আমরা যখন খুব ছোট তখন গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে এই গল্প টি শোনা যেত,স্বাধীনতার আগে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিল মনসুর আলী প্রেসিডেন্ট । তৎকালীন সময়ে চেয়ারম্যানকে প্রেসিডেন্ট বলেই ডাকা হতো । আমাদের ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ ছিল নিম্ন মধ্যবিত্ত, শুধু মাত্র মনসুর প্রেসিডেন্ট ই ছিলেন অবস্থা সম্পন্ন । গ্রামের যেকোনো ব্যাপারেই মনসুর প্রেসিডেন্ট এর মতমত ই শেষ কথা । তিনি আবার ছিলেন দাম্ভিক অহংকারী বদমেজাজের লোক। সেসময়ে তিনি চেয়ার পেতে গ্রামের মূল সড়কে তার বাড়ির সামনে বসে থাকতেন, রাস্তায় যেই যাক না কেন তাকে আদাব সালাম দিয়ে যেত হতো । কোন কারনে কেউ যদি আদাব সালাম দিতে ভুল করতো সেই দিন তার কপালে শনির দশা লেগে যেত । একদিন তিনি যথারীতি চেয়ারে বসে আছেন, নিম্ন পাড়ার কিছু লোক নতুন পোষাক পরিধান করে রাস্তা দিয়ে তার বাড়ির সামনে দিয়ে তাকে সালাম না দিয়েই চলে যাচ্ছে । প্রেসিডেন্ট সাহেবের এই অপমান তো সহ্য হলোনা, তিনি রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে নতুন পোষাক পড়া লোকগুলোকে কে কাছে ডাকলেন । নামধাম জিজ্ঞ্যেস করে জানতে পারলেন এগুলি নিন্ম পাড়ার লোক, তারা সালাম না দিয়েই চলে যাচ্ছিলো নেমন্তনে দেরী হয়ে গেছে এজন্য, তারাহুরোয় তাদের এই অনাকাংখিত ভূল । তারপরও তার সামনে দিয়ে নতুন পোষাক পড়ে সালাম না দিয়ে যাবার জন্যে লোকগুলিকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হলো । তিনি নিজেই শাস্তি ঘোষণা করলেন, নতুন পোষাক পড়েই তাদেরকে রাস্তার কাদা পানিতে গড়াগড়ি দিতে হবে । যথারীতি শাস্তি পালন হলো । আসলে সালাম না দেয়াতে তিনি যত বেশি রাগ না করেছেন, তার চেয়ে বেশি রাগ করেছেন তার সামনে দিয়ে নতুন পোষাক পড়ে যাওয়াতে ।
পাঠক দীর্ঘ ভূমিকার জন্যে ক্ষমাপ্রাথী মূল প্রসঙ্গে আসি ।আমাদের ক্রিকেটের স্বপ্ন-সারথি সাকিব আল হাসান বোর্ড এর অনমুতি পত্র হাতে পাবার আগেই সিপিএল খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশ্যে স্বস্ত্রীক লন্ডন চলে যাবার পর আমাদের বোর্ড কর্তাদের মনে বড়ই কষ্ট লাগছে, তাই তারা সাকিব আল হাসানকে নির্দেশ দিয়েছেন, অতি সত্তর দেশে ফিরে অনূশিলনে যোগ দিতে এবং সিপিএল খেলতে বোর্ড কর্তারা সাকিবকে অনূমুতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছন । সাকিব ও বোর্ড এর এই অযাচিত হস্তক্ষেপে ক্ষুদ্ধ হয়ে টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের চিন্তা করছেন। বোর্ড কর্তারা বেশির ভাগই সাবেক ক্রিকেটার, যাদের খেলার পারফম্যান্স সাকিব এর সাথে তুলনা করলে তারা নিজেরাই হাসির খোরাকে পরিনত হবেন । পাঠক এখন উপরোক্ত গল্পটা তূলনা করেন, বোর্ড কর্তারা সাকিবকে আন্তজাতিক ক্রিকেটার হিসেবে হিংসা করছেণ না তো ?
নাকী সত্যি তারা শৃংখলা আনতে চাইছেন ?
আসল জিনিস, খেলাটাই ভূলে গিয়ে যদি আমরা অহেতুক বিতর্ক করে আমাদেরই ক্ষতি করি তবে কার সাধ্য আছে আমাদের ক্রিকেটের পতন ঠেকাবে ?
সাকিবকেও বলি মাঠে বউ নিয়ে আর বোর্ড কর্তাদের অবজ্ঞা করে আলোচনায় না এসে খেলা দিয়ে আলোচনায় আসুন তাতে আমাদের সবার জন্যেই মঙ্গল । বোর্ড এবং সাকিবের সবারই শুভ বুদ্ধির উদয় হউক ।
তবেই আমরা আমাদের প্রিয় খেলাটা সাকিবের কাছ থেকেই সেরাটা আশা করতে পারবো ।