সে দিন জন্মদিন ছিল না তবু ওকে দেখতে ইচ্ছে করছিল
তাই মিথ্যে বলেছিলাম।সে যথাসময়ে আমার বাসায় এলো। এসেই
বিস্মিত হলো।
: আর বাকীরা কই?
: আমি বললাম বাকীরা মানে?
: তোমার বন্ধু বান্ধব কেউ আসবে না?
: আমি কৌতুকমাখা গলায় বললাম না।
: কেন?
: কারণ আজ আমার জন্মদিন নয়! তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল!
: এই কথা! তা এমনি বললেই হত । আমি চলে আসতাম। আমি কত
কষ্ট করে নিউমার্কেট থেকে তোমার জন্য গিফ্ট কিনলাম...
: কিছু মনে কর না..আমি ভেবেছি এমনি বললে তুমি আসবে না...
: তোমার জন্মদিন তাহলে কবে?
: ১৩ ই জুন
: আরও সাতমাস!
: হু এতদিন ধৈর্য ধরে থাকা সম্ভব না.. তাই জন্মদিনের কথা বললাম
: সাতমাস আগে জন্মদিনের কথা বললে?
: ভালই ত’ হল । সবাই জন্মদিনে একটি উপহার পায়। আমি পেলাম
দুটি... তাও আবার জন্মদিন না হয়েও..
: দুটি মানে?
: একটি তোমার হাতে আর একটি তো তুমি...
: কোন বদমতলব আছে না কী? অবশ্য তোমার যা বীরত্ব! তোমারে
দেখলে ফড়িং ও পালায় না..হা হা
: তুমি আমাকে আমার চেয়ে বেশী চেন... তুমি খুবই বুদ্বিমতী...
: হয়েছে থাক আর তেলাতে হবে না.... সিরিয়াস কোন বিষয়ে কথা বলবে
নিশ্চয়ই...দাঁড়াও আগে গিফটের প্যাকেটটা খুলি...
: না না ওটা এখন খুলব না... জন্মদিনের উপহার জন্মদিনেই দেখব...
: তার মানে সাতমাস পরে?
: জ্বি হাঁ...
এরপর আমরা অনেক বিষয়ে কথা বললাম। ক’দিনেরই বা আমাদের
সম্পর্ক... তবু মনে হয় যুগ যুগ ধরে দুজন দুজনকে চিনি..তবে শুরু থেকে
আমরা দুজন দুজনকে নানারকম সারপ্রাইজ দিতাম। আমি ওকে কোন
সারপ্রাইজ দিলে ও অবশ্যই আমাকে পাল্টা সারপ্রাইজ দিত।
ভুয়া জন্মদিনের ছয় মাস পরের একদিনের কথা..
সে আমাকে ফোন করে বলল যে আগামী মাসেই আমাদের বিয়ে।
আমি বললাম তোমার বাসা থেকে বলেছে?
: না। আমিই ঠিক করলাম আগামী মাসে আমরা বিয়ে করব!
: আগামী মাস তো জুন মাস! কত তারিখ?
: কোন সমস্যা না হলে ১৩ ই জুন!
: জন্মদিনে বিয়ে? তোমার বাসায় বলেছ?
: হাঁ বলেছি। কারো আপত্তি নেই..
: আচ্ছা তাহলে আমার জন্মদিনে কেন? তোমার জন্মদিনেও তো করতে
পারতে..
: কারণ আছে মশাই...যথাসময়ে জানতে পারবেন!
এরপর মোটামুটি জাঁকজমকের মধ্যেই আমাদের বিয়ে হল। বাসর ঘরে
ঢুকতেই সে বলল তোমার ভুয়া জন্মদিনের উপহার টা কোথায় রেখেছ?
আমি ওয়ার্ড্রব থেকে সযতনে র্যাপিং পেপারে মোড়ানো উপহারটি বের
করলাম।
: আজ তোমার সত্যি সত্যি জন্মদিন। আজ না এটি তোমার দেখার কথা!
: আজও আমি দুটি উপহার পেলাম। তুমি ইচ্ছে করেই এমনটি করেছ!
তাই না!
: সে লাজুক হাসি দিয়ে বলল সারপ্রাইজ!
আমি ধীরে ধীরে র্যাপিং মোড়ানো উপহারটি খুললাম---
এ কী! নববধূর সাজে সজ্জিত তার অসাধারণ একটি ছবি!
: তুমি না নিউমার্কেট থেকে গিফ্ট কিনেছিলে?
: হ্যাঁ! ছবিটি নিউমার্কেটে তোলা এবং সেখান থেকেই বাঁধাই করে
এনেছি..
: তাহলে তুমি আগেই জানতে আমার অরিজিনাল জন্মদিন কবে?
: এ আর কঠিন কী? তোমার বন্ধু জোসেফের কাছে থেকে জেনে
নিয়েছিলাম তোমাকে না জানিয়ে..উনাকেও মানা করেছি তোমাকে না
বলতে..তুমি যখন ফোন করে বললে যে সেদিন তোমার জন্মদিন তখনই
আমার মাথায় আইড়িয়াটি আসে । আমি ধারণা করেছি তুমি উপহারটি
সেদিন খুলবে না তাই আজকের এই সত্যিকারের জন্মদিনে বিয়ের
আয়োজন!
আমি কী বলব! আমি থ!! ভুয়া জন্মদিনের দুটি উপহার যার কোনটিই
সেদিন দেখা হয়নি। আজ সত্যিকার জন্মদিনেও দুটি উপহার! পরমূহুর্তেই
আমার মনে হল উপহার আসলে কয়টি?
একটি না দুটি??
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:২৯