্টে পুরো শরীর চেক করল , ক্যামেরা নিয়ে কেউ কিছু বললনা !!!! গ্যালারীতে পা দিয়েই যেন বিশাল কিছু একটা জয় করে ফেলার আনন্দ পেয়ে গেলাম। আরো মজা লাগল যখন আমার হাতে ক্যামেরা দেখে আশেপাশের সবাই বলল ভাই আপনি কেমনে ক্যামেরা নিয়া আসলেন, সাংবাদিক নাকি, আমরাতো ঢুকতে দিবেনা বলে আনলামনা। বিজয়ীর হাসি দিয়ে বললাম কই কেউতো আমারে আঁটকাইলনা। আশে পাশে ব্যাপক আফসোস শোনা গেল কিছুক্ষন।
আমার অবশ্য ওপেনিং দেখার কোন চান্স ছিলনা। অফিসে যাবার সময় সাথে করে ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিলাম মাঠের আশে পাশে যাব এই ভেবে যে যদি আতশবাজির ছবি তোলা যায়। বারটার দিকে আজাদ ভাই ফোন করে বললেন শোন আমার কাছে একটা টিকেট আছে তুমি বাসায় এসে নিয়ে যাও। আমিত মহাখুশি, না চাইতেই এটা কি পেয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পরে ফোন দিয়ে বললেন একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে- আমাকে আমার ভাই ফোন দিয়ে বলেছে টিকেট আছে একটা, আমিত শুনছি আটটা । ভাই বারবার সরি বললেন, আর আমি বললাম ব্যাপারনা..........
অফিস থেকে বের হয়ে হবু বউ সহ লাঞ্চ করতে বসলাম, তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি স্টেডিয়াম এলাকায় যাব। এমন সময় আজাদ ভাই আবার ফোন দিলেন, শোন তোমার জন্য একটা টিকেট ম্যানেজ হইছে, তুমি আস, তবে ক্যামেরা মনে হয় নিতে পারবানা !!!!
তবুও ভাবলাম একটা রিস্ক নিয়ে নিই। নিয়েই যায় ক্যামেরা । আমার হবু বউ ও রাজি হল সে আমার সাথে যাবে, ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে না দিলে সে ওটা নিয়ে বাসায় চলে যাবে, তার জন্য ব্ল্যাকে আরেকটা টিকেট নিতে চাইলেও সে রাজি না কারন তার একটা প্রোগ্রাম আছে।
দুজন হাঁটছি, বেচারিও আমার সাথে কস্ট করছে , যদিও কোন কস্ট হচ্ছে সে এটা মানতে চাইছেনা। পুলিশের সহায়তায় জানতে পারলাম কোন গেইট দিয়ে ঢুকতে হবে। পুলিশের কাছে জানতে চাওয়ায় তারা বলল ক্যামেরা নেয়া যাবেনা, মোবাইল নেয়া যাবে। আমি ঠিক বুঝতে পারলামনা এটা কোন ধরনের সিকিউরিটি প্যারামিটার, যায় হউক হাঁটছি, বিশাল লাইন। গেইটের কাছে গিয়ে লাইনে না দাঁড়িয়ে কাছাকাছি গিয়ে জানতে চাইলাম, তারা বলল ক্যামেরা নেয়া যাবেনা, এক সাংবাদিককেও জিজ্ঞাসা করলাম, সেও বলল যাবেনা। আমার মানতে কস্ট হচ্ছিল ক্যামেরা ছাড়া এমন অনুস্ঠান দেখব।
শেষ চেস্টা হিসেবে পুলিশের উর্ধতন কারো সাথে কথা বলার জন্য আবার সামনে গেলাম। এমন সময় এক অফিসার বলল আপনার টিকেট আছে। আছে বলার সাথে সাথে বলল ঢুকে যান টিকেট থাকলে , আমাকে সে লাইনের মাঝে ঢুকিয়ে দিল !!! কিছু বোঝার আগেই আমি ভিতরে , এই দিকে বাইরে ক্যামেরার ব্যাগ আর স্ট্যান্ড নিয়ে ও দাঁড়িয়ে আছে !!!
ভিতরে ঢোকার পর ফোনে ও বলল তুমি দেখ ক্যামেরা ভিতরে নিতে পার কিনা, আর না হলে আমি বাইরে আছি। শেষমেষ গ্যালারিতেও পৌঁছে গেলাম আমি ক্যামেরা সহ, ব্যাগ- স্ট্যান্ড- রিমোট নিয়ে সে বাসায় চলে গেল। আজাদ ভাই আর আদৃতার এই উদারতায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেলাম আমি। কৃতজ্ঞতা এই দুজনের কাছে।
সাহস করে ক্যামেরাটা নেয়ায় লাভই হল । ক্যামেরার মেমোরিতে নিজের মত করে ধরে রাখতে পারলাম পুরোটা সময়। আলোচনা সমালোচনা অনেক কিছুই করা যাবে অনুস্ঠান নিয়ে , সেসব অন্য দিন। একটা কথাই বলা যায় - হ্যাঁ , চাইলে আমরাও পারি !!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩২