বৃক্ষমানব বলে পরিচিত, বিরল রোগে আক্রান্ত আবুল বাজানদার ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন। দফায় দফায় অস্ত্রোপচারে তার হাতে পায়ে শেকড়ের মতো গজিয়ে ওঠা ভাইরাস, এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটর সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, বিরল এই রোগের চিকিৎসায় সফলতা অর্জন করলেও, তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ, রোগটির নতুন করে বিস্তার ঠেকানো।
বাংলাদেশে বৃক্ষ-মানব বলে পরিচিত আবুল বাজানদার গত প্রায় ৫ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাত-পায়ে শেকড়ের মতো গজিয়ে উঠা বিরল এক রোগের চিকিৎসা দিতে তাকে গত চার মাসে দফায় –দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে বিরল এ রোগে ভুগতে থাকা আবুল বাজানদারকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তখন এনিয়ে অনেকরই ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আবুল বাজানদারের দু’হাত এবং দু’পা মোটা ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো।
পাঁচ মাস আগে তাকে যখন এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তার চোখে মুখে ছিল উদ্বেগ আর আতংকের ছাপ। কিন্তু ৫মাস পরে সেটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠে এখন তিনি আত্মবিশ্বাসী। গত ৫ মাসে আবুল বাজনদারের হাতে এবং পায়ে মোট ছয়টি অপারেশন হয়েছে। এখন মোটা ব্যান্ডেজ খুলে তাকে নিয়মিত ড্রেসিং করানো হয়। দফায়-দফায় অস্ত্রোপচার করা হলেও তার হাত-পা এখনো কর্মক্ষম হয়নি। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতে তাকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়।
আবুল বাজনদারের হাতে-পায়ে শিকড় গজিয়ে উঠাকে ‘ট্রিম্যান সিনড্রোম’ বলে বর্ণনা করেছিলেন চিকিৎসকরা। বিরল এ রোগ পৃথিবীতে এর আগে মাত্র দু-একজনের হয়েছিল বলে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা জানতে পেরেছেন। আবুল বাজানদারের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণকারী চিকিৎসক দলের অন্যতম ডা: সামন্ত লাল সেন মনে করেন অগ্রগতি এখনো পর্যন্ত ভালোই হচ্ছে। মি: সেন বলেন, “ আমরা প্রথম দিকে তো তার আঙুলগুলো আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করতে পারতাম না। কোনটা বুড়ো আঙুল, কানিয়া আঙুল। অপারেশনের মাধ্যমে আমরা তার আঙুলগুলো আলাদা করতে পেরেছি।” মি: সেন আশা করেন, বাজনদারের হাতে আরো কয়েকবার অস্ত্রোপচার করলে সে হাত দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে, নিজের কাপড় পড়তে পারবে এবং বাচ্চাকে কোলে নিতে পারবে।
ইতোমধ্যে মি: বাজানদার ও পরিবারের সদস্যদের শরীরের টিস্যুসহ কয়েকটি নমুনা পরীক্ষার জন্য আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে। আমেরিকা থেকে সেগুলোকে পরীক্ষার জন্য আবার চীনে পাঠানো হয়েছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হতে চান, মি: বাজনদারের হাতে-পায়ে গজিয়ে উঠা শেকড়ে মতো বিষয়গুলো বাহ্যিক নাকি শরীরের কোষ এবং রক্তে এর অস্তিত্ব আছে। মি: সেন জানান, “ যদি তারা (বিদেশী পরীক্ষাগারে ) দেখেন যে এটা আবারো হতে পারে, তাহলে কী করতে হবে সে বিষয়ে তারা পরামর্শ দেবে।”
চিকিৎসকরা বলছেন আবুল বাজানদারের চিকিৎসা একটি দীর্ঘ-মেয়াদী প্রক্রিয়া। তাকে যদি সুস্থ করা যায় তাহলে বিষয়টি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হবে বলে আশা করেন চিকিৎসকরা।