[এই গল্পটা লিখার সময় হুমায়ুন স্যারের হিমু হিমু ভাব নিয়ে লিখেছি। তবে এর প্লট সম্পুর্ণ কাল্পনিক। কোন কিছুর সাথে মিল খুজতে যাবেন না। যাস্ট এনজয়।]
বেলা প্রায় ১০ টা। ভোর গিয়ে সকালও চলে যাচ্ছে। আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে এখনো শুয়ে আছি। মাথার উপরে ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে। হালকা ঠান্ডা লাগছে কিন্তু ফ্যান বন্ধ করতে মন চাচ্ছে না। ফ্যানের দিকে থাকিয়ে ভাবছি- সুইচ বন্ধ করে দিলেই তো ফ্যানটা বন্ধ হয়ে যাবে। খিদে পাচ্ছে খুব। ফ্যানের মত যদি পেটের এরকম কোন সুইচ থাকত অফ করে দিয়ে আরো কিছুক্ষণ ঘুমানো যেত। খিদে পেলে পেটের ভিতর নাকি ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করে। আমার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে ইঁদুর না, বিড়াল দৌড়াদৌড়ি করছে। মানিব্যাগে ৩০ টাকা আছে । ২০ টাকা দিয়ে এক প্লেট খিচুড়ি সাবাড় করা যাবে। বাকি ১০ টাকা মোবাইলে লোড করে রুপাকে একটা কল করতে হবে । এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে খিচুড়ি খাওয়ার চেয়ে রুপাকে কলটা করা জরুরী। সমস্যা একটাই রুপার কোন মোবাইল নাই। রুপার বাবার মোবাইলে কল করে রুপাকে চাইতে হবে।
রুপার বাবা কল রিসিভ করে ভরাট একটা গলা দিয়ে বললেন,
- হ্যালো! কে বলছেন?
- হ্যালো, এটা কি রুপা তেল ফ্যাক্টরি?
- সরি রং নাম্বার!
- এক্সিউজ মি, রুপাকে দেন তো একটু!
- এই ফাজিল! কে তুই?
- আমি মোহাম্মদপুর থানা থেকে বলছি!
- কি চাও?
রুপার বাবার সম্মোধোনের মাত্রা খুব দ্রুত উঠানামা করছে। প্রথমে আপনি পরে তুই এখন তুমি। বেশ মজা লাগছে। এই মুহুর্তে উনার বিপি আরেকটু হাই করে দিলে কেমন হয়?
- আংকেল রুপাকে আমি ভালবাসি। আজ সন্ধ্যার মধ্যে রুপাকে উঠিয়ে নিয়ে যাব। আপনি বাধা দেবেন না।
- হোয়াট ননসেন্স! গেট লস্ট। টুট..টুট..টুট..
রুপার বাবা কল কেটে দিয়েছেন। এখন উনি একটু চেচামেচি করবেন। রুপা এসে কল ব্যাক করবে।
- হ্যালো রুপা!
- হ্যা বলো শুনতে পাচ্ছি। বাবাকে কী বলেছ?
- তোমার বাবা কি এখনো চেচামেচি করছেন?
- কী বলেছ বাবাকে? পুরো ঘর মাথায় তুলে ধরেছেন।
- রুপা ঘর মাথায় তুলা যায় না। ব্যাপারটা আসলে "চেচামেচি করে শব্দ...
- ফিলোসপি কপচাবে না। কল কেন দিয়েছ বল?
- তুমি কি কোন তেলের ব্যবসা শুরু করেছ?
- তোমার আজগুবি কথা রাখো। নইলে আমি কল কেটে দিচ্ছি..
- এক মিনিট রুপা, তোমার ফেসবুক আইডি ওপেন করে দেখ। সবাই পোস্ট দিচ্ছে। বাজারে নতুন একটা তেল এসেছে "রুপা খাটি সরিষার তেল" নামে।
- তোমার ভাড়ামি অন্য কারো সাথে করবে। তুমি এখন কোথায়?
- আমি যাচ্ছি মজনু মিয়ার বস্তিতে!
- ওখানে কী?
- ঐ বস্তিতে একটা গুপ্তধনের খোঁজ মিলেছে। বেশ কয়েকটা হীরার মুদ্রা পাওয়া গেছে। অনুমান করা হচ্ছে এগুলোর বাজারমূল্য কোটি কোটি টাকা। কত কোটি হতে পারে সেই হিসাব করার জন্য ভাল ক্যালকুলেটর খোঁজা হচ্ছে। অবশ্য খবর পেয়ে একজন গুপ্তধন ব্যবসায়ী এসেছিলেন। তিনি পরীক্ষা নীরিক্ষা করে বলেছেন এগুলো কয়েক বছরের পুরনো সেভেন আপের কাচের বোতলের ভাঙ্গা টুকরা। মজনু মিয়া সহ কেউ বিশ্বাস করছে না ঐ ব্যবসায়ীর কথা।
- আমি কী করব?
- তুমি শুনলাম নতুন তেলের বিজনেস স্টার্ট করেছ। একটু তেল লাগবে আমাদের। হীরেগুলো তেল দিয়ে চকচকে করতে হবে...ঐ ব্যবসায়ীকেও একটু তেল দিতে হবে। তারপর...
- আমি ফোন রাখছি। তুমি থাক তোমার বস্তাপচা রসিকতা নিয়ে। টুট...টুট...টুট...
রুপা কল কেটে দিয়েছে। এখন আর মজনু মিয়ার বস্তিতে যেতে ইচ্ছে করছে না। কড়া লিকার দিয়ে এক কাপ চা খাওয়া যায়। পকেটে আর কোন টাকা নাই। সমস্যা না, মজিদের দোকানে গিয়ে বাকি খেয়ে আসব। কিন্তু তেলের ব্যাপারটা এখনো ক্লিয়ার হল না। সবাই বলছে বাজারে রুপা তেল এসেছে। রুপা ব্যাপারটাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। রহস্য কী? ভাবনাটা এখানেই স্টপ করে রাখি। পরে এক সময় আবার প্লে করব। এখন যাই মজিদের দোকানে....