বইয়ের নাম- কেউ কেউ কথা রাখে।
লেখক- মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।
প্রকাশনী- বাতিঘর।
জনরা- থ্রিলার, মার্ডার মিস্ট্রি, ড্রামা, পলিটিকাল।
বইয়ের নামটা পড়লে শুরতেই সুনীলের কেও কথা রাখিনি নামক বিখ্যাত কবিতার কথা মাথায় আসে, এমনকি চোখেও ভুল হয়। একটু পর বুঝা যায়, বইয়ের নাম আসলে কেউ কেউ কথা রাখে।
বইয়ের কাহিনীর সেটআপ হচ্ছে স্বাধীনতার ঠিক পরবর্তী সময়টা। এই সময়ে একটা খুন হয়। খুনি বের করার দায়িত্ব পড়ে সিনিয়র এসআই এস এম হায়দার আর অ্যাসিস্ট্যান্ট এসআই (আমাদের গল্পের বর্ণনাকারী সালসাবিল হক) উপরে। স্বাধীনতার পরের সময়, সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের অবস্থা এমনেই নাজুক, নেই কোন আধুনিক ফরেনসিক সিস্টেম বা অন্য কিছু, তার উপরে কিছুতেই আন্দাজ করা যাচ্ছে না খুনি কে হতে পারে। খুন হওয়া মেয়ের স্বামীকে প্রথমে সন্দেহ করা হলেও পরে দেখা গেল আসলে এই বেচারা একেবারেই নির্দোষ। খুঁজতে খুঁজতে একদিন হঠাৎ করে আমাদের গল্পের বর্ণনাকারীর বদৌলতে একজনকে সন্দেহ করা হয় খুনি হিসেবে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু এরপরেও হত্যাকাণ্ডের পুরোপুরি বিচার করা গেল না। এই খুনের ঘটনা বদলে দিল বেশ কিছু মানুষের জীবন আজীবনের জন্য।
এরপরের ঘটনা ২০১৫ সালে এসে। এতদিনে সময় অনেক গড়িয়েছে। আমাদের সেই বর্ণনাকারী পুলিশের চাকরি ছেড়ে একজন থ্রিলার লেখক। পুরনো সেই খুনের কথাটা নিজের লেখনীর মাধ্যমে তিনি সবার সামনে হাজির করতে চান। এরমাঝেই তিনি আবিষ্কার করলেন এই বিস্ময়কর সত্য সেই খুন সম্পর্কে কজেতা এতদিন চাপা ছিল। কিন্তু সত্য তিনি প্রকাশ করতে পারবেন না, সত্য প্রকাশ করতে হলে তাকে প্রকৃতির উপরে নির্ভর করতে হবে!
রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি এরপরে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের আরেকটি মৌলিক বই। পুরোপুরি মৌলিক নাজিম সাহেব নিজেও বলেন নি। আর্জেন্টিনার ঔপন্যাসিক এচুয়ারদো সাচেরির "লা প্রেহুন্তা দে সুস ওহোস" থেকে পরোক্ষভাবে অনুপ্রাণিত এই বই। এই বই থেকে একটি সিনেমাও নির্মিত হয়েছে, যেটা আমি অনেক আগেই দেখে ফেলেছি, আর্জেন্টিনার সেই সিনেমার নাম THE SECRET IN THEIR EYES.
সিনেমাটি আগে দেখা থাকলেও বুঝতে পারিনি নাজিম উদ্দিন তার লেখা কোনদিকে কীভাবে নিয়ে যাচ্ছেন।আর্জেন্টিনার একটি ঘটনাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তিনি যেভাবে সেট করেছেন- সেটা জাস্ট দুর্দান্ত! এই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে নাজিম উদ্দিন স্বাধীনতার পরবর্তী দেশের নাজুক অবস্থা, রক্ষীবাহিনী, সিরাজ শিকদার, বাকশাল- সবকিছুকেই অল্প অল্প করে এনেছেন(এক বা দুই লাইনে), তবে তাতে কোনোভাবেই মূল মার্ডার মিস্ট্রির ঘটনার গায়ে সামান্য আঁচড় লাগেনি। সরকারী দলের পক্ষে থাকা আর সরকারী দলের বাজে সিদ্ধান্তের সমালোচনা করাও দুইজন মানুষ যে একসাথে কীভাবে সহনশীলতার সাথে থাকতে পারেন, কাজ করতে পারেন- সেটাও ভাল লেগেছে। সবচেয়ে ভাল লেগেছে ক্যারেকটার ডেভেলপমেন্ট। এসআই হায়দারের ক্যারেক্টারটা অলটাইম ফেভারেট ক্যারেক্টারের লিস্টে ঢুকে গেল। বাকি ক্যারেক্টারগুলাও দারুণ। রামজিয়া শেহরিন এর জন্য শুধুই ভালোবাসা
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯