১। উপদেষ্টা পরিষদে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ঘরানা অ্যাপ্রুভড এমন সব লোকজনকে রাখা হয়েছে যাদের বয়স ৭০ এর ওপরে, এবং যাদের তেমন কোনো রাজনৈতিক ডিরেকশন, অভিজ্ঞতা বা এম্বিশন নেই। এই উপদেষ্টাদের অধিকাংশ গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো রকম সাফার করেনি, ফলে তাদের সেই বোধ ও উপলব্ধি নেই, এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনৈতিক তাড়না নাই।
২। এই উপদেষ্টারা সরকার চালানোর দাপ্তরিক কাজ ভাঙা ভাঙা ভাবে চালাতে পারতেছেন; কিন্তু আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ককে ভাঙতে তারা অক্ষম। এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে যে রাজনৈতিক দৃঢ়তা দরকার, তা এই টিম দেখাতে পারেনি, পারবে না।
.
৩। ক্ষমতা গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যেই দুটি কাজ করা জরুরী ছিল:
ক) স্পেশাল ব্রাঞ্চকে চিঠি দিয়ে বিমানবন্দরের AvSEC সফটওয়্যারে সব এমপি, আওয়ামী অঙ্গ সংগঠনের প্রধান এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃত্ব ও তাঁদের পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া।
.
খ) বিএফআইইউকে নির্দেশ চিঠি দিয়ে, সব এমপি, আওয়ামী অঙ্গ সংগঠনের প্রধান এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃত্ব ও তাঁদের পরিবারের ব্যাংক একাউন্ট সিজ করে অর্থ উত্তোলন বন্ধ করা।
.
এই দুটো চিঠি দিলে লীগের আর্থিক ক্ষমতা ও তার লোকজনের বিদেশ যাত্রা অনেকাংশে বন্ধ করে দেয়া যেতো। অর্থের সূত্র বন্ধ করা ও দেশের বাইরে যেতে দেওয়া বন্ধ না করায় শেখ হাসিনা ও তার দলকে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
.
.
৪। আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত বিলিয়ন ডলার মালিকানার অলিগারকি গুলোতে হাত দেয়া হয়নি।
.
৫। আওয়ামী প্রপাগান্ডা উৎপাদন করা মিডিয়াতে হাত দেওয়া হয়নি
.
৬। আওয়ামী বয়ান প্রচার করা ক্লালচারাল প্রতিষ্ঠানে হাত দেওয়া হয়নি।
.
৭। বারবার বলা হচ্ছে সরকার ফ্যাসিবাদ বিরোধী, কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের পুরো নেটওয়ার্ক তার ফুল ফিনান্সিয়াল পাওয়ার, সোশ্যাল পাওয়ার, কালচারাল পাওয়ার, ন্যারেটিভ পাওয়ার , মেডিয়া পাওয়ার , অলিগারকির আর্থিক ব্যাকিং নিয়ে অক্ষুণ্ণ আছে।
.
৮। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কেবল ছাত্রলীগ ব্যান করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে কোন ফাংশানাল কাজ আমরা দেখিনি, দেখার সম্ভাবনাও দেখছি না।
.
৯। এই সব নিস্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতার ফলাফল হল আওয়ামী লীগ ভিন্ন নামে ফেরত এসে আমাদের কচুকাটা করার আশঙ্কা থেকে যায়।
.
১০। সংস্কার একটা রাজনৈতিক প্রস্তাব। কোনো সেন্ট্রাল ভিশন ও প্ল্যানিং ছাড়া, পলিটিকাল স্টেকহোল্ডারদের সাথে কোনো ধরনের কন্সেনসাস মেকিং ছাড়াই, শুধু মাত্র কমিটি দিয়ে সংস্কারের সাফল্যের সম্ভাবনা শূন্য।
.
১১। তিন মাস পার হয়ে যাবার পর নতুন সরকারের পক্ষ থেকে কোন রাজনৈতিক ভিশন স্পষ্ট করা হয়নি। এগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এনজিও, সিভিল সোসাইটি আর থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আর স্কিন ইন দা গেম ছাড়া কমিটি প্রধানরা এইসব সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
.
১২। ছাত্রনেতারা বিভিন্ন কমিটির কাজে ইন্টারফেয়ার করছে।
.
১৩। ক্ষমতায় বসে রাষ্ট্রের শক্তির সুবিধা নিয়ে কিংস পার্টি তৈরি করা হচ্ছে।
.
১৪। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, মাদ্রাসার ছাত্ররা আন্দোলনে অংশগ্রহন করার পরও, ব্যাপক কুরবানির পরও তাদের স্টেইকহোল্ডার হিসেবে রাখা হয়নি।
.
১৫। 'মাস্টারমাইন্ড' হওয়ার আলাপ, ছাত্রনেতাদের কেন্দ্রীয় প্ল্যানিং এর মাধ্যমে হাসিনাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এই ফালতু দাবিগুলোর কারণে দেশে বিদেশে থাকা যেসব কোটি কোটি মানুষ এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এবঙ্গ কোন সেন্ট্রাল গাইডেন্স ছাড়া অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে বিভাজন বেড়েছে।
১৬। লক্ষ লক্ষ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে ছাত্রদের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় হাসিনার পতন এবং মাস্টার মাইন্ড হবার দাবির প্রতিবাদ জানিয়েছে।
.
১৬। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বদলে আওয়ামী জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সমাজকে কিছুটা হলেও ইউনাইট করতে পারতো, সেটা এসব ফালতু দাবির কারনে এখন আর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারছে না।
.
১৭। অনেক রেটোরিকাল এবং ভাসা ভাসা 'ইন্টেলেকচুয়ালিটির' আলাপ থাকলেও ফরহাদ মজহারের ফেইল্ড চিন্তার রিহার্সেল বাদে আর কোন রাষ্ট্র চিন্তা বা দর্শন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব দিয়ে নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দূরের কথা, আওয়ামী জাহেলিয়াতের ফিরে আসা ঠেকানো যাবে কিভাবে?
.
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৬