কেউ বলে মানুষটা অন্ধের মত ছিল - চোখে গাঢ় ছানি,
কেউ বলে বাম-পা'টা চলত না, কেউ বলে বাম হাতখানি
নিশ্চল ছিল; তবে ধীর পায়ে কোনও এক রাতের গভীরে
শান্ত সে বৃদ্ধটা এসে মিশেছিল এই নাগরিক ভীড়ে।
কেউ বলে বৃদ্ধটা বেশি কথা বলত না, খুব মেপে মেপে;
কেউ বলে, বড় বেশি জ্ঞান দিত; কেউ বলে, সব যেত চেপে।
বাস্তবে নগরীর সীমান্তে ছোট এক সরাইখানাতে
ক্লান্ত সে মুসাফির রাত'টা পোহালে তার পরদিন প্রাতে -
নগরীর চত্ত্বরে এসে বলে গেল এক সাবধান-বাণী~
"তোমাদের কিছু কথা প্রকাশের বাকি ছিল, তবে আমি জানি;
আমি জানি তোমাদের মাঝে আছে পতঙ্গ - যা মানুষখেকো,
আকাশের রং দেখে ইঙ্গিত পাবে, শুধু প্রস্তুত থেকো !"
'প্রস্তুত থেকো আর সাবধান হও' - বলে কান্নায় ভেসে
বৃদ্ধ সে মুসাফির বলে গেল পাপীদের খুব ভালবেসে।
নগরীর লোকজন হাসি-তামাশায় মেতে উঠে গেল চলে
'পুরাতন পাগলেরই ভাতের অভাব, আর...' ইত্যাদি বলে...
সেই রাতে জোনাকি'র আনাগোণা কমে গেল চাপা উদ্বেগে
ফুল ফোটা থেমে গেল, নদী ছাড় দিল তার চেনা গতিবেগে
নাগরিক লোকজন অস্বস্তির সাথে ফিসফাস করে
টের পেল কিছু, তবে ঘটনাটা শুরু হল তিনদিন পরে
সকাল গড়াতে যে-ই সূর্যটা উঠে এল মাথার উপরে
লাল-রঙা আকাশের লাল রোদ ছেয়ে গেল নগরের 'পরে
ভয়ার্ত জনমনে আতঙ্ক দিয়ে গেল কড়া হাতছানি,
আর মনে পড়ে গেল, কে যেন বলেছিল - 'এই সব জানি!'
আকাশ চমকে ওঠে, পৃথিবীটা কেঁপে ওঠে মেঘ-গর্জনে
সরাইয়ের দরজাতে তক্ষুণি ছুটে গেল সত্তর জনে
'মুসাফির ! মুসাফির !' - চিৎকারে শহরের লোকজন ডাকে,
মুসাফির চলে গেছে, এরপর আর দেখা যায়নিকো তাকে...