চোখ থাকিতেও অন্ধ: এই গানটি খুব সম্ভবত বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের কন্ঠে শুনেছিলাম। ইহা একটি প্রেমের সংগীত হবে হয়তো। কিন্তু হটাৎ এই গান পড়ছে কেন ? তাও শুধু প্রথম লাইনটাই মনে পড়ছে বারবার। একটি নিদিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র কে হটাৎ আমার এই গান টি মনে পড়ে গেল। তাই নিয়া ব্লগে প্যাচাল পাড়তে আসিলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড তিনদিনের জন্য ভারত সফরে এসেছেন। ভারত এই মওকার অপেক্ষায় ছিলো এতদিন। অনেক চুদুরবুদুর করেও বাংলাদেশ কে নিয়ে তেমন সুবিধা করতে পারে নাই। তুলসী গ্যাবার্ড এর সাথে ভারতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাতে নিশ্চয়ই বাংলাদেশ নিয়ে ভুজুংভাজুং বুঝিয়েছে ভারত। কিন্তু তুলসী দাস এত ক্ষমতাশালী দেশের গোয়েন্দা প্রধান হয়ে কি ভারতের মতো গুজব বাজ দেশের কথা কে গুরুত্ব দিতে হবে ?
তুলসী গ্যাবার্ড ভারতের এনডিটিভি ও এএনআই নামক টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন। ইহা কেমন কথা হইলো ? নোবেল লরিয়েট এখন দেশের ক্ষমতায় আছেন। যুক্তরাষ্ট্র সার্বক্ষণিকভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বিগ্ন হওয়ার কি আছে ? তুলসী সাহেবা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন মন্ত্রীসভার সাথে বাংলাদেশের ইন্টেরিম সরকারের অতি সাম্প্রতিক কালে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই চার্জ দি আফেয়ার্স একজন কে পাঠিয়েছে রেখেছে দেশের অভ্যন্তরীণ সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে। বাংলাদেশের ব্যাপারে এ টু জেড সকল খবর যুক্তরাষ্ট্র পাচ্ছে বিভিন্ন সোর্স কাজে লাগিয়ে। তাহলে তুলসী সাহেবা এমন কথা কেন বলছেন ?
তুলসী গ্যাবার্ড সাক্ষাৎকারে ' সন্ত্রাসবাদ ' ও 'খেলাফত' দুইটি বিষয়ে বারবার বলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবী জোরালো হচ্ছে যা বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ উস্কে দিতে পারে বলে তুলসী সাহেবা আশঙ্কা করছেন। তুলসী গ্যাবার্ড হটাৎ খেলাফতের কথা বলছেন কেন ? বাংলাদেশে খেলাফত চায় এমন জনগোষ্ঠী এখন কারা মাঠে আন্দোলন করছে ? এরজন্য আমাদের মার্চ মাসের সাত তারিখ হিজবুত তাহরীরের লংমার্চ ফর খেলাফতের কথা সবার আগে মনে আসে। সরকারের কাছে তথ্য থাকার পরও কালো তালিকায় থাকা দলটি কিভাবে মিছিল করেছে তার জন্য সাধারণ জনগণের উচিত সরকার কে প্রশ্ন করা। যদি জবাব দিতে না পারে তবে দেশের ক্ষমতায় থেকে কি করবে ? অন্তত শতাধিক মাজার ভাঙা ও ওরস শরীফ জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, হামলা হয়েছে। এই হামলা সরকারের আস্থাভাজন সংগঠন গুলোই করে বেড়াচ্ছে। সরকার তাই অবলার মুখই বল নীতি গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাংলাদেশে চরমপন্থী উথানের লক্ষণ বলে মনে করছেন তুলসী গ্যাবার্ডের মতো মানুষজন।
তুলসী গ্যাবার্ড সাক্ষাতকারে বলেছেন বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে বলে নাকি তিনি রিপোর্ট পেয়েছেন। উনার কাছে কারা এমন গাঁজাখুরি রিপোর্ট পাঠাচ্ছে আল্লাহ মালুম। এবার অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে সামান্য পরিমাণে সংখ্যালঘুদের উপর ক্ষমতার পট পরিবর্তনে আঁচ পড়েছে। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে হয়তো রিপোর্টদাতারা সেগুলো খুজে বের করে তুলসী সাহেবার নিকট পাঠাইসে।
তুলসী গ্যাবার্ড এমন সময় ভারতে এসেছেন যেখানে গত সপ্তাহ থেকে হোলি উৎসব চলছে। হোলি খেলা কে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু মুসলমান দের সাথে দাঙ্গা হচ্ছে সনাতনী দের। তুলসী সাহেবার চোখে এসব সংখ্যালঘু ঘটনা ভারতে এসেও নজরে পড়েনি। কিন্তু বাংলাদেশের খবর তিনি ঠিকই তথ্য পাচ্ছেন ভিন দেশ থেকে। সম্ভবত ভারতের দাদাদের উগ্রবাদী মনোভাব তুলসী গ্যাবার্ড মনে মনে সাপোর্ট করেন। উনাত কেবল আশঙ্কা কেবল মুসলমান দের নিয়ে।
বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতায় আসীন সরকারের দূর্বলতা সমূহ তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। বাইরের বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশে চরমপন্থী দের উত্থান হচ্ছে বলে আশঙ্কা করেছে। সরকার এর বিপরীতে কোন শক্ত পদক্ষেপ নিতে তো পারেই নি উল্টো সরকারের কোন কোন অংশের বিরুদ্ধে এসবে মদদ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম থেকেই তুলসী গ্যাবার্ডের কনসার্নের বিষয়াদি সমাধানে সরকার যদি যথেষ্ট সতর্ক হতো তবে জল এতদূর গড়ায় না। কিন্তু কে শোনে কার কথা !
https://www.bbc.com/bengali/articles/cj4n070welzo
উপরের লিংকে ভারতের হলি উৎসবে দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি বাংলা রিপোর্ট করেছে। কিন্তু তুলদী গ্যাবার্ডের মতো মানুষেরা এসব পড়ে দেখার সময় নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৩:০৪