১.
তারেকের মাথা সবসময় ঠিক থাকে না।
হেরোইনের নেশা ধরার পর থেকে এই অবস্থা। বাপ’টা টাকা দেয়া বন্ধ করেছে অনেক আগেই। তারপর একদিন বাপের সাথে রীতিমত মারপিট করে শেষমেশ সে ঘরছাড়া।
তারেকের মাথা এমনিতেই ঠিক থাকে না।
বন্ধু বলতে ছিল কেবল কলেজলাইফের ক্লাসমেট হাসান। খুব চুপচাপ একটা ছেলে, আর খানিকটা গবেট টাইপের। ইনিয়ে-বিনিয়ে দুয়েকটা দুঃখের কাহিনী শোনালেই বিশ্বাস করে টাকা ধার দিয়ে দিত।
এভাবে নিতে নিতে কখন যে হিসাবটা লাগামছাড়া হয়ে গেছে, তার হুঁশ নেই। হুঁশ ফিরল যেদিন থেকে হাসান আর টাকা দিতে অস্বীকার করল। উলটা এখন সেই পঁচিশ হাজার টাকা ফেরত চায়!
এমনিতেই তারেকের মাথার নাই ঠিক। হাসান ছেলেটা গর্দভ টাইপের এটা সে বুঝেছিল, কিন্তু এতটা গর্দভ হবে সেটা আন্দাজ করতে পারে নাই। সে কি সত্যিই মনে করেছিল তারেক কোনওদিন ঐ টাকা ফেরত দিবে?
হাসান এরপর থেকে নিয়ম করে চাপ দেয়া শুরু করলে, সেদিন হঠাৎ তারেকের মাথায় একটা অসাধারণ অনুপ্রেরণা নাযিল হল! নিজের বুদ্ধিতে তারেক মুগ্ধ হয়ে যায়। ঘন্টাখানেক আগে হাসান ফোন করলে তারেক তাকে জানায় টাকা নেয়ার জন্য কোথায় আসতে হবে।
তারেক এখন একটা সতের তলা নির্মাণাধীন বিল্ডিং-এর ছাদে বসে আছে । এদিকটা শুনশান। হাসানের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। হাতের রড'টা শক্ত করে ধরে তারেক টানটান হয়ে থাকে। হাসান হাঁপাতে হাঁপাতে সিড়ি ভেঙ্গে উঠে আসতেই তারেক ধাঁ করে রড চালালো মাথা বরাবর...
তারেকের মাথা সবসময় ঠিক থাকে না। তার ওপর সামনে হাসানের লাশ পড়ে আছে।
চোখ ঝাপসা, মাথা ঝিমঝিম করছে। কিন্তু এখন ক'টা মিনিট খুব ইম্পর্ট্যান্ট! পকেট থেকে এনটি-কাটার বের করে তারেক খুব সুক্ষ্মভাবে হাসানের ডান হাতে একটা নকশা আঁকতে বসল...
২.
নির্মাণাধীন বিল্ডিংটার নীচে উৎসাহী জনতার ভিড়। খানিক আগে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে একটা ছেলে মরে গেছে! রক্তের মাঝে লাশ পড়ে আছে, মাথা পুরাই থেঁতলানো। পাশে চুরমার হয়ে পড়ে আছে মোবাইল ফোনের কিছু অংশ।
পুলিসের আগেই কিভাবে যেন সাংবাদিক এসে জুটল কয়েকজন। উপস্থিত সকলেই ফিসফাস করে কথা বলছে; এর মাঝে একটা ছেলে শুধু বিলাপ করে আকাশ ফাটাচ্ছে, “এইটা কী খেলা খেলতে গেলি রে হাসাআআআন?”
সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে সাংবাদিকেরা সাথে সাথে কাঁদতে থাকা ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেল, “আপনি কে হন?”, “যে মারা গেছে সে আপনার কে হয়?”, “কী খেলার কথা বলছেন?”
জানা গেল শোকগ্রস্থ ছেলেটার নাম তারেক। তার জবানবন্দি’র সারাংশ হলঃ তার বন্ধু হাসান ঘন্টাখানেক আগে তাকে ফোন করে জানায়, কোন এক খেলার জন্য সে এখন আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে। তারেক চিৎকার করে বলেছিল, “তুই কী বলস এইসব পাগলের মত? ঐখানে থাক, আমি আসতেসি!”। হাসান কোন কথার জবাব না দিয়ে শুধু বলেছিল, আমার ডানহাত'টা দেখিস। তারপর ফোন অফ, আর তারেক ছুটে এসে দেখে সব শেষ...
কথার সবটা শেষ হওয়ার আগেই সবকটা চোখ ঘুরে যায় লাশের ডানহাত দেখার জন্য। রক্তে মাখামাখি অবস্থা, স্পষ্ট কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু যেটুকু দেখা গেল তাতেই সাংবাদিক'দের চোখ বিস্ফারিত!
ব্লেড দিয়ে নকশা কাটা – একটা নীল তিমি!
৩.
দু’চারদিন পুলিশ আর সাংবাদিক'দের ইন্টার্ভিউ দেয়ার পর তারেকও আগের জীবনে ফিরে যায়।
তবে এর রেশ অত সহজে শেষ হয় না। ঘটনাটা পুরো দেশে অস্থিরতার একটা বন্যা তুলে দিয়ে যায়। টিভিতে, পেপারে, অনলাইন দুনিয়ায়। যদিও তারেক ওসবে খুব একটা গা করে না আর।
এমনিতে তার মাথা সবসময় ঠিক থাকে না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৮