সৈয়দ সানাম সাকিব
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম রাজু ভাই এর ফোনে। আজকে উনার সাথে দেখা করার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। রাজু ভাই আমার এক পরিচিত বড়ভাই, একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন। তারাতারি হাতমুখ ধুয়ে বের হয়ে গেলাম। পকেটে আছে মাত্র ৬৯ টাকা। গতকাল গেট খুলার জন্য চাবি বের করতে গিয়ে ১ টাকা ড্রেনের ভিতরে পরে গিয়েচ্ছিল। ১ টাকা টা থাকলে একটা রাউন্ড ফিগার হোত। যাই হোক ৬৯ টাকা নিয়েই বের হলাম। নাস্তা করিনি তাই পেটের ভিতরে পাঁচতলা বিল্ডিং এর পাইলিং এর কাজ চলছে। রিক্সা ডাকলাম ভাড়া চাইল ৩৫ টাকা। ৩৫+৩৫= ৭০। কিন্তু আমার কাছে আছে ৬৯ টাকা। ৩৫ টাকা দিয়ে গেলে আর থাকবে ৩৪ টাকা। আসার সময় ভেজাল হতে পারে তাই জিজ্ঞাসা করলাম ৩৪ টাকা যাবে কিনা। লোকটির তাকানোর ঢং দেখে মনে হল মাত্র ১ টাকা কম বলায় উনি ভেবেছেন আমি মস্করা করছি। আমার দিকে তীব্র মস্করামূলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু না বলেই চলে গেল। আমি বেশ খানিক টা অপমানবোধ করলাম। একটু সামনে গিয়ে বাস পেয়ে গেলাম। দুইটি বাস দাড়ানো। একটি সিটিংবাস অন্যটি লোকাল। সিটিং এ ভাড়া ১০ টাকা আর লোকালে ৯ টাকা ভাড়া। সিটিং আর লোকালের মাঝে পার্থক্য ১ টাকা কেন তা বুঝতে পারলাম না! কিন্তু একটু আগের অপমানের বোধ টা এখনো থাকার কারনে ১ টাকা পুষিয়ে নিতে লোকালেই উঠলাম, ১ টাকা কমে। ভুল টা বুঝতে পারলাম একটু পরেই যখন অন্যের ঘাম আর নিজের ঘামের বিরক্তিকর ঘষাঘষি অনুভব করতে পারলাম। বার বার কেমন জানি পিছলিয়ে যাচ্ছিলাম। রাজু ভাই এর অফিসের কাছাকাছি এসে ৯ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে বাস থেকে নেমে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। পকেটে এখন ৬০ টাকা আছে। পেটের ভিতরে বিল্ডিং এর কাজের গতি আরও বেড়ে গেছে এখুনি কিছু খেতে হবে। ১০ টাকা দিয়ে একটি কেক নিলাম। কিন্তু পানির জন্য যে আরও ১ টাকা দিতে হবে আগে বুঝিনি। তাই ১১ টাকা দিয়ে পকেটে এখন ৪৯ টাকা রইল এই টাকার মাঝেই বাসায় ফিরে যেতে হবে। আবার সেই ১ টাকার ভেজাল। রাউন্ড ফিগার থাকলে ভাল হত না? গত দিনের ১ টাকা টা ড্রেনে না পরলে কি হত?
এদিকে অফিসে ঢুকে দেখি রাজু ভাই অফিসে নাই। কি এক কাজে তাঁর বসের সাথে বাইরে গেছেন। আমাকে অপেক্ষা করতে বলে গেছেন। বসে থাকতে থাকতে ৩.০০ টা বেজে গেল। আবার ক্ষুধা লেগে গেল। কিছু খেতে হবে তাই অফিস থেকে বের হয়ে পাশের একটি রেস্টুরেন্টে গেলাম। ভাত+ভর্তা=৪৫ টাকা,ভাত খেতে পারলে ভাল হত কিন্তু পকেটে মাত্র ৪৯ টাকা আছে। ২৫ টাকায় পরটা আর ভাজী খেয়ে পেটকে কোনো রকম বুঝালাম, বাবারা, শান্ত হও বাসায় গিয়েই ভাল করে খাবার খাওয়াব। বিল দিলাম ২৬ টাকা। পানির জন্য ১ টাকা বেশি। এই ১ টাকা আমার পিছু ছাড়ছে না কেন বুঝতে পারছি না! রইল বাকী ২৩ টাকা। রাজু ভাই এত দেরি করছে কেন? একটা ফোন দিয়ে দেখা যেতে পারে। কপাল টাই খারাপ , মোবাইল আছে মাত্র ১ টাকা ১ পয়সা। অন্য অপারেটরে কল করতে ১ টাকা ৬১ পয়সা লাগে। আশে পাশে কোনো ফোন করার দোকান ও নাই। একটা ফ্লেক্সির দোকান পেলাম। ১০ টাকা ফ্লেক্সি করলাম ১১ টাকা রাখল। আবার ও ১ টাকা বেশি। মাত্র ১২ টাকা আছে। আর খরচ করা যাবে না। তা না হলে বাসায় হেটে যেতে হতে পারে। ফোন করায় আমাকে পাশের একটি টং দোকানের সামনে দাড়াতে বলল। অনেক দিন পরে দেখা, এত খুশি হলাম যে মনের ভুলে চা এর অর্ডার দিয়ে দিলাম। ২ কাপ চা এর দাম ৬ টাকা। ২ কাপ নিলে বাস ভাড়ায় কম পরে যাবে তাই চা খাই না বলে ১ কাপ চা এর অর্ডার দিলাম। ১ কাপ চা ৩ টাকা। বাকী রইল ৯ টাকা। “একদম খাপে খাপ, মর্জিনার বাপ”। কিন্তু যখন রাজু ভাই এর যে চা খাবার আগে পানি খাবার অভ্যাস তা তো জানা চ্ছিল না। চা+পানির জন্য ৪ টাকা বিল দিয়ে আবার ১ টাকার টেনশন নিয়ে রাজু ভাই এর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আর মনে মনে ঠিক করলাম জীবনে কখনো ১ টাকার অবহেলা করব না। পকেটে এখন ৮ টাকা। লোকাল বাসের ভাড়া ছিল ৯ টাকা। এখন বাসা থেকে আগের ষ্টপেজ এ নেমে বাকী টা পথ হেটে যেতে হবে। আগের ষ্টপেজ এর ভাড়া আবার ৭ টাকা। আমার কাছে ২ টাকার ৪ টি ময়লা নোট। বাসের কন্টেক্টার কে ৮ টাকা দিয়ে ১ টাকা ফেরত চাইলাম বলল, ১ টাকা ভাংতি নাই। মাথা গেল গরম হয়ে। সারা দিনের রাগ তখন ই ঢেলে দিলাম বললাম, “এক থাপ্পরে তোর সব দাঁত ফেলে দিব। জানিস ১ টাকার কত দাম? দে টাকা দে।” ঝাড়ি খেয়ে পকেটের চিপা থেকে ১ টাকা বের করে দিল। ১ টাকা পকেটে নিয়ে হেটে হেটে বাসার সামনে এসে যখন ই চাবি বের করতে গেলাম তখন ই আবার আগের দিনের মত ১ টাকার কয়েন টা সেই আগের জায়গা টা তে গিয়ে আগের কয়েন টার পাশেই গিয়ে পরল। অনেক্ষন তাকিয়ে রইলাম। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। এটা কি আগামী কালের আগাম বিপদ সঙ্কেত নাতো......।।