অনেক বেলা করে ঘুম ভাঙলো বিপুলের। গভীর রাত জেগে মুভি দেখাতেই এই পরিণতি। ঘোলানো ঘোলানো চোখে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে দেখলো সে। ওরেবাবা, এগারোটা মিসকল। দেরি করে ঘুমানোয় রাতে মোবাইল সাইলেন করে শুয়েছিলো সে। কললিস্ট ঘেটে দেখলো এগারোটা মিসকলের মধ্যে সাতটাই শ্রাবন্তীর।
শ্রাবন্তী বিপুলের ক্লাসমেট এবং ঘনিষ্ট বন্ধু । বেশ সফিস্টিকেটেড এবং সিনসিয়ার একটা মেয়ে। পড়ালেখায়ও ভাল। তার অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বিপুলকে শাসন করা। বাসায় মায়েরা যেরকম খাওয়া ঘুম নিয়ে শাসন করে অনেকটা সেরকম। বাসায় মা আর বাইরে এই জঞ্জালটা।
শ্রাবন্তীর জন্যে বিপুল সবসময়ই দৌড়ের ওপর থাকে। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন।
শ্রাবন্তীর সাতটা মিসকল দেখে বিপুলের চোখ বড়বড় হয়ে গেল। এতগুলো কল কিজন্যে দিয়েছে কেজানে! কোন প্রবলেম-টবলেম হলোনাতো! কি জানি, শ্রাবন্তীর সবকিছুতেই ছটফটিং। ঘটনা হয়তো খুবই সামান্য কিন্তু আয়োজন বড়। তবে কল ব্যাক করতে ভয় করছে বিপুলের। কেননা, ঘটনা ছোটবড় যাই হোকনা কেন, ঝাড়ির কোন ছোটবড় নাই। পান থেকে চুন খসলেও ঝাড়ি শুনলে মনে হবে স্ট্যাচু অব লিবার্টির হাত থেকে বই পরে গেছে।
ঝাড়ির কথা ভেবে ভয় পেলে চলবে না। কারন, কলব্যাক না করলে পড়ে ঝাড়ির বদলে পরে ঝাড়– জুটবে। সব সংশয় ভেঙে শ্রাবন্তীকে কল ব্যাক করলো বিপুল। রিং একটা পুরোপুরি না বাজতেই ওপাশ থেকে শ্রাবন্তীর ঘসেটি বেগম মার্কা কণ্ঠ, গলায় অশেষ বিরক্তি।
কিরে হারামিজাদা! কোথায় মরেছিস? এতবার করে ফোন দিচ্ছি ধরছিসনা কেন? মরে গেলেওতো অন্তত একটা ফোন দিয়ে জানাতে হয়। মরার আদবকায়দাও দেখি শিখিসনাই।
এটা হলো শ্রাবন্তীর ঝাড়ির প্রথমধাপ। এই ধাপে বক্তা শ্রাবন্তী একা। ঝাড়িখাদকের কোন বক্তব্য থাকবেনা। এখানে ঝাড়িখাদকের আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোনপ্রকার বক্তব্য দেবার সুযোগ নেই। যদিওবা সে সেটা করার ক্ষীণ প্রয়াস চালায় তবে ঝাড়ির মাত্রা দ্বিগুণ হবে। তাই এখানে মুখবুজে ঝাড়ি খাওয়াটাই নিরাপদ। কথা যা হবে এই ধাপ শেষ হবার পরে।
না মানে, ঘুমায়ে ছিলাম। মোবাইল সাইলেন ছিল তাই বাজেনাই। ঘুমজড়ানো ভারি গলায় বলল বিপুুল।
এখনো ঘুমাচ্ছিস? কয়টা বাজে দেখছস? রাতে কি করছস? গাঁজা খাইছস নাকি চুুরি করতে গেছিলি?
ধুর, ফাউল কথা বন্ধ কর। রাতে মুভি দেখতে দেখতে দেরি হয়ে গেছে। ফোন দিছিলি কেন?
আরে আমার রেফারিরে। আয় তোরে ফাউল শিখাই।
এটা হচ্ছে ঝাড়ির শেষপর্ব। এখানে আলোচনা করার সুযোগ আছে তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নাই। যুক্তিতর্ক যেদিকেই যাক সিদ্ধান্ত শ্রাবন্তীর পক্ষে। তালগাছ আমার টাইপের।
আজ ম্যাডাম আর মনতাজ সারের ক্লাস আছে। ম্যাডামেরটাতো আমরা ভাগযোগ কইরা খাইয়া ফালাইছি। তুই মিস করছস। এখন সারেরটাও যদি মিস করতে না চাস তাহলে উইঠা তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে আয় নইলে এইডাও যাইবো। আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিল শ্রাবন্তী।
চলবে...