যে উন্নয়নের সাথে আমি নিজেকে রিলেট করতে পারিনা, সেই উন্নয়ন আমার বোধগম্য হয় না। আমি সাদামাটা মানুষ, তাই হয়তো সব পরিস্থিতি নিজেকে দিয়েই বিচার-বিশ্লেষণ করি। এই যেমন ধরুন, কোথাও শিশু ধর্ষণের খবর দেখলেই আগে নিজের মেয়ের মুখটা চিন্তা করি। আবার বাতাবি লেবুর ফলনে যখন দেশ ভেসে যায়, তখন চেক করি আমার ঘরে কয়টা বাতাবি লেবু আছে। যাই হোক, যেহেতু এখন আমি প্রবাসি, তাই যে কোন তুলনামূলক বিচার বিবেচনা করি একটু ভার্চুয়ালি। এই যেমন, যখন দেখি বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতির অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল দেশ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে ইত্যাদি, তখন আপন রান্নাঘরে ডিম ভাজতে, ভাজতে চিন্তা করি আম্মা সেদিন বললো ডিমের হালি নাকি ৯০ টাকা ! এখানে আমি ডিমের ডজন কিনি ২৪০ টাকা। ২৪০ টাকা ডজন ডিম আমাদের একেবারেই গায়ে লাগে না। অনায়াসেই সকাল বেলা ৫-৬ টা ডিম একসাথে নিয়ে মজা করে ভেজে সবাই নাস্তাটা সেরে ফেলি। গুরুর মাংস তো অনেকের জন্যই প্রতিদিনের মেন্যু, খরচ পরে বাংলা টাকায় ৪২০ টাকা কেজি, তাও মোটেই গায়ে লাগে না আমাদের সাধারন মধ্যবিত্ত জীবনে।
তারপর অংক করতে বসি। আমরা দু'জনে বাংলা টাকায় মাসে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা আয় করি এবং এখানে আমরা অতি সাধারন মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করি। মাস শেষে সব বিল, মর্টগেজ ইত্যাদি দিয়ে হাত শূণ্য, তারপরেও রাতে ঘুমটা হয় ভালো। বাংলাদেশের একটা সাধারন মধ্যবিত্ত দম্পত্তি কত আয় করে মাসে? কিংবা যে পরিবারে একজন আয় করে? একটা ঘরে যদি অন্তত চারজন সদস্য থাকে তারা কি একটা করে ডিম প্রতিদিন এফর্ড করতে পারে ? ঠিক কয়টা মধ্যবিত্ত পরিবার মাসে বা বছরে কয়দিন গরুর মাংস কিনে খেতে পারে ? অংক করতে, করতে মাথা কেমন করে, আমি আবার আমার নিজের রান্নায় মনোযোগ দেই। খেতে বসে ভাবি দেশে আমার ভাইয়ের দুইটা মেয়ে আছে ছোট, ছোট - ওরা কি প্রতিদিন একটা ডিম খেতে পায়? ওরা তো গুরুর মাংস খুব ভালোবাসে। সপ্তাহে বা মাসে একটু গুরুর মাংস কি ওরা খেতে পায়? আমার আর খাওয়া হয়না। অংকে গন্ডগোল হয়ে যায়। যে দেশে লক্ষ, লক্ষ মানুষ এখনও টিপসই দিয়েই নিজেদের সিদ্ধান্ত জানায়, তারা সূচক দিয়ে উন্নয়ন বোঝে না, তারা বোঝে ভাতের পাতে কি পরলো ?