somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১ টাকা কম!!! সৈয়দ সানাম সাকিব

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ টাকা কম!!!
সৈয়দ সানাম সাকিব
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম রাজু ভাই এর ফোনে। আজকে উনার সাথে দেখা করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। রাজু ভাই আমার এক পরিচিত বড়ভাই, একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন। তারাতারি হাতমুখ ধুয়ে বের হয়ে গেলাম। পকেটে আছে মাত্র ৬৯ টাকা। গতকাল গেট খুলার জন্য চাবি বের করতে গিয়ে ১ টাকা ড্রেনের ভিতরে পরে গিয়েচ্ছিল। ১ টাকা টা থাকলে একটা রাউন্ড ফিগার হোত। যাই হোক ৬৯ টাকা নিয়েই বের হলাম। নাস্তা করিনি তাই পেটের ভিতরে পাঁচতলা বিল্ডিং এর পাইলিং এর কাজ চলছে। রিক্সা ডাকলাম ভাড়া চাইল ৩৫ টাকা। ৩৫+৩৫= ৭০। কিন্তু আমার কাছে আছে ৬৯ টাকা। ৩৫ টাকা দিয়ে গেলে আর থাকবে ৩৪ টাকা। আসার সময় ভেজাল হতে পারে তাই জিজ্ঞাসা করলাম ৩৪ টাকা যাবে কিনা। লোকটির তাকানোর ঢং দেখে মনে হল মাত্র ১ টাকা কম বলায় উনি ভেবেছেন আমি মস্করা করছি। আমার দিকে তীব্র মস্করামূলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু না বলেই চলে গেল। আমি বেশ খানিক টা অপমানবোধ করলাম। একটু সামনে গিয়ে বাস পেয়ে গেলাম। দুইটি বাস দাড়ানো। একটি সিটিংবাস অন্যটি লোকাল। সিটিং এ ভাড়া ১০ টাকা আর লোকালে ৯ টাকা ভাড়া। সিটিং আর লোকালের মাঝে পার্থক্য ১ টাকা কেন তা বুঝতে পারলাম না! কিন্তু একটু আগের অপমানের বোধ টা এখনো থাকার কারনে ১ টাকা পুষিয়ে নিতে লোকালেই উঠলাম, ১ টাকা কমে। ভুল টা বুঝতে পারলাম একটু পরেই যখন অন্যের ঘাম আর নিজের ঘামের বিরক্তিকর ঘষাঘষি অনুভব করতে পারলাম। বার বার কেমন জানি পিছলিয়ে যাচ্ছিলাম। রাজু ভাই এর অফিসের কাছাকাছি এসে ৯ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে বাস থেকে নেমে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। পকেটে এখন ৬০ টাকা আছে। পেটের ভিতরে বিল্ডিং এর কাজের গতি আরও বেড়ে গেছে এখুনি কিছু খেতে হবে। ১০ টাকা দিয়ে একটি কেক নিলাম। কিন্তু পানির জন্য যে আরও ১ টাকা দিতে হবে আগে বুঝিনি। তাই ১১ টাকা দিয়ে পকেটে এখন ৪৯ টাকা রইল এই টাকার মাঝেই বাসায় ফিরে যেতে হবে। আবার সেই ১ টাকার ভেজাল। রাউন্ড ফিগার থাকলে ভাল হত না? গত দিনের ১ টাকা টা ড্রেনে না পরলে কি হত?
এদিকে অফিসে ঢুকে দেখি রাজু ভাই অফিসে নাই। কি এক কাজে তাঁর বসের সাথে বাইরে গেছেন। আমাকে অপেক্ষা করতে বলে গেছেন। বসে থাকতে থাকতে ৩.০০ টা বেজে গেল। আবার ক্ষুধা লেগে গেল। কিছু খেতে হবে তাই অফিস থেকে বের হয়ে পাশের একটি রেস্টুরেন্টে গেলাম। ভাত+ভর্তা=৪৫ টাকা,ভাত খেতে পারলে ভাল হত কিন্তু পকেটে মাত্র ৪৯ টাকা আছে। ২৫ টাকায় পরটা আর ভাজী খেয়ে পেটকে কোনো রকম বুঝালাম, বাবারা, শান্ত হও বাসায় গিয়েই ভাল করে খাবার খাওয়াব। বিল দিলাম ২৬ টাকা। পানির জন্য ১ টাকা বেশি। এই ১ টাকা আমার পিছু ছাড়ছে না কেন বুঝতে পারছি না! রইল বাকী ২৩ টাকা। রাজু ভাই এত দেরি করছে কেন? একটা ফোন দিয়ে দেখা যেতে পারে। কপাল টাই খারাপ , মোবাইল আছে মাত্র ১ টাকা ১ পয়সা। অন্য অপারেটরে কল করতে ১ টাকা ৬১ পয়সা লাগে। আশে পাশে কোনো ফোন করার দোকান ও নাই। একটা ফ্লেক্সির দোকান পেলাম। ১০ টাকা ফ্লেক্সি করলাম ১১ টাকা রাখল। আবার ও ১ টাকা বেশি। মাত্র ১২ টাকা আছে। আর খরচ করা যাবে না। তা না হলে বাসায় হেটে যেতে হতে পারে। ফোন করায় আমাকে পাশের একটি টং দোকানের সামনে দাড়াতে বলল। অনেক দিন পরে দেখা, এত খুশি হলাম যে মনের ভুলে চা এর অর্ডার দিয়ে দিলাম। ২ কাপ চা এর দাম ৬ টাকা। ২ কাপ নিলে বাস ভাড়ায় কম পরে যাবে তাই চা খাই না বলে ১ কাপ চা এর অর্ডার দিলাম। ১ কাপ চা ৩ টাকা। বাকী রইল ৯ টাকা। “একদম খাপে খাপ, মর্জিনার বাপ”। কিন্তু যখন রাজু ভাই এর যে চা খাবার আগে পানি খাবার অভ্যাস তা তো জানা চ্ছিল না। চা+পানির জন্য ৪ টাকা বিল দিয়ে আবার ১ টাকার টেনশন নিয়ে রাজু ভাই এর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আর মনে মনে ঠিক করলাম জীবনে কখনো ১ টাকার অবহেলা করব না। পকেটে এখন ৮ টাকা। লোকাল বাসের ভাড়া ছিল ৯ টাকা। এখন বাসা থেকে আগের ষ্টপেজ এ নেমে বাকী টা পথ হেটে যেতে হবে। আগের ষ্টপেজ এর ভাড়া আবার ৭ টাকা। আমার কাছে ২ টাকার ৪ টি ময়লা নোট। বাসের কন্টেক্টার কে ৮ টাকা দিয়ে ১ টাকা ফেরত চাইলাম বলল, ১ টাকা ভাংতি নাই। মাথা গেল গরম হয়ে। সারা দিনের রাগ তখন ই ঢেলে দিলাম বললাম, “এক থাপ্পরে তোর সব দাঁত ফেলে দিব। জানিস ১ টাকার কত দাম? দে টাকা দে।” ঝাড়ি খেয়ে পকেটের চিপা থেকে ১ টাকা বের করে দিল। ১ টাকা পকেটে নিয়ে হেটে হেটে বাসার সামনে এসে যখন ই চাবি বের করতে গেলাম তখন ই আবার আগের দিনের মত ১ টাকার কয়েন টা সেই আগের জায়গা টা তে গিয়ে আগের কয়েন টার পাশেই গিয়ে পরল। অনেক্ষন তাকিয়ে রইলাম। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। এটা কি আগামী কালের আগাম বিপদ সঙ্কেত নাতো......।।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৭
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

AI-এর লগে গ্যাঁজাইলাম =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(স্ক্রিনসট)

সামহোয়্যার ইন ব্লগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালন সাঁইজির আধ্যাতিকতা,পরিচয় ও মানবতাবাদ

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

লালন সাঁই ছিলেন একজন বাউল সাধক, দার্শনিক ও মানবতাবাদী। তাঁর আধ্যাত্মিকতা মূলত গুরু-শিষ্য পরম্পরা, সাধনা ও অন্তর্জ্ঞানভিত্তিক। তিনি ধর্ম, জাতি, বর্ণভেদ মানতেন না এবং বিশ্বাস করতেন, "মানুষের ওপরে কিছু নাই।"... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ছোট কালের ঈদ।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৫



ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।



আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটার প্যান সিনড্রোম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪২


প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও দায়িত্ব নিতে না চাওয়া, বাস্তবতা এড়িয়ে চলা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অনেকের মাঝেই দেখা যায়। তারা শৈশবের মতো স্বাধীন, নিরুদ্বেগ জীবন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি কি ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে না?

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:২২

ক্ষমতায় আসার পরে বিএনপির আচরণ কেমন হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত ভাবে দেওয়া সম্ভব না। তবে আমরা কারো আচরণ কেমন হতে পারে সেটা তার অতীত থেকে খানিকটা আন্দান করতে পারি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×