তামিম ভাইয়ার আমার বান্দরবেলা সিরিজের আমি একজন বিশাল ভক্ত । ওইটা দেখেই মনে হইসিল আমার ছোটবেলাটা এত ইন্টারেস্টিং না হইলেও ওইটা নিয়া কিছু লেখা যায় । আমার একদম ছোটবেলা ( যখন এক থেকে দুই বছর বয়স) কাটসে আমার দাদুর বাড়িতে । চাচা ফুফুরা সহ জয়েন্ট ফ্যামিলি । তখনকার কোন কথাতো আমার মনে থাকার কথা না , আম্মুর কাছে মাঝে মাঝে গল্প শুনে কিছু কিছু জানি তখনকার কথা । আমি বলে মহা শয়তান ছিলাম ছোট কালে । আমার শয়তানির মধ্যে অন্যতম ছিল বলে সকালে আব্বুর জন্য ডিমপোস করলে আমি বলে চুপি চুপি গিয়া চামুচ দিয়া কুসুমটা খেয়ে ফেলতাম আর তারপর গিয়ে বারান্দার দরজার চিপায় চাচার মোটরসাইকেল যেখানে রাখত ওইখানে লুকায়ে থাকতাম



আর একদিনতো আমি বলে বাসা থেকে পালায়েই গেসিলাম

আম্মুকেতো সারাদিন এত বড় সংসারের নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হইত এতটা খেয়াল রাখতে পারত না ,ছোট ফুফুকে বলত খেয়াল রাখতে আমার । একদিন ছোট ফুফু মনে হয় পড়ায় ব্যস্ত ছিল আর বুয়া রওয়ানা দিতেসিল বাজার এর দিকে কি জানি কিনে আনতে পাঠাইসিল ওনাকে । আমাদের বাসা হইল কাঠালবাগান এর ঢালে , সামনেই বাজার ।বুয়াকে যাইতে দেখে আমিও আব্বুর লম্বা স্যান্ডেলগুলা পড়ে বুয়ার পিছন পিছন রওয়ানা দিলাম । বুয়াতো আর জানেনা আমি ওনার পিছন পিছন যাইতেসি ।উনিতো কিনে আবার বাসায় ফেরত আসল । এদিকে বাসার কেউ আমাকে বাসায় না পেয়ে ভাবসে বুয়া আমাকে নিয়া গেসে সাথে । বুয়া আসার পর আমাকে না দেখেতো আমার আব্বু আম্মুর মাথা পুরা শেষ । আব্বু বলে খালি পায়ে বের হয়ে গেসিল আমাকে খুঁজতে । ওদিকে রাস্তায় কোন আংকেল আমাকে দেখে চিনসে শাহরিয়ার এর মেয়ে উনি কোলে করে আমাকে বাসায় নিয়া আসছিলেন পরে ।আমার এটা চিন্তা করলেই ভয় লাগে ঐদিন যদি আসলেই হারায়ে যাইতাম তাইলে কি হইত

এরপর আব্বু মারা যাওয়ার পর ৩/৪ মাস পর্যন্ত আমরা দাদুর বাসায়ই ছিলাম । আম্মু তখন প্রথমবার অফিস এ জয়েন করল । আমাকে কে দেখবে তাই সকালে যাওয়ার আগে ভাইয়া কে স্কুলে দিয়ে আমাকে নানুর বাসায় নামায়ে দিয়ে যাইত । তখন নানুর বাসায় আমার মামারা ,খালা, খালাতো ভাইবোনরা সবাই থাকত ।খালু তখন বিদেশ এ ছিল । আমার মামীর তখন মাত্র বিয়ে হইসে ,আমার মামীই আমাকে দেখে রাখত । আমার মামী সবসময়ই আমার ফ্রেন্ড এর মতন। আমরা সবাই ই মামীর সাথে খুবই ফ্রি । এখনও মামী বলে কাউরে পছন্দ হইলে আমারে আইসা বলিস


একদিন বলে আম্মু আর মামী গেসে কি কাজে আমাকে খালামনির কাছে রেখে আমি বলে সে কি মরা কান্না জুড়ে দিসি আর থামার নাম নাই । শেষ এ বলে আমার খালা চেতে আমাকে ঠান্ডা পানির ড্রামে নামায়ে দিসে (ধরে রেখে অবশ্যই


এরকিছু দিন পর আমরা রেলওয়ের কোয়ার্টার পাইলাম , আব্বু রেলওয়ের সার্জেন ছিল । ওই বাসার আমার খালি একটা কথাই মনে আছে বারান্দায় আব্বুর অপারেশন টেবিলটা ছিল আর আমি ঐটার উপর বসে বসে আমার হাড়িপাতিল এর একটা বিশাল ঝুড়ি নিয়া খেলতাম । ভাইয়া তখন একটু বড় ছিল ।ও কোয়ার্টার এর ছেলেমেয়েদের সাথে খেলত কিন্তু আমার বয়সই কেউ ই ছিল না

ঐ বাসায় আমরা এক বছর এর মতন ছিলাম । এরপর আমাদের কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে হল । তখন সরকার থেকে আমাদের একটা বাসা দিল (এখন প্রায় ১৮ বছর এর বেশি হয়ে গেসে এই বাসায় আমাদের )আমরা ঐ বাসায় গিয়া উঠলাম । এখানে এসেই আমার ৩য় জন্মদিনের অনুষ্ঠান হইসিল । আমার জীবনে ছোটবেলার যা স্মৃতি সব কিছু এই বাসাকে ঘিরেই । সেইটা না হয় আগামী পর্বে লিখব

(চলবে ......)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:৪৩