সিনেমার নাম- The Revenant
যেই সিনেমা আগামি নতুন বছরের ৮ জানুয়ারি অফিশিয়ালি রিলিজ পাওয়ার কথা, সেটা আমি ক্যামনে দেখে রিভিউ দিচ্ছি- এটাই ভাবছেন নিশ্চয়?
ভাবনার অবসান ঘটাই আমাদের চিত্রনায়িকা মৌসুমির বলা বিজ্ঞাপনের একটি লাইন দিয়ে- "আমার কাছে জাদু আছে!" :p ইয়েস, জাদুর নাম পাইরেসি।
শেষ কবে কোন সিনেমা দেখে এই অনুভূতি হয়েছে- মনে নাই। ডি কেপ্রিওর কোন সিনেমা দেখে এমন অনুভূতি হইসে- এটাও মনে নাই। মনে না থাকার কারণ সম্ভবত একটাই- আসলেই এরকম অভিনয় সে আর করে নাই।
১৮২৩ সালের গল্প (মূল গল্প মিশেল পুনক এর লেখা একই নামের উপন্যাস),ডাকোটা অঞ্চলে শিকার করতে গিয়ে ‘হিউজ গ্লাস’ (কেপ্রিও) ভাল্লুক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তাকে রেখে তার সঙ্গী সাথীরা চলে যায়। ভাল্লুক দ্বারা আক্রান্ত প্রায় অর্ধমৃত মানুষকে "হুদাই" টানাটানির কোন মানে নাই,যেহেতু সে কোন "কাজে" আসছে না উল্টো "কষ্ট" বাড়াচ্ছে এই বরফের পৃথিবীতে! তাকে মোটামুটি জীবিত কবর দেয়ার সব ব্যবস্থা করে রেখে বনে ফেলে যাওয়া হয়। যাওয়ার সময় তার ছেলেকেও হত্যা করে যায়। কিন্তু এই হিউজ গ্লাস নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার এক আপ্রাণ চেষ্টায় মেতে ওঠে এবং প্রায় ২০০ মাইল পথ অতিক্রম করে প্রতিশোধ নিতে লোকালয়ে যায়। কেপ্রিওর ছেলের হত্যাকারীর ভূমিকায় আছেন টম হার্ডি।
এই সিনেমাতে কেপ্রিও যা করেছেন, তা বর্ণনা করার মত সিরিয়াসলি কোন বিশেষণ আমার কাছে নেই। তার বাসায় এই সিনেমার জন্য এক ট্রাক অস্কার পাঠালেও কম হয়ে যাবে- আই মিন ইট। এর চেয়ে ভাল করা সম্ভব না। পিঁপড়া থেকে শুরু করে বন্য প্রাণীর কাচা কলিজা, মাংস, নাড়ি ভুঁড়ি, কাচা মাছ- বেঁচে থাকার জন্য এমন কিছু নাই যা তিনি এই সিনেমাতে খাননি। ভাল্লুকের সাথে মারামারির সিনটা দেখলে যে কারো আত্মা কেঁপে যাবে। এত কিছুর পরেও বেঁচে থাকার ইচ্ছা তিনি ত্যাগ করেন নি, তার তীব্র ইচ্ছা তাকে সামনে হেঁটে চলতে সাহস দিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে বারবার তিনি জীবনের গান গেয়েছেন। দ্যা ডেনিশ গার্ল সহ আরও বেশ কিছু পারফর্মেন্স আছে এই বছর তাকে টেক্কা দেয়ার জন্য। তবে সিরিয়াসলি বলছি- তাকে এবার না দিলে আর কোনোদিন যেন অস্কার না দেয়া হয়। সবকিছুর একটা সীমা আছে। এই সিনেমাতে নিজের শরীরের উপরে অত্যাচার করে তিনি সব সীমা অতিক্রম করেছেন। তিনি এই পৃথিবীতে ছিলেন বলে মনে হয়নি- নিজের শরীর আত্মা সবকিছু কারো কাছে জিম্মা রেখে অতিমানবিয় পারফর্মেন্স করেছেন। ক্যারেক্টারের সাথে এভাবে মিশে যাওয়া- কিছু বলার নাই আসলে, কিচ্ছু না।
এটা কি আসলে শুধু সারভাইভাল সিনেমা? নাকি অ্যাডভেঞ্চার? নাকি প্রতিশোধের?- এই সবগুলোর মিশ্রণ থাকলেও দিন শেষে এটি কিছুটা হলেও প্রেমের সিনেমা। পিতা আর পুত্রের প্রেম। স্বামী আর স্ত্রীর প্রেম। যা দেখানো হয়েছে কাব্যিক সৌন্দর্যে- যার কৃতিত্ব অবশ্যই পরিচালক ইনারিতু এবং 'বার্ডম্যান' ও 'গ্রাভিটি'খ্যাত অস্কারজয়ী সিনেমাটোগ্রাফার ইমানুয়েল লুবেজকি।
আমি যেই লিঙ্ক পেয়েছি, সেটার প্রিন্ট বেশ ভাল,৪৮০ পিক্সেল এর মত।সিনেমাতে সংলাপ কম, নেইটিভ ল্যাঙ্গুয়েজ বেশি, সেগুলো সাব সহ ছিল। যা করার তা বেশিরভাগ কেপ্রিও নিজের চিৎকার আর চোখের অদ্ভুত এক্সপ্রেশনের সাহায্যে করেছেন। kickass.to তে স্ক্রিনার প্রিন্ট পাবেন, নিজ দায়িত্বে খুঁজে নিন, ওয়াচেবল প্রিন্ট। বাকিরা অপেক্ষা করুন আরেকটু, এই জিনিস ব্লুরেতে দেখলে সেটার স্বাদ পদ্মার ইলিশের মত। ইলিশ যখন খাবেন, সেটা আয়োজন করে সময় নিলে খেলেই কি ভাল হয়না?
শেষমেশ, পাইরেসিকে নিয়ে দুটো লাইন- তুমি না থাকলে ডি কেপ্রিওকে দেখাটা এত মিষ্টি হত না, তুমি না থাকলে সিনেমা জিনিসটা সৃষ্টিই হত না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪