আগের পর্বগুলি পড়ার জন্য নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি।
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব - ২)
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব -৩)
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। (পর্ব -৪)
জার্নি বাই নৌকা....উইথ দালাল ....টু ইতালি। - (পর্ব ৫)
শেষ পর্ব
রঞ্জু পুলিশ ষ্টেশনে বসে আছে প্রায় ২ ঘণ্টা হচ্ছে।তারা রঞ্জুর ব্যাপারে কম্পিউটারে কি যেন খুজছে।আর কি একটা ব্যাপারে ফোনে কথা বলছিল।তাকে শুধু দুয়েকটা প্রশ্ন করেছিল কিন্তু ভাষা বুঝতে না পারার ভান করে জবাব দিতে পারেনি। এর পরপরই একজন পুলিশ অফিসার এসে তাকে একটা সেলুনে নিয়ে গেলো।দেড় ঘণ্টা সময় নিয়ে তারা রঞ্জুর চুল দাড়ি কেটে পরিস্কার করে দিলো।
রঞ্জু আয়নাতে নিজের চেহেরা দেখে নিজেয় চমকে গেছে।আগের চেয়ে অনেক রোগা হয়ে গেছে কিন্তু চুল কাটার পরে তার কেন যেন ইউনিভার্সিটির কথা মনে পড়ে গেলো। কি প্রানবন্ত,উচ্ছল দিন গুলো ছিল। আজ নিজেকে ঠিক তেমনই প্রানবন্ত মনে হচ্ছে।
পুলিশ আবার যথারীতি তাকে থানায় নিয়ে গেলো।এবার শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ।সে তাদের কথা কিছুই বুজতে পারছিল না।একজন শুধু ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংলিশে জিজ্ঞেস করছিলো তারা কোন জায়গা থেকে এসেছে, কয়জন ছিল? রঞ্জু বুঝতে পারলো তার ট্রলারের সবাই ধরা পরে গেছে। ওকেও সেই ট্রলারের লোক বলে সন্দেহ করছে। রঞ্জু কিছু না বুঝার ভান করে চুপচাপ বসে রইলো।
রঞ্জুর মাথাই এখন অবিরাম চিন্তা ঘুরছে। দেড় লাখ টাকা খরচ করে,জীবন বাজী রেখে প্রায় এক মাস যাবত ট্রলারে করে এখানে এসেছে জেল এ থাকার জন্য না।সব চেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হল তারা নাকি এইসব ট্রলারে করে আসা লোকদেরকে গ্রেপ্তার করে আবার ট্রলারে করে মধ্য সমুদ্রে রেখে আসে। ভাবতেই তার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।
হটাত তার মনে পড়লো সেই মেয়ে ২ টার কথা, যারা তাকে বাস ষ্টেশনে খাওয়া, টাকা আর ফোন নম্বর দিয়েছিল।একটু ভেবে, চিন্তা করে সে পুলিশকে নম্বরটি দিলো। পুলিশ সাথে সাথে ফোন করলো সেই নম্বরে। ফোন করার ২ ঘণ্টার মধ্যে মেয়ে ২টি হাজির। সাথে নিয়ে এসেছে আরও ৩ জন পুরুষ।১ জন মধ্য বয়স্ক আর ২ জন তরুন।তারা এসেই মেয়েটি আর একটি ইয়াং ছেলে রঞ্জুর সাথে কথা বলছে আর বাকি তিনজন পুলিশের সাথে কথা বলছিল।পুলিসের সাথে কি ব্যাপারে যেন একমত হতে পারছে না। বয়স্ক লোকটাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে তার অফিসিয়াল পাওয়ার আছে। আর তরুন গ্রুপটাকে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া বলে মনে হল।তরুন ছেলেদের থেকে একজন আর পুলিসের একজন এসে তাকে জিজ্ঞেস করলো তার নেটিভ কান্ট্রি কোথায়? রঞ্জু সহজ সরল ভাবে বলল ইন্ডিয়া।ইটালিতে কিভাবে এলো, কাগজপত্র এসবের ব্যাপারে জানতে চাইলো। রঞ্জু বলল, দেড় বছর ধরে এখানে আছে।আগে অন্য সিটিতে ছিল এখন কাজের খোঁজে এই শহরে এসেছে একমাস হচ্ছে। টাকা-পয়সা কিছু নাই,ভ্যাগাবন্ড লাইফ। কাগজ পত্র কিছু আছে নাকি জিজ্ঞেস করলো।জবাবে সে শুধু না বলে মাথা নাড়ল।
পুলিশ আবার ঐ ভদ্রলোকের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করলো। এখন ভদ্রলোকের সাথে রঞ্জুর সাথে থাকা ছেলেমেয়েও যোগ দিল।
অবশেষে পুলিশ টেম্পোরারি রেসিডেন্সের একটা কাগজ দিয়ে ওই বয়স্ক ভদ্রলোকের জিম্মায় তাকে ৬ মাসের জন্য পারমিট দিলো। এবং বলল যে, এই সব অবৈধ অধিবাসিদের জন্য সরকার খুব শীগ্রই একটা ডিসিশন নিবে। until that u r safe…..
রঞ্জু তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।এত সহজে তারা তাকে ছেড়ে দিলো? তার এই অবস্থায় বাংলাদেশের পুলিসের কথা মনে পড়ে গেলো।
ওই মেয়ে ২টি তাকে ২ ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।ছেলে ২টি হচ্ছে মেয়েটার কাজিন আর লোকটা হচ্ছে তাদের আঙ্কেল। তারা এখানে ভেকেসন কাটাতে এসেছে। আর ২ দিন পরই চলে যাবে। মেয়েটার বাড়ি হচ্ছে রোমে। রঞ্জু কোনোদিন যদি ওখানে যায় তবে অবশ্যই যাতে ওর সাথে দেখা করে এই কথা আদায় করে ছাড়ল। এরপর তাদের সাথে রঞ্জু আরও অনেকক্ষণ ছিল। পরে তারা তাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। রঞ্জু এখন একা, স্বাধীন এবং সে দাড়িয়ে আছে ইটালিতে।
এর পর অনেক কাজ করেছে, ছেড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে মানুষের শরীরে ট্যাঁটু লাগানোর কাজ শুরু করলো।মোটামুটি ভালো ইনকাম, স্বাধীন কাজ।
এর পরপরই ইটালি সরকার ঘোষণা দিয়ে সকল অবৈধ অধিবাসিদেরকে বৈধ করে নিয়েছিল।
রঞ্জু এখন বৈধ নাগরিক। ৪ মাস আগে প্রায় সাড়ে চার বছর পর দেশে এসেছে ছুটি কাটানোর জন্য। তার মা আর ভাবির মধ্যে এখনও ঝগড়া হয়,আর রঞ্জু দেখে দেখে হাসে। বাবা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে গেছে। বাবার নামে চট্টগ্রাম শহরে একটা জায়গা কিনেছে। বাবা তার নিজের নামে নিতে আপত্তি জানিয়েছিল কিন্তু রঞ্জু বলল বাবা, আমার বিপদের সময় যে মানুষটা আমাকে সাহস দিতো, যার কথা মনে পরলে বেঁচে থাকার প্রবল আগ্রহ তৈরি হতো সে তুমি। তোমার জন্য আমার ক্ষুদ্র উপহার।.........(শেষ)
বিঃ দ্রঃ ঃ- প্রতিটি মানুষের জীবনে স্বপ্ন থাকে, আশা থাকে ,চাহিদা থাকে।কিন্তু সেই স্বপ্ন, আশা, চাহিদা পুরন করার জন্য মানুষ তার নিজের জীবনে ঝুকি নেয়া কখনই উচিত না।রঞ্জুর মতো সবাই সফল হয় না। এ রকম হাজার হাজার রঞ্জু মা বাবার বুক খালি করে সমুদ্রে ভেসে গেছে যাদের খোঁজ কেউ কোনোদিন পাবে না। মা-বাবা হারাচ্ছে ছেলেকে, বোন হারাচ্ছে ভাইকে আর স্ত্রী হারাচ্ছে স্বামীকে।
মানুষের বড় সম্পদ হচ্ছে তার জীবন।পৃথিবীর সমস্ত রঞ্জু বেঁচে থাক তাদের মা বাবার বুকে, বোনের ভালবাসায়। অকালে হারিয়ে না যাক পৃথিবী থেকে। এখনও পৃথিবীকে তাদের দেয়ার আছে অনেক কিছু।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০