আমার আসলে এখনও বিশ্বাস হইতেসিলনা আম্মু আসলেই আমাকে যাইতে দিবে , আমার মনে হইতেসিল শেষ মুহূর্তে আম্মু বলবে থাক আমাকে ছাড়া এত দূরে তোমার একলা যাওয়ার দরকার নাই (যদিও আম্মুকে অনেক বার সাধাসাধি করা হইসে কিন্তু আম্মু আম্মুর প্রিয় অফিস ছেড়ে যাবেনা (অফিসে বেস্ট এটেন্ডেন্স অ্যাওয়ার্ড থাকলে আম্মু ১০০% তা পাইত ))। আমার ফ্রেন্ডরাও বিশ্বাস করতে পারতেসিল না আসলেই আমি পিএল এর সময় ঘুরতে যাইতেসি(আঁতেল গোষ্ঠী ) , কয়েকটা তো বলসে আন্টি শেষ পর্যন্ত তোরে যাইতে দিবে না (আসলে ঐ গুলা হিংসিত ) । যাওয়ার আগের দিন রাতে শখ করে কাপড় ইস্ত্রী করতে গেলাম (এই একটা কাজ আমার অসহ্য লাগে ,তাই বেশিরভাগ সময়ই ইস্ত্রী ছাড়া কাপড় পড়ে দৌড় দেই ) । ডিশের লাইন থেকে "অন্তঃহীন" দেখাইতেসে + নানুর সাথে কথা বলতেসিলাম । হঠাৎ গরম ইস্ত্রী হাতে লেগে গেল । অনেকটুক হাত পুড়ে গেল । এখনও হাত পুড়া । পুরা কক্সবাজার টুরে আমার সব ছবিতে পোড়া হাত দেখা যাইতেসে ।
অবশেষ এ বুধবার রাতে ঈগল বাসে চরে কক্সবাজার এর উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিলাম । আম্মু বাসে উঠায়ে দিতে আসছিল আমাদের । মোট আমরা ৫ জন গেলাম - ভাইয়া , ওর বঊ , আমি আর ভাইয়ার ২ টা মামাতো শালী । সে কি লম্বা জার্নি । বাস ছাড়ল ১১:৩০ টায় আর পুরা সাড়ে ১১ ঘন্টা পর আমরা কক্সবাজার পৌঁছালাম । নেমেই আগে আসার টিকেট করে ফেললাম ।তারপর গেলাম হোটেল খুজতে ।সব হোটেল ই দেখি ফুল , অবশেষ এ একটা হোটেল পেলাম "হোটেল কল্লোল" বিচ এর একদম সামনে । ঐখানে সকালের নাস্তা করে বের হলাম "ইনানী বিচ" আর "হিমছড়ির " উদ্দ্যেশে । আর আমাদের বাহন হল "টুকটুক"(চার্জ দিয়ে চলে আর দেখতে আমাদের সিএনজির মতন কিন্তু ২ পাশে সিট)। টুকটুক জিনিসটা আমার অনেক পছন্দ হইসে কি সুন্দর বাতাস খেতে খেতে আর রাস্তা দেখতে দেখতে যাওয়া যায় । ইনানী বিচ এ পৌছে আমাদের খুশি দেখে কে । জীবনে প্রথম বারের মতন সমুদ্র দেখা এটা আসলেই অন্য রকম অনুভূতি ।
ওখান থেকে আমরা গেলাম হিমছড়িতে । কি কষ্ট পাহাড়ে উঠা , যদিও সিড়ি কাটা তাও । ওখান থেকে সব কিছু কত ছোট দেখা যায় !!।
ওখান থেকে আমরা হোটেল এ চলে আসলাম । বিকাল ৫:৩০ টায় দুপুরের খাওয়া খেলাম । তারপর ফ্রেশ হয়ে গেলাম বিচ এ । আমরা যখন পৌছালাম তখন সূযার্স্ত শেষ ।তাও পানিতে কিছুক্ষন লাফালাফি করলাম । আবার কাপড় চোপড় এর ১২ টা বেজে গেল । এরপর আবার ফ্রেশ হয়ে গেলাম মার্কেটে । প্রথম গেলাম ঝিনুক মার্কেট এ । তারপর গেলাম বার্মিজ মার্কেট এ ।কেনাকাটা শেষ করে হোটেল এ আসতে আসতে ১২ টা বেজে গেল , হোটেল এর খাওয়ার দোকান বন্ধ হয়ে গেসে ততক্ষণ এ । ১২ টায় আমরা বের হলাম খাওয়ার হোটেল খুঁজতে। একটা রেস্টুরেন্ট খোলা দেখে ঢুকলাম কিন্তু ওখানেও খাওয়া শেষ । তারপর আরো কিছুদূর যাওয়ার পর একটা হোটেল খোলা পেলাম , ওদের কর্মচারীরাও আমাদের সাথেই খেতে বসল , মানে ওদেরও হোটেল বন্ধ এর টাইম হয়ে গেসিল । অনেক আওয়াজ শুনে বাইরে এসে দেখলাম সামনেই আদিবাসী মেলার অনুষ্ঠান হইতেসে । খাওয়া দাওয়া শেষ এ হোটেল এ এসে সব লম্বা ঘুম । পরেরদিন ৬:৩০ টায় আবার টেকনাফ যাওয়ার বাস ধরতে হবে । আমরা সেন্টমার্টিন গেলাম প্যাকেজ এ । ৭০০ টাকার প্যাকেজ । সকালে ওরাই হোটেল থেকে আমাদের নিয়া যাবে বাসে ওখান থেকে সোজা টেকনাফ । ওখানে গিয়ে সকালের নাস্তা দিবে । তারপর লঞ্চ এ করে সোজা সেন্টমার্টিন পৌছাবে ১২ টার দিকে। তারপর ওখানেই দুপুরের খাবার দিবে ওরা । আবার ৩ টার মধ্যে লঞ্চ এ উঠতে হবে । আবার টেকনাফ এ এসে বাসে করে ওরা কক্সবাজের হোটেল এ নামাবে । মাঝখানে বিকালের নাস্তা দিবে । আমার কাছে প্যাকেজটাকে অনেক রিজেনেবল মনে হইসে + অনেক সেফ ও । কারন ওদের গাইডরা সারাক্ষণ আমাদের দেখাশোনা করতেসিল , আমরা ঠিক মতন বাসে /লঞ্চ এ উঠসি কিনা। নিজেরা নিজেরা গেলে হয়ত নানা ভেজাল এর সম্মুক্ষীন হইতে হইত।
আম্মুকে আমরা বলি নাই যে আমরা সেন্টমার্টিন যাইতেসি , আম্মু শুনলে মানা করত ।আম্মু পানি অনেক ভয় পায় । যাওয়ার আগে ১৪ বার করে বলসে পানিতে বেশী নামবা না দূরে দূরে থাকবা । আমরা সেন্টমার্টিন ১২ টার দিকে পৌঁছালাম । তারপর ভ্যানগাড়িতে চড়ে ঘুরতে বের হলাম । রাস্তা গুলা খুবই সরু । ২টা ভ্যানগাড়ি পাশাপাশি চলতে গিয়া ধাক্কা খায় ।
আমাদের গাইড বলল হোটেল অবকাশ এ যাইতে ঐখানেই খাওয়ার ব্যবস্থা । ওখানে গিয়া কোন রকম এ একটু খেয়ে দৌড়ালাম পানির দিকে । কি যে মজা লাগতেসিল!! একবার এদিক যাই আরেকবার ওদিক , আর ছবি তুলতে তুলতে তো হাত ব্যাথাই হয়ে গেসিল ।এই অবস্থায় আম্মু ফোন দিল । জিজ্ঞাস করল "কি করো?" । আমি বললাম এইতো হোটেল এ বসে আসি । আরও বেশ কয়েকবার আম্মু ফোন করসিল আমি বারবার বলসি "হোটেল এ" ।গুনাহতো হইসে মিথ্যা বলসি কিন্তু সত্যি বললে আম্মুর টেনশন এ আবার প্রেশার বেড়ে যাইত । ৩ টার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে রওয়ানা হলাম ।কক্সবাজার পৌছালাম ৮টার দিকে । আমরা আমাদের ব্যাগট্যাগ হোটেল এ রেখে গেসিলাম ।ঐগুলা নিয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া করে বের হলাম হোটেল থেকে ।আমরা গেলাম ঝিনুক মার্কেট এর দিকে , ঈগল এর কাউন্টার ঐটার কাছেই । ঝিনুক মার্কেট এ আমি শামুকের উপর নাম লিখাইতে দিসিলাম আগেরদিন ,ঐ গুলা ওখান থেকে নিলাম আর বাসার জন্য শুটকি কিনলাম । জীবনে প্রথম বারের মতন নিজের টাকা দিয়া এই জাতীয় জিনিস কিনলাম । আম্মু আমাকে ১০০০ টাকা দিসিল আর আমি নিজে ১০০০ টাকা নিয়া গেসিলাম ,একটা টাকাও ফেরত আসে নাই । সবার জন্যই টুকটাক কিছু কিনসি । প্রথম বার মনে হয় টাকা শেষ হওয়ার পরও দুঃখ লাগেনাই মনে (আমি এমনে মহা কিপটা মারাত্নক পয়সার হিসাব করি ) ।
অবশেষ এ বাস ছাড়ল ১০:৩০ টায়। আমি মনে মনে বলতেসিলাম অনেক দেখসি সমুদ্র আর ভিড়হীন কক্সবাজার কিন্তু ঢাকাকে যতই গালি দেই ২/১ দিন ঘুরতে যাওয়ার জন্য কক্সবাজার ঠিক ই আসে , কিন্তু আমার ঢাকা শহরই ভাল , কখন পৌছাব ঢাকা !!!। ঢাকায় পৌঁছালাম সকাল সাতটায়। আম্মু ভাবেও নাই এত সকাল আমরা পৌঁছায় যাবো , গাড়ি মাত্র তখন বাসা থেকে রওয়ানা দিসে । আমরা সায়েদাবাদের কাছে একটা চায়ের দোকান এর বেঞ্চের উপর বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম । একটু পর গাড়ি আসল ,গাড়িতে চড়ে আবার ব্যাক টু টা প্যাভিলিয়ান "হোম সুইট হোম" ।
শেষ এ কিছু ছবি কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিন এ তোলা :
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:০২