somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশনা কি সরকারকে মানতেই হবে?

২৪ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা এবং পুলিশি রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা সংশোধনের জন্য দীর্ঘ ১৩ বছর পূর্বে হাইকোর্ট বিভাগ যে যুগান্তকারী নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন সুপ্রীম কোর্টও আজ সে নির্দেশনা বহাল রেখেছেন। হাইকোর্টের নির্দেশনায় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে যা পূর্ণাঙ্গ রায়ে জানা যাবে।

বহুল আলোচিত বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ১৯৯৮ সালে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে নির্যাতনপূর্বক হত্যার ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধন চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল বিচারপতি মো. হামিদুল হক এবং বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তারসংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা এবং পুলিশি রিমান্ডসংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা সংশোধন করার জন্য একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছিলেন। নতুন আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত এ দুটি ক্ষেত্রে সরকারকে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলার জন্য হাইকোর্ট বিভাগ অভিমত দিয়েছিলেন। আদালতের দেয়া নির্দেশনায় সাতটি সুপারিশও করা হয়েছিল। সুপারিশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় নতুন উপধারা (২) সংযোজন এবং একই কার্যবিধির ১৬৭ ধারার (৩), (৪) ও (৫) উপধারাগুলো সংশোধন করা। সাথে সাথে দন্ডবিধির ২২০ ও ৩৪৮ ধারা দুটি সংশোধন করে ধারা দুটির আওতায় প্রদত্ত শাস্তির পরিমাণ বাড়াতে বলা হয়েছিল।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা সম্পর্কে নির্দেশনায় বলা হয়েছিল: ডিটেনশন (আটকাদেশ) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। এ ধারায় কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে হলে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে বিষয়টি তার নিকটাত্মীয়কে জানাতে হবে। আর রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করা হলে সঙ্গে সঙ্গে নিকট আত্মীয়কে জানাতে হবে। উভয় ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে কী কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তিন ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বলা হয়েছিল। বিশেষ ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের পর পরই মেডিকেল চেকআপ করতে হবে। গ্রেপ্তারকৃতের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করবেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় প্রদত্ত রিমান্ড সম্পর্কে নির্দেশনায় হাইকোর্ট বিভাগ বলেছিলেন: পুলিশের কাছে কোনো অভিযুক্তকে রিমান্ড দেয়া যাবে না। তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে জেলখানার আলাদা কক্ষে শুধু তদন্তকারী কর্মকর্তা তা করতে পারবেন। আদালত তার অভিমতে আরো বলেছিলেন যে, রিমান্ড দিতে হলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে নিশ্চিত হতে হবে- এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটকে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ও তার আইনজীবীর বক্তব্য শুনতে হবে। সর্বোপরি রিমান্ডের আদেশ নিশ্চিত করবেন দায়রা জজ। সেখানেও গ্রেপ্তারকৃতের বিরোধিতা বা আপত্তি করার সুযোগ থাকবে। এ ক্ষেত্রে রিমান্ড দিতে হলে সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল চেকআপ করতে হবে এবং রিমান্ড শেষে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি নির্যাতনের অভিযোগ করলে আবারো মেডিকেল চেকআপ করতে হবে। নির্যাতনের বিষয়ে চিকিৎসক নিশ্চিত হলে ম্যাজিস্ট্রেট কোনো নিয়মতান্ত্রিক আবেদন ছাড়াই সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আদালত আরো উল্লেখ করেছিলেন যে- কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে জেলখানায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে একটি কাচের ঘরে তার নিয়োজিত আইনজীবী বা আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে তা করতে হবে। যাতে তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন বা আইনজীবী কোনো প্রশ্ন-উত্তর শুনতে পারবেন না। তবে কোনো নির্যাতন করা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে পারেন।

সরকার উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালের ২ আগস্ট আপিল বিভাগে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই অন্তবর্তী নির্দেশনাগুলো আপিল বিভাগ স্থগিত করেননি। অবশেষে, দীর্ঘ শুনানীর পর আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বিভাগের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের নির্দেশনা বহাল রেখে রায় প্রদান করেন।

এখন প্রশ্ন হলো সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা মানতে সরকার বাধ্য কিনা? যার ন্যূনতম আইন সম্পর্কে জ্ঞান আছে তিনি অবশ্যই বলবেন যে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা সরকারসহ সকল নিম্ন আদালত এবং সুপ্রীম কোর্টের(আপীল বিভাগের) নির্দেশনা সরকারসহ হাইকোর্ট বিভাগ এবং অধঃস্তন সকল আদালত মানতে আইনগত ও নীতিগতভাবে বাধ্য। যদি তাই হয় তাহলে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা এবং পুলিশি রিমান্ডসংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা সংশোধন করতে সরকারের প্রতি হাইকোর্ট বিভাগ যে শুপারিশ ও নির্দশনা প্রদান করেছিল তা গত ১৩ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি কেন? উক্ত নির্দেশনায় বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপীল চলমান ছিল বলে হয়ত সরকার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেননি বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইবেন। কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট তো আপীলের অনুমতি দেবার সময় হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা স্থগিত করেননি। তাহলে গত ১৩ বছরেও হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণ কি? তবে কি সরকার সুপ্রীম কোর্টের (আপীল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ) নির্দেশনা মানতে বাধ্য নয়?

সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশনা
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×