হৃদয়ে বাংলাদেশ । কত সুন্দর একটি নাম !বইটির লেখক জনপ্রিয় ব্লগার শায়মা হক । ব্লগে যিনি একাধারে অপসরা ,বরুনা আর শায়মা তিনটি নিকে করে গেছেন একের পর এক জনপ্রিয় সৃষ্টি।
লেখকের কথার কিয়দংশ "জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশি । আমাদের ইতিহাস,সংস্কৃতি ভ্রাতৃত্ববোধ,মমতা বক্ষে ধারণ করেই আমাদের বেড়ে ওঠা । আমাদের জাত পাত ধর্ম বর্ণ সম্পর্কে থাকতে হবে সঠিক ধারণা ।" তিনি যথার্থই বলেছেন ।
আরও বলেছেন "আজকের শিশুদের জন্যই আমার এই প্রয়াস। শিশুরা যেন ছড়ায়,ছন্দে বা কবিতায় জানতে পারে ভাষার জন্য তাদের পূর্বপুরুষদের অবদানের কথা।তারা যেন গরিবদের প্রতি সদয় ব্যবহার শেখে ,সকল মানুষ ,সকল পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রকৃত মানুষ হিসেবে বড় হয়ে ওঠে এই আমার চাওয়া ।" চমৎকার চাওয়া ।
তার চাওয়া দেশ আর দশের জন্য সন্দেহাতীত ভাবে মঙ্গলজনক । তার এই চাওয়ার প্রতিফলন দারুন ভাবে ফুটে ওঠেছে তার এই বইটির কনটেন্টে । কবিতাগুলো শিরোনামগুলো পড়লেই বুঝা যাবে লেখক শতভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে তার চাওয়া বাস্তবায়ন করার প্রয়াস চালিয়েছেন ।
তিনি ছড়া লিখেছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধ নিয়ে,জাতীয়তা নিয়ে ,স্বাধীনতা নিয়ে , জাতীয় কবিকে নিয়ে ,বাংলাদেশের ঋতু নিয়ে বাংলাদেশের ফল নিয়ে বাংলাদেশের পিঠা নিয়ে পহেলা বৈশাখ নিয়ে ,ঈদের খুশি নিয়ে শীতবস্ত্রদান নিয়ে ,বাংলাদেশের পাখি শীতবস্ত্র দান নিয়ে গরীবদের প্রতি ব্যবহার নিয়ে ,বাংলাদেশের খেলা নিয়ে বঙ্গবন্ধু নিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
বাংলাদেশের দেশজ উপাদান গুলিকে দারুন ছন্দ দিয়ে শব্দ সুষমা দিয়ে অলংকৃত করেছেন প্রতিটি ছড়া কবিতা । সত্যি শায়মা ব্লগের মত তার প্রকাশিত প্রথম বইটি দিয়ে দায়িত্বশীলতা আর দেশপ্রেমের পরিচয় দিলেন ।
শিশুদের বইয়ের অপ্রতুলতা কারো অজানা নয় । সেই অপ্রতুলতায় লেখকের প্রচেষ্টাকে শ্রদ্ধা জানাই ,সাধুবাদ জানাই । শিশুকাল থেকেই একজন মানুষের ভিতরে তার সংস্কৃতির সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে দেয়া ,জাতীয়তবোধের অনুপ্রবেশ ঘটানো খুবই দরকার। সেদিকটায় আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তা্ইতো সুপ্রিয় শায়মার প্রথম বইটি অনবদ্য হয়েছে ।
যিনি সাজুগুজো করতে এত ভালবাসেন তার বাংলাদেশের খেলা শিরোনামের খেলার তালিকা দেখলেই বুঝে যাবেন । এক্কা দোক্কা ,গোল্লাছুট , বউচি, হা ডু ডু ,কানামাছি ,ওপেনটি বায়োস্কোপ । খেলাগুলো শুধু খেলা নয় এগুলো আমাদের নিয়ে যাবে একেবারে পল্লী অঞ্চলে গ্রাম বাংলায় । এগুলো আসলে আমাদের সংস্কৃতির অংশ । শায়মা আপনার দেশপ্রেম মুগ্ধ করবে সবাইকে ।
শায়মা লিখেছেন বাংলাদেশের পর্যটন
অবারিত সাগরে অনাবিল হাওয়া
দিগন্ত ছুঁয়ে যেথা করে আসা যাওয়া
প্রকৃতির সাথে মাতে উত্তাল স্রোত
ঘুরে এসো সেখান থেকে পতেঙ্গা সৈকত ।
...........................................
এভাবেই দারুন ছন্দে লিখে গেছেন একের পর একের কবিতা ।
তার প্রথম কবিতাটি ষোলই ডিসেম্বর
রোজসকালে পাখির ডাকে ভাঙে আমার ঘুম
মায়ের ভাষায় মাকে ডাকি, মা চোখে দেয় চুম।
লাল সুরুযের আলো মেখে ভোরের গান গাই,
সবুজ সজীব হাওয়ায় ভেসে প্রান্তরেতে ধাই ।
.........................................
প্রতিটি শব্দ থেকে দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবোধ ঠিকরে ঠিকরে বেড় হচ্ছে যেন । বইটির ২য় কবিতা ঐ পতাকার মানে
লাল সবুজের গড়া মোদের বাংলাদেশের কেতন,
কি তার মানে জানো তুমি,করো কি তার যতন?
....................................................
পেকামাকড় কবিতার একেবারে শেষে দিকে লেখক যে মনে প্রাণে পরী ধরা পরে গেছে
.................................
প্রজাপতির কথা আমি
কী বলবো আর
রঙিন পাখায় ফুল পরীটা
সেও মেনেছে হার ।
হয়তো সে এক নিজেই ফুল
আর হয়তো বা ফুলপরি
রূপ দেখে তার ঘুরছে মাথা
আহা মরি মরি ।
বইটির সর্বশেষ কবিতা বাংলাদেশের ফুল শেষ হয়েছে এভাবে
...........................................................
রজনীগন্ধা ,পদ্ম ,চাঁপা হাজার ফুলের মেলা
ফোটে তারা আমার দেশেই সকাল সন্ধ্যা বেলা।
বইটির আদ্যোপান্ত পড়ে মনে হলে শায়মা হক চমৎকার সুঘ্রাণ সম্বলিত একটি ফুল । এই ফুল খুব সহজে জন্মায়না । এমন দুর্লভ ফুলের যতন করা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ । শায়মা আপনার ছন্দবোধ চমৎকার । আপনার শিশুদের প্রাত ভালবাসা অকৃত্রিম আর আর আপনার দেশপ্রেম জাতীয়তাবোধ অসাধারণ । যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুন আর এভাবেই দেশের একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আপনার অমূল্য সেবা দিয়ে যান সুঘ্রাণ বিলিয়ে যান এই কামনা থাকলো ।
প্রতিকথার ব্যানারে হানিফ রাশেদীনের অনবদ্য প্রকাশনা । বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। অক্ষর ও পৃষ্ঠাসজ্জা আবু সাঈদ তুহিন । বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলাদেশের সকল শিশু।বইটির মূল্য মাত্র ৮০ টাকা ।
বইটি শিশুদের জন্য চমৎকার উপহার হবে। শিশুরা বইটি পাঠ করে শেকড়ের সন্ধান লাভ করবে । তাদের অভিভাবকরাও এটি পাঠে একবার হলেও দেশকে নিয়ে ভাববেন । বইটির নামকরণ শতভাগ স্বার্থক । আমার বিচারে লেখক শায়মা হক দারুন ভাবে সফল হয়েছেন তার প্রচেষ্টায় ।
বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর হৃদয়ে বাংলাদেশ হোক । দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বাংলাদেশ হোক । থ্রি চিয়ারস শায়মা । থ্রি চিয়ারস ব্লগের পরী । আপনি শুধু বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী নন ; একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিকও বটে ।আপনার বইটি বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক
এই কামনা থাকলো ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:৪৪