জেন রসির “নিমগ্ন ধ্যানে জেগে থাকার গল্প” ব্যতিক্রমী ঢঙে ঈশ্বর, মানুষ আর প্রেম বিষয়ক উপাখ্যান সৃষ্টি। তার চিন্তার ঈশ্বর মৃত আর মানুষ জীবিত। যুক্তি দিয়ে নিমগ্ন ধ্যানে জেগে থাকার গল্প লিখেছেন। অনেকে লিখাটি পড়ে ভাবনার খোরাক পাবেন।
“ আমি আজ আত্নসমর্পন করতে এসেছি। আমার সব বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে। আমি আমার ঈশ্বরকে ভালোবাসি। তোমাকেও। হয়
আমাকে মেরে ফেলে দাও । না হয় আমাকে আবার জন্ম দাও। তোমার অনুভবে। তোমার স্পর্শে। ভালোবাসায়!” তুবার গলা একটুও
কাঁপে না ।
মল্লিকের বিয়ে- এস এম মামুনুর রহমান আমার প্রিয় লেখকদের একজন। শক্তিশালী তরুন লেখক। তার মুন্সীয়ানা মূলত অনবদ্য ভাষা শৈলী, শব্দচয়ন। মৌমাছি যেমন ফুল ফুলে মধু সংগ্রহ করে তিনিও ঠিক তেমনি দারুন সব শব্দ বিন্যাসে গল্প লিখে থাকেন।ফলে তার লেখা হয়ে ওঠে সুখপাঠ্য। ঋদ্ধ-২ এর সেরা গল্পটি বোধ হয় তার লিখা, শব্দ চয়নে। মাত্র চারমাসের প্রেমের পরিণতি বিয়ে লেখক সাজেয়েছেন গল্প তাই নিয়ে পাঠকরাও করিবেন পাঠ মনে আনন্দ নিয়ে।
তারপর আসি মাহমুদুর রহমানের রক্ত-মাংস-অস্থি-কংকাল...। তার লেখা কাক গল্পটি প্রথম পাঠ করেছিলাম শায়মার অনুরোধে। কাক ব্লগারদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো। তিনি তার লেখা গল্পটি লিখেছেন একদল কুকুর আর তাদের বঞ্চনা , অধিকার আদায় তথা আন্দোলন নিয়ে। বেশ জমিয়ে তুলেছেন। কাক পড়ে নিজেকে কাক মনে হয়েছিলো । এবার নিজেকে স্পার্টা মনে হচ্ছে। গল্পটি বারবার পড়তে হবে। তারপর পুরোপুরি বোধগম্য হবে। লেখাটিতে বারবার পড়ার মেরিট বিদ্যমান। দারুন ম্যাসেজ আছে গল্পে।
সাজিদ উল হক আবির পরিচ্ছন্ন লেখক। তার “কাঁচের দেয়াল” ভাঙবো আমি কেমন করে। তবে ভাঙতে হবে। কল্পনা সরাসরি বাস্তব হয়ে ধরা দিলে কেমন হতে পারে মন? একজন চাইলে এমনটা জীবনে ঘটতে পারে। কিন্তু কিভাবে? পড়লাম আর ভাবলাম।
“ ধরো, দেখতে পেলাম, আমার স্বপ্ন থেকে মানুষটা বাস্তবে এসে আমার সামনা সামনি দাঁড়ানোর পর তাকে আমার আর ভালো লাগছে না, তখন?”
নাজিম উদ্দৌলা এক সময়ের নিয়মিত ব্লগার। সম্ভাবনাময় তরুণ লেখক।তিনি তার গল্প সারপ্রাইজ লিখে সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে সক্ষম হয়েছেন। একটি একটি ভ্রমনকাহিনীও বলা যায় । একটি বাসে যাত্রি মাত্র তিনজন। বাসটি যাবে কক্সবাজার । বাসের মধ্যে বাইরে কেবল সারপ্রাইজ।
গেমচেঞ্জার লিখেছেন বইয়ের দীর্ঘতম গল্প।মির আর সিমির ভালোবাসা আর তার মাঝে বাঁধ সাধেন তার বাবা। তবে সেই বাঁধ সাধা অপরাধ হলেও অপরাধের বিচার দাবী ও অপরাধ। জানতে হলে পড়তে হবে বইয়ের দীর্ঘতম গল্পটি।গল্পটির নাম একটি শিরোনামহীন গল্প।
অলওয়েজ ড্রিম ভালো লিখেছেন। উপমার ব্যবহারে দক্ষ নাঈ্ম ভুইয়া একটি হারিয়ে যাওয়া গল্প এবং তারপর লিখে ঋদ্ধ-২ এর ঋদ্ধতা বজায় রেখেছেন। ঝুম্পা আর টুম্পার বড়িরে চারিদিকে দিন নেই রাত নেই দলেদলে যুবপতঙ্গরা ভিড় জমিয়ে রাখে অগ্নিতে আত্নাহুতি দেয়ার আশায়। কিন্তু ঝুম্পার অগ্নিকান্ড কার জন্য কেউ জানে না ।
শ্রদ্ধেয় জুলিয়ান সিদ্দিকীর যুদ্ধ অথবা মানসাঙ্কের গল্প হিন্দু মণিকাদি আর বয়সে ছোট মুসলিম প্রেমিকের জীবন উপাখ্যান, হিন্দু-মুসলিম সমাজ ব্যবস্থা, বৈষম্য, মুক্তিযুদ্ধ অসম প্রেম বিয়ে দারুন দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন। দক্ষ ও পরিণত লেখকের অনবদ্য সৃষ্টি যুদ্ধ অথবা মানসাঙ্কের গল্প।
প্রিয় কবি কামরুল বশির, দীপন চক্রবর্তী, সুমন কর, আশরাফ মাহমুদ, জাহিদ অনিক, সৈয়দ আরমানুল হক, শাহেদ খান, প্রিয় ত্রিপল খন্ড ত তথা মাহমুদুল হক ইফিতি, নব্য ছন্দের জাদুকর ইমরান হাসান জেসন, শুভ সরকার দারুন সব কবিতা লিখেছেন। রেজওয়ান তানিম লিখেছেন মুক্ত গদ্য, অনবদ্য ।
সেই অন্ধজগত আমাকে দেখায় কোজাগরী চাঁদের মাতাল করা এক বিশ্রী হাসি । ধূসর হঠাৎ সাদা হয়ে ওঠে, আর তাই দেখে জ্বলে জ্বলে ওঠে আমার আহত বন বিড়াল মন। সে চায় এক খন্ড অন্ধকার, ...
এর পর আসি সুপ্রিয় গিয়াস উদ্দিন লিটন । তার লেখা আজ খ্যাংরার গায়ে হলুদ; একটি ভৌতিক রম্য! লিখেছেন বরাবরের মত হাসি রস দিয়ে গায়ে হলুদে সাজিয়ে । ফাগুনের বনে মধুর চাকের মধু লিটন ভাই লিখে গেছেন শুধু।
চাঁদ গাজীও আছেন ঋদ্ধ-২ এ । ডাক্তারদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে আজকেই বোধ হয় শেষ দিন! ট্রাম্প কি এতটাই আতঙ্ক জনক ! কে জানে? চাঁদগাজীর দৃষ্টিতে ভিজতে হবে বৃষ্টিতে। ভালো লিখেছেন চাঁদগাজী।
খাঁচার পাখি বনের পাখি লিখেছেন তানিয়া তাবাসুম । তার গল্পের নায়ক নায়িকাও যেন খাঁচার পাখি বনের পাখি। গল্পের নায়ককে
প্রতিবছর ফারস্ট ইয়ারের একজন ছাত্রীর র্যাগিং এ আই লাভ ইউ বলতে হয়।
পার্থ তালুকদারেরর ইতিহাস /সংস্কৃতি বিষয়ক লেখাটিও মানের বিচারে বেশ ভালো।
আর অসাধারণ লিখেছেন ড. এম এ আলী । তার লিখার শিরোনাম বাঁশ সমাচার: শক্তিশালী এই উদ্ভিদটি হতে পারে সৌভাগ্যের সোপান। আসলে বাঁশ সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে । সর্বাধিক কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে থাকে। সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ । অর্থনৈতিক দিক দিয়েও লাভ জনক। অর্থ পূর্ণ লেখা । সচেতনতা মূলক লেখা। ক্যারি অন ড, এম এ আলী।দারুন সব লেখায় সমৃদ্ধ করুন ব্লগ এবং বই।
জ্যামিতিক কবি মাহমুদুল হক ইফতির কবিতাংশ
এখন জানি
সব কিছু ভেঙে পড়ে
সেই জগতে, আমি বিস্তর হেঁটে দেখেছি
পাপ বলে কিছু নেই
যখন মুখোমুখো শুধু
তুমি আর আমি
পাপ বলে কিছুই নেই....
শাহেদ খানের পাখির বাসা
আমি তোমার দ্বন্দ্ব সমাস; নিজেকে তাই ক্ষান্ত দিলাম ।
সুমন কর লিখেছেন
আমি এখন, নিয়ম করে ইচ্ছে মৃত্যু চাই
থমকে আছে অর্থহীন, এই বাঁচতে চাওয়া।
বুকের মধ্যে কার যেন আওয়াজ শুনতে পাই
তাই, চেনা পথ ধরে আমার হেটে যাওয়া ।
জাহিদ অনিকের বায়ান্ন নম্বর পাতায় বুক মার্ক ব্লগে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো।
পরিশিষ্ট জীবন বৃত্তান্তে রয়ে যায় একটি ভাজ করা পৃষ্ঠা
বায়ান্ন নম্বর পাতায় একটি নীল ফিতার বুকমার্ক ।
স্বপ্নে পাওয়া কবিতা কামরুল বশির লিখেছেন,
আমি শাদা হাঁসটিকে আমার ফিরে যাওয়া বন্ধু ভেবে নিই-
আ্মি জোছনাকে হেমন্ত ভেবে আবারও নিবন্ধিত হই আলো অন্ধকারের খেলায় ।
ছন্দের যাদুকর কি করি আজ ভেবে না পাই লিখেছে
তুমি ছাড়া বাচবোনা
তুমি জান, তুমি প্রাণ
তোমার সর্দি কফেও
পাই গোলাপের ঘ্রাণ।
ইনিয়ে বিনিয়ে লিখি
এমনি আবেগে;
সাধ্যিটা আছে কার
পড়ে যাবে রেগে?
ক্লাশ শেষে শায়মারে
চামে দিনু গছিয়ে
একি,দেখি ! হারামিটা
পড়ে ওঠে চেঁচিয়ে!!
...।
সিনিয়র আপু এক
থাকে পাশে, নাম বৃতি;
সুচিত্রা ফেল যেনো
চেয়ে থাকে ইতি উতি।
সম্পাদকীয় লিখেছেন শায়মা হক। কভার পেজে লিখা
“দিয়ে গেনু বসন্তের গান খানি
বরষ ফুরায়ে যাবে- ভুলে যাবি জানি”...
আবার আসিবে ফাল্গুন পুন; তখন আবার শুনো
নব পথিকেরই গানে নূতনের বাণী ।
বই টি উৎসর্গ করা হয়েছে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি। প্রচ্ছদ গড়েছেন ইশতিয়াক অয়ন। প্রকাশক কবি নীল সাধুর এক রঙ্গা এক ঘুড়ি।
শায়মা হক তার উৎসর্গে লিখেছেন আজকের এই ব্লগার সংকলন ঋদ্ধ এর উদ্যোক্তা বৃতি হক আর আমার মাঝে জীবনে কখনও দেখা হবে কিনা জানি না তবু এইি ঋদ্ধের কল্যাণে আমরা এক সুতায় গাঁথা হয়ে থাকবো চিরদিন। ঠিক তেমনি সকল লেখকের সঙ্গেও বাধা পড়ে থাকবেন। উল্লেখ্য এটিতে আমার কোন লেখা নেই। শায়মারও নেই।
কতিপয় ব্লগারের সম্মিলিত প্রয়াস বৃথা যেতে পারে না । ঋদ্ধ-২ যাদের বাঁধনে জড়ালো তাদের বন্ধন অটুট থাকুক। ঋদ্ধ-২ ভিন্ন ভিন্ন লেখকদের লেখার সমন্বনয়ে বিচিত্রতায় অনবদ্য সৃষ্টি। তাই এক ঘেয়েমি মুক্ত। ভিন্ন ভিন্ন আমেজের স্বাদে মোড়া দারুন মজার ককটেল ।বইটি মানের বিচারে অতীব উচ্চ মানের । আশা করি বইটি পাঠক প্রিয়তা পাবে। নতুন নতুন লেখকদের অনুপ্রাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করবে। ঋদ্ধ দিন দিন আর সমৃদ্ধি লাভ করবে। এটি অবসর সময় কাটানোর দারুন একটি সঙ্গী হবে। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। বই পাঠ পাঠকের শব্দ ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে, বিনুদিত করে আর জ্ঞান ভান্ডারকে আরো বৃহৎ করে তিুলে। প্রথম হলেও শায়মা হক আর বৃতি হকের সম্পাদনা প্রশংসার দাবী রাখে । এটি টিকে থাকুক।সমৃদ্ধ লাভ করুক দিনে দিনে।
সব শেষে আমার একটি অকবিতা জুড়ে দিলাম
কোন সে কারাগার?
আদুরিগো বন্দী তুমি—বল সোনা এইবার,
কতো যে কড়া নাড়ি— তবু তোমার রুদ্ধ অবনী
মনতো মানে না আর।
কখন হবে শেষ — এ অশেষ প্রতীক্ষার!
জগদ্দল পাথরের মতো
কোন চোরাবালিতে আটকে থাকো
উঠতে পারো না আর।
রূদ্ধ কপাট খোলো, ঘরের চাবি
কোথায় আছে বলো? দেহের চাবি
আছে আমার কাছে। মনের চাবিটাও.
ভয় পেয়োনা কথা দিলাম ক্লেশ হবে না
ভাসাও আমার নাও—
এইখানে বহিছে ফুলেল বাতায়ন
আমাদের ভালোবাসা আশার সাতকাহন।
আকাশলীনা,
ফাগুণের আগুন হয়েছে সারা
এখন বহিছে চৈত্রের প্রখর খরা;
আমাদের পই পই প্রেম
আজিকে কেনগো দিশেহারা ?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৪