আমাদের মধ্যে সম্মান করা এবং অসম্মান করার দুটি প্রবণতাই প্রবলভাবে আছে। কাউকে মাথায় নিয়ে নাচানাচি করার পর খানিকবাদে তাকে পায়ের নিচে চেপে ধরতে আমাদের সময় লাগে না। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কলসিন্দুরের মেয়েদের কথা ভুলে যাননি নিশ্চয়ই? অবশ্য ইস্যু পরিবর্তনের চাপে কদিন আগে ওদেরকে নিয়ে আমরা সারা ফেইসবুক যে মাতিয়ে রেখেছিলাম-তা ভুলে যেতে পারি। প্রোফাইল পিকচার চেইঞ্জ, লাইক-শেয়ার, হ্যান-ত্যান; মাতবোই না বা কেন?চূড়ান্ত পর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে গিয়ে ৫ ম্যাচে বাংলাদেশের কিশোরীরা গোল করেছে ২৬টি। বাছাইপর্বে প্রতিটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশের টাইগ্রেসরা। সে অনুযায়ী প্রাপ্য সম্মান কি পেলেন এই দুর্দান্ত ফুটবলাররা?
গতকালই যমুনা টিভিতে দেখলাম অভিবাবকহীন অবস্থায় মেয়েদের লোকাল বাসে তুলে দেয়া হলো। সেখানে নুনুভূতি সম্পন্ন পুরুষেরা তাদের গালাগাল করেছে, অশ্লীল কটুক্তি করেছে। নারীবাদি নয় একজন মানুষ হিশেবে ভাবুন, কি অন্যায়টা হয়েছে আমাদের খেলোয়ারদের সাথে।
বাড়ি ফিরে আরো অপমানিত নিজ স্কুলের কর্তৃপক্ষের কাছেই। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রীষ্মকালীন ফুটবল প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে কুমিল্লা যাচ্ছে কলসিন্দুর উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে তাদের খেলতে হবে বলে চাপ প্রয়োগ করা হয়। মেয়েদের সামনে সাফ চ্যাম্পিয়নের প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই তারা রাজী হয়নি। শরীরচর্চা শিক্ষক জোবেদ আলী ক্ষেপে গিয়ে তাদের স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বেড় করে দেবার হুমকি দিয়েছেন।শুধু তাই নয় ফুটবলার তাসলিমার বাবা সবুজ মিয়াকে মারধরও করা হয়েছে। সামনে তাঁদের এসএসসি পরীক্ষা। এরা না পারবে ভালো মতন পড়তে, না পারবে ভালো মতন খেলতে। অভিবাবকরাও অনুৎসাহিত হবে। দুদিন পর হয়তো কিশোরী মেয়েকে স্বামীর ঘরে পাঠানো হবে। ফুটবল বাদ দিয়ে পাতিল মাজো, সন্তান উৎপাদন করো।
হায় আমাদের দেশ! হায় আমাদের মানুষ!! মমতাজের গানের কথা মনে পরে যায়- বন্ধু তুই লোকাল বাস, আদর কইরা ঘরে তুলস ঘাড় ধইরা নামাস।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮