অনেক দিন পরে "কত অজানা রে" সিরিজ লিখতে বসলাম। সবাইকে বিষাক্ত শুভেচ্ছা।

আজ বলবো পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত প্রানীদের কথা। জেনে নিন, চিনে নিন, সতর্ক থাকুন। আসুন দেখি তারা কারা যাদের দেখা যাবে কিন্তু ছোঁয়া যাবে না।
১) Box Jellyfish (বক্স জেলিফিস)
"দুনিয়ার সবচেয়ে বিষাক্ত প্রানী" এর এওয়ার্ড নিঃসন্দেহে পাবে বক্স জেলিফিশ। ১৯৫৪ সালে রেকর্ড ৫৫৬৭ জন মারা যান বক্স জেলিফিশের বিষাক্ত আক্রমনে। বিষাক্ততার জন্য একে 'বক্স অফ ডেথ' ও বলা হয়। এর বিষ নার্ভাস সিষ্টেমকে অচল করে ফেলে, হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দেয় ও চামড়া ডেমেজ করে ফেলে। এর বিষ এতোটাই প্রচন্ড ব্যথা তৈরি করে যে আক্রান্ত ব্যাক্তি শকে চলে যায়, কোনোরুপ সাহায্য পাওয়ার আগেই হার্ট ফেইলার হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। সার্ভাইভবার রা কয়েক সপ্তাহ পরেও আক্রান্ত স্থানে ব্যথা অনুভব করে। যদি আপনি বক্স জেলিফিশের সংস্পর্শে আসেন তাহলে আপনার বাঁচার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে যদি না খুবই দ্রুত আপনাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটা টিপস দেই কেমন, এই বিষ কমানোর একটা সহজ উপায় আছে, তা হলো ভিনেগার।

বক্স জেলিফিস থেকে বাঁচতে হলে সুইমসুট পরে সাগরে নামা উচিত। বক্স জেলিফিশ এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সাগরে পাওয়া যায়।
২) King Cobra (কিং কোবরা)
কিং কোবরা দুনিয়ার সবচেয়ে লম্বা বিষাক্ত প্রানী যা দৈর্ঘ্যে ১৮-১৯ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। একে বলা হয় "স্নেক ইটার" মানে সে অন্য সাপ খেয়ে জীবন ধারন করে। একটা মাএ কামড়ই যথেষ্ট একটা মানুষকে হত্যার জন্য। এমন কি এরা এক কামড়ে একটা পূর্ন বয়স্ক হাতিও মেরে ফেলতে পারে যদি জায়গা মত কামড় দিতে পারে। কিন্তু এদের বিষ অন্যান্য বিষধর সাপের মত বিষাক্ত নয়। তাহলে কেন এতো মানুষ মারা যায় এর কামড়ে? বিষয়টা হলো পরিমানে। এরা এক কামড়ে এতো পরিমানের বিষ ঢেলে দেয় যে এর ইফেক্ট খুব দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে। এক কামড়ে তারা "ব্লাক মাম্বার" চেয়ে ৫গুন বেশি বিষ এরা ইজেক্ট করে।
আমাদের বাড়ির আশেপাশেই(দক্ষিন ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া) পাওয়া যায় এদের।
৩) Marbled Cone Snail (মার্বেল কোন স্নেইল)
সুন্দর একটা শামুক যার ভিতর লুকিয়ে আছে তরল মৃত্যু। এর মাএ এক ফোটা বিষই যথেষ্ট পুর্নবয়স্ক ২০ জন মানুষকে মেরে ফেলতে। এর কোন প্রতিষেধক নাই। যদিও এখন পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে এদের কারনে। তাই সাবধান, দেখতে সুন্দর হলেই হাত দিয়ে ধরতে না যাওয়াই ভালো।
৪) Blue-Ringed Octopus (ব্লু রিংড অক্টোপাস)
গলফ বলের সমান এই অক্টোপাসটি খুবই বিষাক্ত। এরা একসাথে যে পরিমান বিষ বহন করে তা দিয়ে এক মিনিটে ২৬ জন পূর্নবয়স্ক মানুষ মরে যেতে পারে। এরও কোন এন্টি-ভেনাম নাই। প্যাসিফিক ওসানের তলদেশে এদের পাওয়া যায়।
৫) Death Stalker Scorpion (ডেথ টকার স্কর্পিয়ান)
যতটা বলা হয় আসলে স্কর্পিয়ান ততটা বিষাক্ত না, মানে আপনি সার্ভাইব করতে পারবেন। তবে যদি চিকিৎসা না করান তাহলে মৃত্যু হতে পারে। সুখের কথা হলো এরা আমাদের ধারে কাছে নাই, পাওয়া যায় সেই মিডিল ইষ্ট ও আফ্রিকাতে।
৬) Stonefish (স্টোনফিশ)
জঘন্য দেখতে এই মাছটি খুবই বিষাক্ত। যারা ভুল করে পাথর ভেবে এদের উপর পা দেয়, তারা এটিকে ব্যাখ্যা করেছে "the worst pain known to man" হিসাবে। সো, ম্যান, হিসাব কইরা পা রাখেন।
৭) The Brazilian wandering spider (ব্রাজিলিয়ান ওয়ান্ডার স্পাইডার)
২০০৭ এর গ্রিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর "the most venomous spider" জয়ী এই মাকরশাটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী পোকায় কামড়ে মানুষের মৃত্যুর কারন।
(জানিনা কে কিভাবে নিবেন, কিন্তু কিছু তথ্য হজম করেন, এই স্পাইডার যদি কোন যৌনঅক্ষম পুরুষকে কামড় দেয় তাহলে তার জুনিয়র কমসেকম চার ঘন্টার জন্য উত্থলন হয়,এই মেডিকেল কন্ডিশনকে priapism বলে, এটা নিয়েও যথেষ্ট কনট্রোভার্সি আছে, এক পক্ষ ডাক্তাররা priapism বলতে ছয় ঘন্টার উপরে যদি ইরেকশন থাকে তাকে বুঝায়া থাকে। বিজ্ঞানীরা এর রহস্য সম্পর্কে এখনো বেশি কিছু জানতে পারে নি, তবে এর ব্যবহার অনেক পুরনো। ধনিক শ্রেনীর বিকৃত লোকরা এই বিষ ইনজেক্ট করে, যারা পেইনটা সহ্য করতে পারে আর কি। মেডিকেলি এর ব্যবহারের জন্য পরীক্ষা চলছে। তখন হয়তো ... ... গুড লাক লেডিস, গুড লাক ফেলোস)






৮) Inland Taipan (আইল্যান্ড টাইপান)
“The World’s Most Venomous Snake” টাইটেলের একমাএ হকদার এই অস্ট্রেলিয়ান আইল্যান্ড টাইপান এর। এর একটা মাএ কামড়ে যে পরিমান বিষ আছে তা ১০০ জন এডাল্ট মানুষ বা ২,৫০,০০০ ইদুর মারার জন্য যথেষ্ট। এর বিষ যেকোন সাধারন কোবরার চেয়ে ২০০-৪০০ গুন বেশী বিষাক্ত। যাক সুখবর হলো এই যে, এই সাপ খুবই লজ্জাবতী, মানুষের সামনে আসতেই চায় না।
৯) Poison Dart Frog (পয়জন ডার্ট ফ্রগ)
এর ইফেক্ট এর বিবরন পাওয়া যায় "apocalypto" মুভিতে। ঐ যে নায়ক যে ডার্ট দিয়ে মারে

১০) Puffer Fish (পাফার ফিশ)
এটি বিষাক্ততার দিক দিয়ে গোল্ডেন ডার্ট ফিশের পরেই এর অবস্থান। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু। জাপানে এটি পরিচিত "ফুগু" নামে আর কোরিয়ানরা একে বলে "বুক-উহ"। সমস্যা হলো এর কিছু অর্গান ও স্কিন খুবই বিষাক্ত। এর কোন এন্টিডোট নাই। অসতর্ক ভাবে এই মাছ হাত দিয়ে ধরে ফেললে মৃত্যু নিশ্চিত। অসতর্কভাবে প্রস্তুত করা খাবার খেয়েও অনেকে মারা যায়। মাছটা নাকি অত্যান্ত সুস্বাদু, তাই তারা মরার চিন্তা না করে এই মাছ খায়।


ধন্যবাদ ...