[ভয়ংকর সুন্দর সুন্দরবন-হিরণ পয়েন্ট
- মোহাম্মদ সজল রহমান
শব্দ ও কারিগরি সহযোগিতায় : নাহিদ হাসান
যাত্রা শুরু করলাম ইউনেক্সো ঘোষিত অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্য হিরন পয়েন্ট সুন্দরবনের উদ্যেশে। এই মুহুর্তে আমাদের জাহাজ ছুটে চলেছে দুবলার চরকে বামে রেখে নীল কমল নদীর জলরাশি ভেদ করে। সুন্দরবনের বহু ছোট ছোট নদীর মধ্যে নীলকমল অন্যতম। যা সুন্দরবনের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই নদীর উৎপত্তি পশুর নদীর মোহনায়। এবং যার প্রান্ত মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। সুন্দরবনের মূল অংশ থেকে হিরন পয়েন্ট কে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন করেছে এই নীল কমল নদী। মূলত এই নদীর নামানুসারে হিরন পয়েন্টকে ভিন্নভাবে নীল কমলও বলা হয়ে থাকে। তবে হরিনের অবাধ বিচরণের জন্য এই স্থানটিকে হিরন পয়েন্ট হিসাবে নামকরণ করা হয়।
জাহাজ থেকে নেমে উঠতে হবে ট্রলারে। কারন আমরা নদীর কোল ঘেষে হিরন পয়েন্টের নৈসর্গিক সব দৃশ্য উপভোগ করবো। কোল ঘেষে নদীর গভীরতা কম থাকায় সেখানে জাহাজ প্রবেশ করতে পারেনা।
চারিদিক জুড়ে অথৈ জল আপনার মনকে ছোট ছোট ঢেউ এর সাথে দুলিয়ে দিবে অনায়াসে। বিস্তৃত জলরাশির ওপারেই অপেক্ষা করছে হিরন পয়েন্টের মূল বনজ সৌন্দর্য্য।
এবারে ট্রলার থেকে নামার পালা। আমরা পৌছে গেছি হিরন পয়েন্টের মূল অংশের প্রবেশদ্বারে। বাংলাদেশ বন বিভাগের এই ঘাট থেকেই হিরন পয়েন্টের মূল ভূখন্ডের উদ্যেশে যাত্রা শুরু হবে। এখানে চেষ্টা করবেন সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করার। কারন যেকোন সময়ই হয়তো সম্মুখীন হতে পারেন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সামনে পড়ার অভিজ্ঞতার। মূলত এই অঞ্চলটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উন্মুক্ত অভয়ারণ্য।
চলেছি বাংলাদেশ বন ভিভাগের অফিসের সামনে দিয়ে৷ ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্ভোধন করেন।
এখানে রয়েছে টেলিটক মোবাইল টাওয়ার। ফলে সর্বোচ্চ নেটওয়ার্ক সুবিধা পেতে সঙ্গে রাখতে পারেন টেলিটক সিম।
দাঁড়িয়ে আছি হিরন পয়েন্টের মিঠা পানির পুকুর পাড়ে। কথায় বলে বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায়। তবে কথার এই কথাকে সত্য রুপ দিয়ে সত্যিই এখানে বাঘ মহিষ সহ সকল জীবজন্তু এই পুকুরে আসে পানি পান করতে। উল্যেখ্য এই পুকুরের পানি বিশুদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় এবং দর্শনার্থীরাও প্রয়োজনে পান করে থাকে।
পুকুর পাড় থেকে বের হয়ে এবার ঢুকবো গভীর জঙ্গলের মধ্যে। দুপাশে গরান গাছের ঘন জঙ্গল।
হিরন পয়েন্টের এই অঞ্চলটিতে সর্বাধিক বাঘের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। তবে দিনের বেলা এবং জনসমাগমে বাঘের উপস্থিতি একেবারেই চোখে পড়বেনা।
ঘন এই জঙ্গলের মধ্যে একটু পর পরই এমন ছোট ছোট খাল এবং নালা ছড়িয়ে রয়েছে শিরা উপশিরার মতো। যেখানে লক্ষ্য করা যায় শ্বাসমূল।
হিরন পয়েন্ট একটি অভয়ারণ্য হওয়ায় এই স্থান প্রচুর বাঘ, হরিণ, বানর, পাখি এবং সরিসৃপের নিরাপদ আবাসস্থল। সুন্দরবন এলাকায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার অন্যতম একটি স্থান হলো এই হিরণ পয়েন্ট। এখানে দেখা পাওয়া যায় চিত্রা হরিণ, বন্য শুকর। পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বুক মাছরাঙা, হলুদ বুক মাছরাঙা, কালো মাথা মাছরাঙা, লার্জ এগ্রেট, কাঁদা খোঁচা, ধ্যানী বক ইত্যাদি। এছাড়াও এখানে রয়েছে প্রচুর কাঁকড়া এবং রঙ বেরঙের প্রজাপতি।
চলেছি মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিস এরিয়ার দিকে।
বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এই হিরন পয়েন্ট থেকেই ১৯৯৫ খ্রীস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর ১৯শ শতাব্দের সর্বশেষ পুর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহন দেখা গিয়েছিলো। যেই সূর্য গ্রহনটি স্থায়ী হয়েছিলো ২ মিনিট ১০ সেকেন্ড।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদের জন্য চালু করছে "হিরন পয়েন্ট পাইলট বেইজ রেস্ট হাউজ"।
হিরন পয়েন্টের মূল ভূখন্ড থেকে এবার বের হবার পালা। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নৌ-ঘাট থেকে ট্রলারে চড়ে পশুর নদীর মোহনার উপর দিয়ে পুনরায় বিস্তৃত জলরাশির নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হিরন পয়েন্ট এর যাত্রা সমাপ্তির সময় দূর থেকে বহুদূরে চোখ জুড়ানো নয়নাভিরাম সব দৃশ্যে আপনার মনে হবে আপনি কোন স্বপ্নের পথ দিয়ে অতিক্রম করছেন।
ছোট ছোট ঢেউ আর বিস্তৃত জলরাশির মধ্যে সূর্যের আলোক রশ্মির অনন্য ভিন্ন ধরনের মিতালি আপনার দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের এক ভিন্নরকম মাত্রা যোগ করবে।
সুপ্রিয় দর্শক এতক্ষন ধরে আমাদের অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সুন্দরবনের হিরন পয়েন্ট যাত্রার সঙ্গি হবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পরবর্তীতে এমনিই সব সুন্দর সুন্দর চোখ জুড়ানো ভিডিওগুলো সবার আগে পেতে চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল আইকনটি বাজিয়ে দিন।
দেখা হবে পরবর্তী ভিডিওতে। ততক্ষন পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৫৪