সিনেমার নাম- Little Boy (2015)
সিনেমার পোস্টারের ট্যাগলাইনেই চোখ আটকে যায় প্রথমে- যেই মানুষটাকে আপনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তাকে বাঁচাতে আপনি কি করতে পারেন?
প্রশ্নটা আপেক্ষিক। আপনি কি করতে পারেন সেটা আসলে নির্ভর করছে আপনার ভালোবাসার ক্ষমতা কতটুকু।আপনার অবস্থান, আপনার বয়স, আপনার সামর্থ্য, আপনার আর্থিক অবস্থা থেকে শুরু করে আরও নানা কিছু। কিন্তু যদি বলি ভালোবাসার এই পরীক্ষা দিতে হবে আট বছরের ছোট্ট একটি ছেলেকে, তাও আবার তার নিজের পিতার জন্য?
পিতা, মাতা, বড় ভাই, ছোট ভাই- চারজনের সুখী পরিবার।ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর লোকদের ভাষায় যাকে বলে- ছোট পরিবার, সুখী পরিবা। সুখী পরিবারের "সুখ" বেশিদিন থাকলো না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো। নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের একজন পুরুষ সদস্যকে 'অবশ্যই' যুদ্ধে যেতে হবে। বড় ছেলের অনেক আগ্রহ যুদ্ধে যাওয়ার, কিন্তু পায়ে সমস্যা থাকার কারণে ফিটনেস পরীক্ষায় বাদ হয়ে যায় সে। আট বছরের ছোট ছেলের যেহেতু যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব না, সুতরাং বাধ্য হয়ে বাবাকেই যুদ্ধে যেতে হয়। ছোট ছেলে বাবার একদম 'ন্যাওটা',বাবাই তার পৃথিবী, বাবাকে ছাড়া যেই ছেলের এক মুহূর্ত চলে না, সেই ছেলে তার চোখের সামনে বাবাকে এমন জায়গায় যেতে দেখছে যেখান থেকে তার বাবা ফিরে আসবেন কিনা সেই ব্যাপারে কেও নিশ্চিত না! যুদ্ধ তো একদিন 'হয়ত' শেষ হবে, কিন্তু তার বাবা ফিরে আসবে এর গ্যারান্টি কি?
বাবা চলে যান যুদ্ধে। ছোট ছেলে নিজের মনকে শান্ত করার জন্য যায় চার্চে।সেখানে পাদ্রীর একটি কথা তার মাথায় আটকে যায়- তুমি যদি বিশ্বাস কর,তাহলে সম্ভব। যা চাও তা পাবে, নির্ভর করছে তোমার বিশ্বাসের শক্তির উপর।"আমি আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই, আমার বিশ্বাসের শক্তি অনেক!" এটা বলতে বলতে পাদ্রীর কাছে তার গমন।পাদ্রি তার অবস্থা বুঝে বলেন- এর জন্য আরও অনেক কিছু করতে হবে- ক্ষুধার্ত কে খাবার দিতে হবে, শত্রুর সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে এমন আরও অনেক কিছু! 'সব বুঝলাম, কিন্তু শত্রু পাব কই?' তখনই সে জানতে পারে তার শহরে এক জাপানী আছে আর তার বড়ভাই সহ আরও অনেকে তাকে বোঝায়- জাপানীরা আমাদের শত্রু!ওদের ক্ষতি করতে হবে। কিন্তু বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খা যার তীব্র, সে তো আর চাইলেও শত্রুকে ঘৃণা করতে পারে না, কারণ পাদ্রি বলেছেন শত্রুকে...! কি হবে শেষমেশ? জয় কার হবে- ঘৃণার না ভালোবাসার? এত কিছুর পরেও কি আট বছরের ছেলেটা আরেকবার তার বাবাকে দেখতে পারবে?
অনেকদিন পর কোন হলিউডের সিনেমা চোখে পানি নিয়ে এসেছে, একই সাথে ঠোঁটের কোনায় ছিল হাসি। এত অদ্ভুত সিম্পল! এত সুন্দর অভিনয় সবার! ছোট্ট বাচ্চাটার প্রশংসা যত করব কম হয়ে যাবে। বাবা ছেলের সম্পর্কের রসায়ন অনেক নায়ক নায়িকার কেমিস্ট্রিকেও হার মানায়! ফিল গুড টাইপের সিনেমা। আট বছরের বাচ্চার চোখ দিয়ে পরিচালক এই দুনিয়ার ঘৃণা, ঈর্ষা, ভালোবাসা, বিশ্বাস, বন্ধুত্ব- সব দেখিয়েছেন। আর হ্যাঁ, যারা এডিটিং শিখতে আগ্রহী, তাদের জন্য মাস্ট ওয়াচ সিনেমা এটি, দারুণ সম্পাদনা।
সিনেমা শেষে একটা বাক্য মাথায় ঘুরে- কাওকে ঘৃণা করার অপরাধে কোনোদিন কারো সাজা হয়নি, কিন্তু কাওকে ভালোবাসার 'অপরাধে' অনেকেরই সাজা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হয়ত হবে
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৫০