somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন শহীদুল ইসলাম খোকন

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাণিজ্যিক সিনেমা মানেই নাচ গান বা বাণিজ্যিক সিনেমা মানেই সেটা দেখে নাক সিটকাতে হবে - এই ধারণাটা আমাদের মাথায় বলতে গেলে অনেকটাই 'সেট' করা আছে।
কিন্তু এই ধারণাকে বৃদ্ধ আঙ্গুল দেখিয়ে বাংলাদেশে যিনি একের পর এক অসাধারণ সিনেমা উপহার দিয়েছেন, তার নাম শহিদুল ইসলাম খোকন। তাকে নিয়ে লেখা শুরু করলে সেটা কোথায় শেষ হবে বলা কঠিন, তারপরেও চেষ্টা করছি তার সম্পর্কে যা জানি তা লেখার।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি রক্তের বন্দি আর পদ্মগোখরার মত ফ্লপ সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও তিন নাম্বার সিনেমা লড়াকু দিয়ে বাজিমাত করেন। এই সিনেমা দিয়েই নায়ক হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন সোহেল রানার ভাই রুবেল। এই সিনেমাতে তিনি প্রথম মার্শাল আর্টের পরিচয় সাথে করান এই দেশের দর্শকদের। ফলাফল- সিনেমা সুপারহিট। এই দেশের দর্শক যেন লুফে নিল এই নতুন ধরনের অ্যাকশনভিত্তিক সিনেমা। পাড়ায় পাড়ায় চলত মার্শাল আর্টের চর্চা।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যার একটি সিনেমা হলে চলার সময় বাইরে
পুলিশের নিরাপত্তা ছিল আর হলে প্রতিটি দর্শককে চেক করে এরপরে ঢোকানো হচ্ছিল। সেই সিনেমার নাম ঘাতক। বাংলাদেশে আর কোন পরিচালকের সিনেমার বেলায় এমনটি ঘটেনি। এই সিনেমার কাহিনী এরকম ঘটনার কারণ। সোনার বাংলা নামে একটি ভবনে দুই ভাই বাস করতো, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের মাঝে একজন যুদ্ধে যান (খলিল) আরেকজন পাকিস্তানী বাহিনির সাথে হাত মেলান (ফরিদি)। কাকতালীয়ভাবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে এই সিনেমাতে খলিলের গেটাপ ছিল জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমানের মত (ব্যাকব্রাশ চুল আর মোটা ফ্রেমের চশমা) আর ফরিদিন লুক ছিল গোলাম আযমের মত (সাদা দাড়ি আর জিন্নাহ টুপি)। এই কথা জানাজানি হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কারা যেন চিঠি পাঠায় যে এই সিনেমা হলে চালানো হলে সেই হল বোম দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হবে। এই কারণেই এই সিনেমার ক্ষেত্রে এমনটা করা হয়েছিল।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি উড়ন্ত বিমানে লাইভ একশন দৃশ্য শুট করেছিলেন। যতদূর মনে পরে,সিনেমার নাম ছিল বিপ্লব। এই সিনেমার জন্য রুবেল মাথার চুল ফেলেছিলেন।এমনকি এই সিনেমাতে একটি দৃশ্যে রুবেল জ্যান্ত একটি ইঁদুরে কামড় দেন। ( জি হ্যাঁ, শুধু হলি বা বলির নায়কেরা না, আমাদের নায়কেরাও একসময় এমন অনেক কিছু করেছেন একটা শুনলে আপনার চোখ এখন কপালে উঠবে)। এগুলো সব হয়েছিল নব্বই এর আমলে, আজকালের কথা না এগুলো।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি তার প্রতিটা সিনেমাতে নতুন কিছু হাজির করতেন দর্শকদের সামনে। সিনেমার শেষে সাধারণত পিতৃহত্যার প্রতিশোধ টাইপ ব্যাপার থাকলেও, প্রতিটা সিনেমার প্লট একটার চেয়ে আরেকটা হত আলাদা। বিশ্বপ্রেমিক নামক সিনেমাতে তিনি হাজির করলেন সাইকো কিলার ফরিদিকে, যিনি যেসব মেয়েদের গলায় তিল থাকে, তাদেরকে খুন করেন। খুন করার পরে সেই তিল ছুরি দিয়ে কাটেন, এরপরে আগে থেকে জমানো তিলের সাথে সেই তিল সেলাই করে গলার তিলের মালা বানান(!)। শত্রু ভয়ঙ্কর সিনেমাতে তিনি এমন এক ফরিদিকে হাজির করেন যিনি খুন করলেও পুলিশ তাকে ধরতে পারেন না কারণ কোন প্রমাণ থাকে না। এর কারণ হিসেবে খোকন দেখিয়েছেন- ফরিদি বরফের ছুরি দিয়ে খুন করেন, খুন করার পরে রক্তের উত্তাপে বরফ গলে যায় ফলে মার্ডার ওয়েপন বা হাতের ছাপ কোনটাই পাওয়া যায়না। আমি জানি অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না যে এগুলো কীভাবে বাংলা সিনেমার কাহিনী হয় বা আসলেই এরকম ছিল কিনা সেই নব্বই এর আমলে। বিশ্বাস না করলে ইউটিউব এ দেখতে পারেন, প্রায় সবগুলো সিনেমাই পাবেন। এছাড়া নরপিশাচ সিনেমাতে আমরা ফোল্ডিং সাইকেল(ভাঁজ করা যায় এমন সাইকেল যেটা ব্যাগে করা নিয়ে ঘুরা যায়!) দেখতে পাই যেটা সেই যুগে কল্পনা করাও দায়!

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি আহমেদ সফার "ওঙ্কার" উপন্যাস অবলম্বনে "বাংলা" নামের একটি সিনেমা বানান যেটি তার comfort zone থেকে একেবারেই আলাদা। এরপরেও এই সিনেমাতে খোকন নিজের মুনশিয়ানার ছাপ রেখেছিলেন।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি ছোট পর্দার অনেক মানুষকে সিনেমাতে অভিনয় করিয়েছিলেন, তবে তার সেরা আবিষ্কার ছিল হুমায়ূন ফরিদি নামক হীরার খণ্ডকে খুঁজে বের করে সিনেমাতে আনা। ছোট পর্দার অভিনেতারা বড় পর্দায় তেমন কিছু করতে পারেনা, এই ধারণাকেও ভুল প্রমাণ করেছিলেন খোকন, ফরিদির মাধ্যমে। সন্ত্রাস সিনেমাতে অভিনয়ের মাধ্যমে খোকন আর ফরিদিন যেই জুটি শুরু হয়েছিল, সেই জুটি অনেক সফল নায়ক নায়িকার জুটিকেও হার মানায়। সাথে তো ছিলই রবেলের কুংফু। সিনেমা সব একের পর এক হিট। এমনও সময় গেছে, দর্শক যতটা নায়ক নায়িকাকে দেখতে আগ্রহী, তার চেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল ফরিদিকে দেখতে।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি পালাবি কোথায় নামক সিনেমার অর্থায়নের জন্য নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এই সিনেমাতে টাকা ঢালতে রাজি করিয়েছিলেন ফরিদিকেও। তবে সিনেমাটা ব্যবসা করতে পারেনি।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি উত্থান পতন নামের সিনেমাতে নায়কের ক্যারেক্টারে অভিনয়ও করেছিলেন। তার অন্যান্য সিনেমার মত এত সুপারহিট না হলেও এই সিনেমাটা ব্যবসাসফল ছিল। এরপরে আর কখনও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় না করলেও, নিজের সিনেমাতে ছোট একটা ক্যারেক্টারে তিনি থাকতেনই। অনেকটাই অ্যালফ্রেড হিচককের মত। নাটকেও অভিনয় করেছিলেন।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি সিনেমার ইতিহাসে রেকর্ড পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত পরিচালক ছিলেন। তার সিনেমার প্রযোজককে তিনি বলেছিলেন, আপনি শাবানাকে যত দিবেন, আমাকে তার চেয়ে দুই লক্ষ টাকা বেশি দিতে হবে। প্রযোজক জিজ্ঞেস করেছিলেন- কেন? তিনি বলেছিলেন- যেই শিল্পী আমার চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাবে, সে as a director আমাকে মূল্য দিবে না, আমার কথা শুনবে না আর এটার ফল ভাল হবেনা। ফিল্ম ইজ অ্যাবসুলিউটলি ডিরেক্টরস মিডিয়া। এখানে ডিরেক্টরের অনুমতি ছাড়া একটা সুতাও নড়বে না।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি নায়ক নায়িকার রোম্যান্টিক গানে কোন এক্সট্রা শিল্পী থাকাকে নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বলে গণ্য করতেন। নায়ক নায়িকার প্রেম হলে সেখানে শুধু নায়ক বা নায়িকাই থাকবে, তাদের কোন সখা বা সখী থাকবে না- এটাই ছিল তার বিশ্বাস।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যাকে তার সমালোচকেরা যখন বলেছিল- রুবেল ছাড়া খোকন অচল, তার সিনেমা চলবে না- তখন তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে কম্যান্ডার সিনেমা বানান, সাথে ফরিদি তো ছিলই। মজার ব্যাপার হল সবা সমালোচকের মুখে ছাই দিয়ে এই সিনেমাও ব্যবসাসফল হয়।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যার কমেডি-অ্যাকশন সিনেমা ভন্ড মুক্তির পর সারাদেশে সব প্রেক্ষাগৃহে ২৯ শো টানা হাউসফুল হয়েছিলো।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি সিনেমাতে অশ্লীলতার বিরোধী আন্দোলনের সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন। শুধু কথাই বলেন নি অশ্লীলতার বিপক্ষে, কাজেও প্রমাণ দেখিয়েছেন। যোদ্ধা নামের একটি সিনেমা ছিল খোকনের, যেই সিনেমার পোস্টারে কোন ছবি ছিল না। শুধু উপরে লেখা ছিল যোদ্ধা আর বাকি সব জায়গা লাল রং দিয়ে ভর্তি। নিচে এক কোনায় ছোট্ট করে লেখা- পোস্টারে অশ্লীল ছবির ব্যবহারের বিপক্ষে নিজের সিনেমার পোস্টারে কোন ছবি না দিয়ে অশ্লীলতার বিরুদ্ধে এটা আমার প্রতিবাদ।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি দুই বাংলার সিনেমার বিনিময়ে কখনও না করেন নি। তবে তার শর্ত ছিল আগে আমাদের দেশের চ্যানেল পাশের দেশে মিনিমাম এক বছর চালাতে হবে, এরপরে সিনেমার বিনিময় হবে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন- "আমার বাসার কাজের বুয়াও আপনার দেশের শাহরুখ খানকে চিনে, কিন্তু আপনার দেশের কয়জন আমাকে বা শাকিব খানকে চিনে? প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকা চলে যায় এই চ্যানেলগুলোর জন্য। ভারতে আমাদের চ্যানেলগুলো চলছে না। ইন্ডিয়ার ভয় হচ্ছে, একটি চ্যানেল যদি তাদের দেশে চালাতে হয়, তাহলে ৫ কোটি রুপি ব্যাংকে দিতে হয়। আর আমাদের দেশে দিতে হয় এক লক্ষ টাকা।আগে আমার দেশের চ্যানেল চলবে, আমাদের চিনবে আপনাদের দর্শকেরা, এরপরে সিনেমা বিনিময়ে আমার কোন আপত্তি নাই। আর এই ক্ষেত্রে যদি কোন অনিয়ম হয়, তাহলে আমি আগুন জ্বালিয়ে দিব! " এমনই প্রতিবাদী ছিলেন তিনি নিজের দেশের সিনেমার জন্য। তিনি আরও বলেন-বাংলাদেশের সিনেমা আইনে সিনেমা হল করলে আপনি বছরে পনেরো পার্সেন্ট বিদেশি ছবি চালাতে পারবেন। সেভেন্টিফাইভ পার্সেন্ট ছবি বাংলা চালাতে হবে, লেখা আছে। এখন কিছু বলছি না এ কারণে যে, আগে হিন্দি থামাই পরে ইংরেজি ধরবো।

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক নতুন তারকাকে এনেছেন আর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রুবেল, তামান্না, সিমলা, ড্যানি সিডাক, ইলিয়াস কোবরা, সিরাজ পান্না, মিশেল, অ্যালেকজান্ডার বো। এর মাঝে মিশেল ছিলেন কুংফু জানা একমাত্র অভিনেত্রী। নতুন আর্টিস্ট পরিচয় করানো সম্পর্কে তিনি বলেন- একটা আর্টিস্টকে পর্দায় প্রথমে পরিচিত করাতে হয়। রুবেলকে যখন আনি তখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেই- শক্তিশালী, স্বপ্নিল সুদর্শন নায়কের আবির্ভাব, ১৬ মিনিটের, নতুন শিল্পীর আবির্ভাব ড্যানি সিডাক- এই প্রেজেন্টেশনগুলা নাই।সিমলাকে আনার আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তার নাম আহ্বান করি। হাজার হাজার নাম আসে। এর মধ্যে ১৪ জন নাম দিয়েছিলেন সিমলা। যার মধ্যে একজনকে লটারি গিফট করে টেলিভিশন গিফট করেছি আমি। এই যে প্রচারটা, নাইতো। এই যে নতুন শিল্পী আসছে তারা জনগণের কাছে তারা পৌঁছাতে পারছে না, কেননা তাদের প্রচার নাই। টেলিভিশন রেডিওতে এদের পাবলিসিটি নাই। মনে করেন, আমি যখন তামান্নাকে আনলাম, তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন করলাম, ‘লোকে বলে সুন্দরী, আমি বলি সুন্দরী আহা, আসছে শহীদুল ইসলাম খোকনের নতুন নায়িকা তামান্না’। তারপর থেকে রাস্তায় নামলে লোকজন জমে যেতো।

সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন- সিনেমা হলের আইন আছে একটা। সিনেমা হলের জন্য জমিন নিলেন, কিন্তু সিনেমা হল এখন ভেঙে দিলেন, কিন্তু এটা আপনি পারেন না। আইনে নেই। পৃথিবীর কোনো দেশে সরকারি সিনেমা হল ভাঙার সিস্টেম নেই। দেশে বারোশ সিনেমা হল ছিল, এখন আছে তিনশ। তারা কি সরকারের অনুমতি নিয়েছিল? অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা আরেকটা যুক্ত হয়েছে বিনোদন। সিনেমা হল ঠিক করুক, একটা ছেলেও মদ খাবে না, গাঁজা খাবে না। প্রেমিকা নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। গভমেন্ট এটা বোঝে না?

শহিদুল ইসলাম খোকন হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি দর্শকদের পালস বুঝতে পারতেন, যিনি বাইরের দেশের সিনেমার খোঁজখবর রাখতেন। নতুন দিনের পরিচালকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- আমার সকল পরিচালক ভাইদের বলবো বই পড়ুন, অনন্ত প্রতিদিন তিন ঘণ্টা বই পড়ুন। দয়া করে বই পড়ুন। তা না হলে বিশ্বের চলচ্চিত্র সম্পর্কে, সমাজ ও যুগ সম্পর্কে জানবেন কী করে? একজন মেথরের বেডরুম থেকে শুরু করে রাজার বেডরুম কেমন হয়, তা একজন পরিচালককে জানতে হবে। ফিল্ম ইজ অ্যাবসুলিউটলি ডিরেক্টরস মিডিয়া।

একটি সিনেমাতে কি থাকলে মানুষ সিনেমাটি দেখবে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে খোকন বলেছিলেন- পরিচালকদের প্রথমেই জানতে হবে, সিনেমা তিনটি কারণে চলে: প্রথমটি, তোমার ছবিতে এমন কিছু আছে, যা দর্শক আগে কখনো দেখেনি। এমন কোন কনসেপ্ট যেটা দুনিয়াতে এই প্রথম। দ্বিতীয়টি, তোমার ছবি দর্শকহৃদয় স্পর্শ করবে।কোন না কোন একটা দৃশ্য বা কোন একটা সংলাপ বা কোন একটা ক্যারেক্টারের আবেগ। তৃতীয়টি, হল থেকে বের হওয়ার পরও দর্শকের চোখে দৃশ্যগুলো ভাসবে এমন কিছু যেন তোমার সিনেমাতে থাকে।

খোকন কথা বলেছেন এই দেশের সেন্সর বোর্ড সম্পর্কেও- দেশের কোনো শিল্পমাধ্যমে কিন্তু সেন্সর নেই, শুধু সিনেমায় আছে। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা নেই শুধু চলচ্চিত্রকারদের। আমরা সব কথা বলতে পারি না। নাটকে আছে? টেলিভিশনে আছে? আমাদের কেন থাকবে? আমরা কি অচ্ছুৎ বাংলাদেশে? ঘাতক সিনেমাতে আমার নিজের কিছু সংলাপ ছিল দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে- যেটা সেন্সর কেটে দেয়।

আমরা আজকে শুধু একজন পরিচালক কে হারাই নি, আজকে আমরা এমন একজনকে হারিয়েছি- যিনি সিনেমা জিনিসটা বুঝতেন। তিনি বুঝতেন আমাদের সমস্যাটা কোথায়। নতুনদের সবসময় উৎসাহ দিতেন। তাদের সম্পর্কে বলতেন- বেশ কিছু শিক্ষিত উদ্যোমী তরুণ আসছে নির্মাণে। তাদের আইডিয়া ভালো, চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন এবং ভালো। খারাপ দিকটি হচ্ছে, ডিজিটাল ফরম্যাট হয়ে যাওয়ার পর কিছু লোক নাটক বানিয়ে তাতে দুইটা গান ঢুকিয়ে সিনেমা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করছে। আমি ঘাবড়াই না এ জন্য যে, অনেকগুলো খারাপের মাঝে একটা ভালো হবেই। পৃথিবীর সবদেশেই খারাপ ভালো সবধরনের ছবিই হয়।

এত নিরাশার মাঝেই যেই মানুষটা আশা দেখতেন, সেই আশাবাদী মানুষটাই চলে গেলেন আজকে। আশাবাদী মানুষদের সম্ভবত খুব বেশিদিন বাঁচার অধিকার নেই এই দেশে। বর্তমান প্রজন্ম ভাবতেও পারবে না তারা যেই হলিউড আর বলিউড এর অনেক কিছু দেখে অবাক হয়, তার চেয়েও অবাক করা বিষয় আমাদেরকে শহিদুল ইসলাম খোকন দেখিয়েছেন সেই নব্বই এর আমলে। সীমিত পরিসরে, কম বাজেটে যতটা দেখানো যায়- ততটাই দেখিয়েছেন তিনি, চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেননি। সিমলা যখন ম্যাডাম ফুলি সিনেমার প্রথম শট দিতে যাবে, তখন সে জিজ্ঞাসা করে- খোকন ভাই, ক্যামেরা কোথায়? আমি তো দেখতে পারছি না, কোনদিকে তাকিয়ে শট দিব?খোকন বলেন- ক্যামেরা কোথায় সেটা তোমাকে জানতে হবে না, দেখতে হবে না, ক্যামেরাই তোমাকে খুঁজে নিবে।

এরকম গুণী আর সাহসী নির্মাতা একবারই আসে। আর আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি। আমার অন্যতম প্রিয় পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকনের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×