এলাকার মাঠের মধ্যে যখন বিকালে পোলাপাইন ,মানে মহল্লার ছেলেপেলেরা যখন তারস্বরে চিৎকার করে ও লাফিয়ে ঝাপিয়ে নানা কসরত করে ফুটবল ক্রিকেট ও নানা রকম দেশী বিদেশী আবুলদেশী খেলায় ব্যস্ত তখন আমরা এলাকায় কয়েকটা বিখ্যাত !! (কুখ্যাত) অকালকুষ্মান্ড মাঠের কোনায় বসে খেলার উপযোগীতা ও মানবজীবনে এর গুরুত্ব নির্ধারণে কাটাছেড়া চলছে । বলা বাহুল্য সেই সাথে মুখের কাজ ও বন্ধ নেই , মানে চানাচুর বাদামভাজা মুড়ু মুড়কি যা পাওয়া যায় তা গনহারে চাদা তুলে আবার কারো মেরে !! দেয়া ১০ -১২ টাকার শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে। বেচারাদের মুখ টা তখন দেখবার মতন হয়।
বরাবরের মত এবারেও সবার পকেট থেকে চেয়ে চিন্তে টাকা বের করে উদর পূর্তি করা আবুল মামা , সবার গলায় আওয়াজ জোরে ছাপিয়ে বলে উঠলেন "না রে ছাক্কু! এই খেলায় আমাদের কোন লাভ হবে না আদতে , আমাদের উচিত অলিম্পিকের ১০০ মিটার দৌড়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা.."
আমি তথা সেই অকালপক্ক গ্রুপের মেম্বার ছাক্কু বলে উঠলাম , কেন আবুল ভাই , জানেন না এই গ্রহে একজনই আছেন এই ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডে , "উসাইন বোল্ট " গতরাতেই তো ৯।৬৩ সেকেন্ডে শেষ করলো , তার থেকে কোন মানুষ তো দুরের কথা এলিয়েন ও ফাস্ট হইবো কিনা সন্দেহ আছে,
আবুল ভাই তার মুখে পোরা সদ্য ঝাল চানাচুর এর মুঠিটা শেষ করা মাত্র তার ভীম গদা সদৃশ হাত টা আমার মাথায় চাটি মারার উদ্দেশ্যে হাকা মাত্রই মুশফিকুর রহিমের মত বাউলি কেটে মাথাটা সরিয়ে নিলাম ....
আবুল ভাই তার সাধের হ্যান্ড স্ট্রোক মারতে না পেরে একটু মনক্ষুন্ন গলাতেই বললেন , উসাইন বোল্ট সে কোন ছাড় ! গেলবার যখন হিমালয়ের আন্দিজ পাদদেশে বিশ্ব ইয়েতি রক্ষা সমিতির সৌজন্য দৌড় প্রতিযোগিতা ছিল সেইবার আমি তাকে ৯।৮৫ সেকেন্ডের বিনিময়ে হারিয়েছিলাম জানিস ....
এমন হীন আবুলবাজ (আবুল ভাই এর চাপাবাজিকে আমরা এলাকার ছেলেপুলেরা আবুলবাজ ই বলে থাকি ) সহ্য করতে পারলো না দুদে ম্যাথমিটিশিয়ান ও পদার্থ বিদ্যার ডালে পাতায় চড়তে থাকা গেদু !! (পিতৃপ্রদত্ত নাম , কেন সেই ইতিহাস আরেকদিন বলবো) সে বলতে থাকবো ইটস ইমপসিবল , একোরডিং টু নিউটনস ফাস্ট ল ........
তার আগেই আমি তাকে থামিয়ে দিলাম , বললাম ওহে এখন এসব না , কানে কানে বললাম গুলটা শুনিই না , দেখিস হয়তো বলবে ইয়েতি দৌড়ানি দিয়েছিল সেই দৌড়ে ফাইনাল লাইনে চলে এসেছে ....
এদিকে আবুল ভাই কে বললাম "ভাই পিচ্চি মানুষ , গ্যাং এ নতুন , কিচ্ছু মনে কর না, তুমি বল তোমার সেই বিখ্যাত রেকর্ডের কাহিনী"
আবুল ভাই বলা শুরু করলো ......
তো যা বলছিলাম আর কি ,গেল বছর যখন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী "হু জিন তাও" ....
আমি বললাম ভুটানের ? উনি না চীনের প্রধান মন্ত্রী ?
আবুল ভাই বললেন ওই একই হল তখন ভুটানের প্রধান মন্ত্রীর একটু ডিসেন্ট্রি হয়েছিল তাই তার ভাই চীনের প্রধানমন্ত্রী তার সিটে প্রক্সি দিতে আসছিল , ওই যে আমরা ইউনিতে দেই না এইরকম আর কি
আমি বললাম ও আচ্ছা আচ্ছা ! তারপর ...
আবুল ভাই - হুম কোথায় যেন ছিলাম , ও হ্যা যখন চীনের প্রাচীরের মধ্যে আমাদের রেইস টা শুরু হয় ....
এইবার আর কিছু বললাম না , কেই বা চায় বার বার তার সেই বিখ্যাট ব্যকস্ট্রোক খেতে আপনারাই বলেন ?
ভাই বলে চললেন , তখন স্টারটিং লাইনে বোল্ট জুতার ফিতা বাধতে বাধতে বলল আমাকে , আবুলজ (জ্যামাইকান রা নাকি আবার আবুল ভালোভাবে বলতে পারে না ,একটু শেইক মোডে বলে আর কি ) আমার এখানে শুনেছি অনেক ইয়েতি আছে , তুমি ও কি শুনেছ? আমি বললাম ইয়ো ম্যান হেয়ার ম্যানি অফ দ্যা ইয়েতি দেম হ্যাভ , ওয়ান অফ দেম ইজ মাই কাইন্ড হি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড , বলা শেষ না হতে হতেই বোল্ট এর সে কি দৌড় , ইয়েতির ভয়ে নাকি আমাকে ইয়েতি ভেবে কি জানে , কিন্তু মজার ব্যাপার হল সে দৌড় দিয়েছে স্টারটিং লাইনের ঠিক উল্টাদিকে, আমি বললাম , খল্লা পাড়ার আবুল মিয়ার সাথে টাউট বাজি দাড়াও আমিও রেইস শুরু করছি ,বলেই দিলাম দৌড় । দৌড়ে ফিনিশিং লাইনে পৌছে দেখি এখন ও বোল্ট পৌছায়নি , পুরো মহাপ্রাচীর কভার করছে তো , তা আমার পৌছার ঠিক ৯।৮৫ সেকেন্ড পরে সে পৌছায় আর আমার হয়ে গেল বিশ্বরেকর্ড ...
তখন আবার সবজান্তা গেদু বলে উঠে কিন্তু আবুল দা চীনের প্রাচীর তো আর ট্র্যাক ফিল্ডের রাউন্ড ট্র্যাক না যে গোল হবে ,এইটা তো লম্বা এলিপ্স আকৃতির না ....
এবার আবুল ভাই গেদুর মাথায় একটা পারফেক্ট প্লেসিং ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোক দিলে বলেন , গেদু তোর আর বুদ্ধি হল না , ওই যে বললাম না চীনের প্রেসিডেন্ট বারাক জিঙ্গালালা আমার ফ্রেন্ড , তার রিকোয়েস্টেই তো চীন আর্মি ওই প্রাচীর কে এলিপ্স সাইজ বানিয়ে ফেলেছিল , যাই হোক এতো ক্ষন তোদের মত আহাম্মকের সাথে বকবক করে খুব খিদে পেয়েছে ,যা তো গেদু আরেকদফা ঝালমুড়ি নিয়ে আয় মামার থেকে যা বানিয়েছে না আজকে, শিউর আরো কয়েকবার খাওয়া যায় ......
একে তো ব্যাকস্ট্রোক আরেকদিকে এহেন লসের দুক্ষে ক্রিকেটের ডাক পাড়া ব্যাটসম্যানদের মত আমাদের গেদুও পা বাড়াল প্যাভিলিয়ন থুড়ি ঝালমুড়ি মামার দিকে ...............
লেখার ঘটনা এবং চরিত্রি পুরোপুরিই বাস্তব - তবে লেখকের জীবনের সাথে মিল একান্তই কাকতালীয়
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৯