কূয়াকাটা- সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত যেখানে সহোদর !!!!
যেতে হবে কিন্তু কেন যাব, ব্যাপারটা মোটেও অমন ছিলনা, যেতে হবে তা যেভাবেই হউক !!! এত টাফ জার্নি আমরা আর করি নাই । কিন্তু সৈকতের সে মনোমুগ্ধকর পূর্ণিমা ভুলিয়ে দিয়েছিল সব কস্ট। ফিরতি পথ আরও কঠিন। দশ মিনিটের জন্য লঞ্চ মিস করে সেদিন হয়েছিল এক মিস মিস খেলার ভোগান্তি। পটুয়াখালীতে মিস করে বরিশাল, সেখানেও মিস, তারপর বাসের কোন টিকেট নাই, রাত বারটায় একটা ভাঙ্গাচূড়া বাসে করে ফিরতি পথ, তারপর ট্রলারে করে জোছনারাতে পদ্মা পাড়ি, যেন বর্ডার পাড়ি দিচ্ছিলাম !!!!
কূয়াকাটা যাবার জন্য আমার প্রথম পছন্দ লঞ্চ। কিন্তু লায়লার প্রতি সন্মান দেখাতে গিয়ে সাঁতার না জানা দুই জনকে কোন ভাবেই রাজী করানো গেলনা। কি আর করা , বাসই ভরসা । কপাল এখানেও খারাপ। সরাসরি কূয়াকাটার কোন বাসের টিকেট পাওয়া গেলনা। শেষে বাধ্য হয়ে খেপুপাড়া গামী বাসের টিকেট কাটতে হল। খেপু পাড়ায় বাংলাদেশের একটি আবহাওয়া রাডার স্টেশন আছে।
তিনদিন বন্ধকে পুজি করে আমাদের যাত্রা শুরু হল। ঢাকা ছাড়ার আগেই এক পশলা বৃষ্টি পরিবেশটাকেই শীতল করে দিয়েছিল আগেই। আরিচায় পৌঁছে যথারিতী জ্যামে পড়লাম। ঠান্ডা পরিবেশের বদৌলতে সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত আমরা বাসেই ঘুম। সকাল ছয়টায় যখন ঘুম ভাঙ্গল তখনও দেখি আমরা সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে, রাতে ঝড়ের কারনে ফেরী চলেনি, আর আমরা কেউ তা টেরও পেলাম না !!!!
বরিশাল থেকে কূয়াকাটা যাবার পথে যে নদীগুলো পরে সে নামগুলো আমার অনেক পছন্দের- কীর্তনখোলা, পায়রা, আন্ধার মানিক (ফসফরাসের আধিক্যের জন্য রাতে পানি জ্বলজ্বল করে ) , সোনামুখী, আগুনমুখী, ছোটছোট নদী , কিন্তু কূয়াকাটা যাবার সময়টা লম্বায়িত করার জন্য এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাঁচ পাঁচটা ফেরী পাড়ি দিতে হয়, শেষ ফেরীটাত এমন দুটো ফেরী পাশাপাশি রাখলে আর চালানো লাগতনা।
পটুয়াখালী থেকে বরগুনার আমতলী ঘুরে আবারও পটুয়াখালী জেলাতেই ঢুকতে হয় কূয়াকাটা যাবার জন্য। আর আমতলীর পর থেকে রাস্তাটা গাড়ীর এবং আমাদের ফিটনেসের যে পরীক্ষা নিল তা সারাজীবন মনে থাকবে। একজনত বলে বসল এই রুটে যেহেতু আমরা টিকে গেছি দুনিয়ার যেকোন রাস্তায় আমরা টিকে যাব !!!!
কূয়াকাটা পৌঁছার পর দেখলাম আমরা ছয়ঘন্টা পিছিয়ে গেলাম !!! সময়ের হিসেব নিকেশ নিয়ে আর মেঘের বদৌলতে সূর্যাস্ত মিস করার দুঃখ ভুলিয়ে দিল ভরা পূর্ণিমা। মনোমুগ্ধকর সে সময়টুকু পুরোটায় সৈকতে শুয়ে কাটিয়ে দিলাম আমরা।
মাঝে মাঝে মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছিল অনুপম সে সৌন্দর্য, তখনই মনটা খারাপ হয়ে যেত, যেন- মাঝ রাতে চাঁদ যদি আলো না বিলায়, ভেবে নেব আজ তুমি চাঁদ দেখনি
ইদানিং ট্যুর করা মানেই যেন খাওয়া দাওয়া, রূপ চাঁদা ফ্রাই আর কোরালের দোপেঁয়াজা সাবার করে গুঁড়ি বৃস্টি মাথায় নিয়ে হোটেল রুমে ফিরে যখন জানালা খুলে দিলাম, তখন নিজে নিজেই গুনগুনিয়ে উঠলাম-
বৃষ্টি শেষে রুপোলি আকাশ, সোনালী আভায় আমি খুজে ফিরি
জানালায় জলমগ্ন-হিমেল বাতাস-আমি ডানা মেলি
তবুও কেনো..........................
রাত তিনটা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিলাম আমরা।
কূয়াকাটার একটায় বিশেষত্ব এখান থেকে সূর্যদয় আর সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়, তবে একই লোকেশন থেকে নয়। সূর্যদয় দেখার জন্য যেতে হবে গঙ্গামোতির চর, একমাত্র বাহন মোটর বাইক, যাত্রা প্রায় আট কিলোর মত।
আগেই ঠিক করে রাখা বাইক ওয়ালারা সূর্য উঠার আগেই হাজির, বীচ ড্রাইভ শেষে আমরা পৌঁছালাম গঙ্গামতির চর, মেঘের সাথে লড়াইয়ে সূর্য মামা আগেই হেরে বসে আছে, কি আর করা
সূর্যাস্ত দেখতে হলে যেতে হয় লেবুর চর, তার উপারেই সুন্দরবনের একটা অংশ ফাতরার চর। আগুনমুখী নদীর উত্তাল মোহনা আমাদেরকে ফাতরার চরের পথে পা বাড়ানোর সাহস কেড়ে নিল।
কূয়াকাটার পানি তুলনামূলক ভাবে অনেক কম নোনা, আর বৃষ্টির পর যখন আমরা দাপাদাপি করতে নামলাম তখনতো দেখি লবণের কোন অস্তিত্বই নেই। পানি এমনই এক জিনিস দাপাদাপিতে একবার মজা পেলে উঠে আসা কঠিন, আমাদেরও তাই হল। একদল ভার্সিটি পড়ুরা ছেলেপেলের সাথে আধাঘন্টার এক দফা ফুটবলও খেলে ফেললাম আমরা।কূয়াকাটার রাখাইন পল্লীতে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমূর্তি।
ফিরতে হবে, কিন্তু বাসের ঐ রাস্তার কথা ভেবে মন চায় থেকে যায়। লঞ্চে ভয় পাওয়া পথিকরাও এবার লঞ্চে রাজি, মাঝে মাঝে জান বাঁচানোর চেয়েও একটু আরামদায়ক অনুভূতি অনেক জরুরী !!! কপালে দুর্গতি লেখা থাকলে আসলে আর কিছু করার থাকেনা। পটুয়াখালীগামী বাসে উঠলাম , রাস্তার দশা দেখে শেষে ড্রাইভারকে বলেই বসলাম এই এলাকার সাংসদ কি কানা না এলাকায় থাকেনা , পানি মন্ত্রীর এলাকা, একটা পর্যটন এরিয়া এমন ভগ্নদশা কেমন করে হয় মাথায় এলনা। আর বাস ড্রাইভাররা এতই সজ্জন যে পথের কোন যাত্রীকেই ফেলে যাবেননা, এক পর্যায়ে বাসে কে যে কার কোলে সেটা আর বুঝে উঠতে পারছিলামনা !!!
তবুও সব কস্ট শেষে থেকে যায় ভাল লাগা টুকু, প্রিয়মুখ গুলোর সাথে কাটানো সময়ের চেয়ে দামী আর কি হতে পারে, তা যেখানেই হউক, যে ভাবেই হউক ।
সূর্য উদয় এর ছবি :
Click This Link
সূর্যাস্তে কূয়াকাটা :
Click This Link
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন