কেন আপনি নাস্তিক? ধর্মকে কেন বিশ্বাস করেন না?
ডয়চে ভেলে থেকে প্রশ্নটি করা হয়েছিলো, নাস্তিক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে।
তো, উনি মূলত বলতে চেয়েছিলেন যে, উনি সবগুলো ধর্মগ্রন্থ পড়েছেন, মানার জন্য নয়; জানার জন্য এবং যতই পড়েছেন ততই নাস্তিক হয়েছেন।
অার তাছাড়া ঈশ্বরের প্রমাণ এখনও কেউ নাকি দিতে পারেনি । তাই তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
লক্ষ্যনীয় বিষয়ঃ
মানুষ নাস্তিক হয় মূলত-
(১) নিজেকে একজন ব্যতিক্রমী হিসাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য।
(২) ধর্ম একটি নিয়ন্ত্রীত জীবনব্যবস্থার জন্য কিছু বিধিনিষেধ অারোপ করে থাকে। যেটা থেকে বেরিয়ে অাসার জন্য এই পথ খুঁজে নেয়। এবং খানিকটা রিলাক্স বোধ করে।
(৩) ধর্মকে যারা মনে করে এটা প্রাচীন যুগের কল্পকাহিনী, অাধুনিক যুগে অামরা অনেক স্মার্ট,শিক্ষিত, জ্ঞানী। মূলতঃ এরা অহংকারবোধ থেকে নাস্তিক হয়ে যায়।
(৪) অার একটা হলো, যারা বিভিন্ন নাস্তিকতা বিষয়ক বই পড়তে পড়তে; পরে নাস্তিকতার দিকে ঝুকে পড়ে। তারা মনে করে অমুক বিজ্ঞানী, তমুক বিখ্যাত লেখক, ইউরোপের অমুক দার্শনিক যখন বলেছে তখন মনে হয় সঠিক বলেছে।
মূলত যারা নাস্তিক তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে ইসলামকে অাক্রমন করা। অার এখানে হিট হলেই ইউরোপ, অামেরিকার দরজা খুলে যায়।
যেটা না বললেই নয়ঃ
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মহাবিশ্ব একটা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনেই চলছে। যার সামন্যতম ব্যত্যয় হলেই সব বিশৃংখল হয়ে যাবে অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সাথে সাথে এটাও বিশ্বাস করেন, এই মহাবিশ্বের একটা শুরু অাছে এবং শুরুটা হয়েছে একটা মহা বিষ্ফোরনের মাধ্যামে।
অাইনস্টাইনের একটা বিখ্যাত সূত্র অাছে E=mc2. একেবারেই সংক্ষেপে বললে বলা যায়, পদার্থ যে অনু-পরমানু দিয়ে গঠিত, সেই অনুর একটি সাবঅ্যাটমিক পার্টিকেলের ভরকে যদি হঠাৎ এনার্জিতে রুপান্তরিত করা যায় তবে সেটা অবিশ্বাস্য রকম এনার্জি সৃষ্টি করতে পারে। অর্থাৎ এনার্জি হবে, অালোর যে গতি অাছে তার বর্গকে যদি ঐ সাবঅ্যাটমিক পার্টিকেলের ( প্রোটন) ভরকে দিয়ে গুন করলে যা হয়। এটা জুল(J) অাকারে প্রকাশ করা হয়। জুলটা হচ্ছে মূলত কাজ। অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর এক নিউটন বল প্রয়োগের ফলে যদি বস্তুটির বলের দিকে এক মিটার সরণ হয় তবে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে এক জুল বলে।
পারমানবিক বোমা, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যার বাস্তব প্রয়োগ ক্ষেত্র। অাইনস্টাইন সূত্রটি অাবিস্কার করা মানে এই নয় সূত্রটি অাগে ছিলোনা। উনি কি করলেন, পদার্থের ধর্মটাকে ব্যবহার করা শিখিয়ে দিলেন। এক্ষেত্রে বলা যায়, একটা ধর্মকে(পদার্থের) ডিসকভারী করে দিলেন।
পদার্থের যে ধর্ম, সেটা নিজে নিজে প্রাপ্ত হয়নি। হওয়াটাও যুক্তিযুক্ত নয়। একটা সুক্ষ নিয়ম( যেটা বিশৃংখল নয়) এমনি এমনি তৈরী হয়ে যাবে এটা হতে পারেনা; সম্ভবও নয়। এই যে স্বকীয় ধর্ম, নিয়ম এটাকে ঐ পদার্থের ভীতর সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। এটাকে অামরা কনভার্ট, ডাইভার্ট করছি মাত্র।
একটা বিষ্ফোরণ ঘটানোর জন্য কিছু পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির দরকার হয়। এটা যদি কারো হস্তক্ষেপ ছাড়া হয় তবে সেটা বিশৃঙখল হতে বাধ্য। ধরি, চন্দ্র, সূর্য, তারকা, অামাদের পৃথিবীসহ অসংখ্য গ্রহ, উপগ্রহ একসাথে মিশে ছিলো। হঠাৎ মহা বিষ্ফোরনের মাধ্যমে এগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে গেল। শুধু ছড়িয়ে গেলনা; একটা সুশৃংখল নিয়মের মধ্যে অাবর্তিত হতে থাকলো এবং সেটা দুই এক দিনের জন্য নয়, কোটি কোটি বছর ধরে সেই নিয়ম মেনে চলছে। হস্তক্ষেপ ছাড়াই। এটা যুক্তির ভীতর পড়েনা। কেউ তার নিজ নিজ কক্ষপথ থেকে বের হতে পারছেনা কেন!!!
"মানুষ কি নিজে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে? মানুষ কি আকাশগুলো এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছে?
না! ওদের একেবারেই কোনো জ্ঞান নেই। [আত-তুর ৫২:৩৫-৩৬]
উপরের সূত্র ধরেইঃ
অামাদের এই অতিক্ষুদ্র পৃথিবী টিকে থাকার জন্য হাজারো শর্ত মানতে হয়। এই শর্তসমূহ পারফেক্টভাবে সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি!!!!!!
*সূর্য থেকে পৃথিবীর যে দূরত্ব, সেটা একেবারেই পারফেক্ট । দূরত্ব কম হলে অাগুনে ঝলসে যেতাম; বেশি হলে বরফে ফ্রিজ হয়ে মরে যেতাম। শুধু অামারা নই, পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী, গাছপালা এমনকি কোন জীবানুও বেঁচে থাকা সম্ভব ছিলোনা।
* চাঁদটার অবস্থানটা যদি কম বেশি হত তবে হয় প্লাবনে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত না হলে ক্ষরায় সব শুকিয়ে যেত।
* সূর্যের অালো যদি সরাসরি পৃথিবীতে অাসতো তবে অামাদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব ছিলোনা। বায়ুমন্ডলের স্তরগুলো ক্ষতিকর রশ্মি থেকে অামাদের প্রটেক্ট দিচ্ছে।
* পৃথিবীর যে ঘূর্ণন গতি( ঘন্টায় ১৬৭৫ কিলোমিটার) সেটা যদি ১ সেকেন্ডের জন্য ব্রেক দেয় তবে মানুষ মহাশূন্যে বুলেটের গতিতে হারিয়ে যাবে। শরীরের মাংশ হাড্ডি থেকে অালাদা হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর অভ্যান্তরে যা অাছে তা বেরিয়ে অাসবে। সাগর, নদী, গাছপালা সবকিছু উপরের দিকে উড়তে থাকবে।
* সুমুদ্রের পানি বাষ্পাকারে মহাশূণ্যে হারিয়ে যাচ্ছেনা; যাওয়ার সুযোগও নাই। একটা সঠিক উচ্চতায় জমাট বেঁধে পৃথিবীর বুকে মাটিকে সিক্ত করছে, সমস্ত গাছপালা, প্রানী পাচ্ছে তার জীবন।
* প্রকৃতির একটা ডিজাইন অাছে। প্রত্যেকটা প্রানী, গাছপালা, গাছের ফল, ফুল একটা চমৎকার ডিজাইন সমৃদ্ধ । শুধু তাই নয়; মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এগুলো পারফেক্টভাবে তৈরী হচ্ছে। এগুলো শূন্য থেকে সৃষ্টি হওয়ার উদ্দ্যশ্যে কি থাকতে পারে!!
* পৃথিবীর একটা নিদিষ্ট অভিকর্ষজ ত্বরণ অাছে যেটা না থাকলে অামারা পৃথিবীর বুকে চরাফেলা করতে পারতাম না। কোন জলযান সুমুদ্রে চলতে পারতোনা। হয়তো অামরা ভেসে বেড়াতাম।
একটা বিষয় লক্ষ্য করি-
মানুষের দেহ থেকে মাংস অালাদা করলে একটা স্ট্রাকচার অামরা পাই। সহজে একে অামরা কংকাল বলি। উক্ত স্ট্রাকচার কোন অটো মেড প্রকল্পে সৃষ্টি হয়েছিলো এটা নাস্তিকদের জানার বিষয় নয়। উনাদের বিষয়টা হলো বানরের স্টাকচার থেকে পরবর্তিতে মানুষের স্টাকচারে বিবর্তিত হয়েছে। একটা বিষয় হলো, স্ট্রাকচারের ভীতর যতগুলো অঙ্গ অাছে সেই অঙ্গের কার্যপদ্ধতি, সমস্যা সৃষ্টি হওয়া , সমস্যার সমাধানকল্পে মানুষ অনেক গবেষণা করছে অনবরত। কিন্তু নাস্তিকরা বলতে পারেনা, এই ডাইমনেশনে সেটিং হওয়ার উদ্দেশ্যটা কি? কেনইবা এগুলো এত সুক্ষ এবং সুনিয়ন্ত্রিত হলো। এবং এই অঙ্গগুলি এক একটা নিদিষ্ট কাজ করে চলেছে কেন? তারা শুধু নিয়ম বলতে পারে কিন্তু নিয়ম এবং নিয়ম পালন করার নিয়ামকের উৎপত্তি সম্পর্কে না জানার ভান করে বসে থাকে।
মানুষের স্টাকচারে হাতের অাংগুলে তিনটি, কব্জিতে একটি, কনুইয়ে একটি, বডির সাথে একটি পুরা হাতের একটি, কোমরে একটি, হাডুতে একটি, ঘাড়ে মুভমেন্টের জন্য, পায়ের অাংগুলে কব্জা লাগানোর উদ্দ্যেশ্য কি? মেরুদন্ডের হাড়গুলো ছোট ছোট অংশ জোড়া কেন? এগুলোর একটি ডাইমেনশন কম বা বেশি হলে মানুষ স্বাভাবিক জীবন অস্বাভাবিক হতো।
মানুষের মস্তিষ্ক, চোখ, কান, নাক, হৃদপিন্ড, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, পাকস্থলি একটি জটিল এবং সুশৃখংলভাবে কাজ করে চলেছে ঠিক যন্ত্রের ন্যায়। এটা কোন পরিকল্পনাবিহীন সেটিং নয়। হওয়া সম্ভবও নয়। এগুলো কিভাবে সৃষ্টি হলো; তার কোন উত্তর নাস্তিকদের নিকট নাই। তারা খুব বেশি দূর হলে বলতে পারেন, এগুলো বিবর্তনের ফল। তার জন্য অাবার তারা নিজেদের বানরের বংশ হিসাবে পরিচয় দেন। সামান্যতম লজ্ঝা তাদের ভীতর কাজ করেনা।
মূল কথা, পুরো মহাবিশ্ব এবং অামরা যারা মানুষ এগুলো একটা মহাপরিকল্পনার ফল। শৃংখলা কখনো এমনি এমনি সৃষ্টি হয়না। মূলতঃ নাস্তিকদের অন্তর অাছে কিন্তু অন্তরটা অালোকিত নয়। এরা Educated কিন্তু Wise নয়।
যেদিন এরা ল্যবরেটিতে ঈশ্বর/অাল্লাহ প্রমাণ করতে পারবে সেদিন এরা বিশ্বাস করবে। নাউযুবিল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০