somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কেমন নির্মমতা!

২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের আর দশটা গ্রামের মতো ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভগবান নগর গ্রাম। আলো আছে, বাতাস আছে, চোখ জুড়ানো সবুজ প্রকৃতি আছে, বহতা নদী আছে, মানুষ আছে, কর্ম চাঞ্চল্যতা আছে- সবকিছুই ঠিক আছে অন্যান্য গ্রামের মতো। শুধু জীবনযাত্রা আর কষ্টের পসরা বেড়ে গেছে এ্যাপীর। এ্যাপী একটি মেয়ে নাম। মেয়েটার বাবার নাম লাল্টু মণ্ডল। মায়ের নাম লতিফা বেগম। শৈলকুপার ভাটই হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী। ৬মাস আগে বিয়ে হয়েছিল এরশাদের সাথে। ঘরে সতীন ছিল। নাম লাইলী। লাইলী সহজে মেনে নিতে পারেনি এ্যাপীকে। নির্যাতন করতো। নানাভাবে। একদিন স্বামীর মায়া ত্যাগ করে সংসার ত্যাগ করে চলে আসে বাবার বাড়িতে। এরশাদ আবারো যাতে এ্যাপীকে বিয়ে করে সংসার গড়তে না পারে সেজন্য ৮ জানুয়ারি লাইলী ও তার ভাই কামাল মিলে এসিডে ঝলসে দেয় এ্যাপীর মুখ (পরিবারের অভিযোগ)। মামলা হয় সতীন লাইলী বেগমসহ দুইজনের নামে। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা। মোবাইল ফোনে বারে বারে হুমকি দেয় মামলা তুলে নিতে। অন্যথা হলে আবারো এডিসে ঝলসে দেয়া হবে বলে ভয় দেখায়। এদিকে ঝিনাইদহ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তত্বাবধানে ১৮ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা শেষে গত ২৮ জানুয়ারি এ্যাপীকে নিয়ে বাড়ি ফেরে তার পরিবার। আগের পোড়া ঘা তখনো সেরে ওঠেনি। রাত ১টার দিকে দ্বিতীয়বারের মতো দুর্বৃত্তদের ছুড়ে দেয়া এসিডে এ্যাপীর সেই চেনা মুখ হয়ে যায় অচেনা। বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্তকারী অফিসার আহসান হাবিব তার দায়িত্বহীনতার কথা অস্বীকার করে জানান, আসামী গ্রেফতারে তাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সত্যি যদি আন্তরিক থাকতো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তাহলে দ্বিতীয়বারের মতো এডিসে ঝলসে যেত না এ্যাপীর মুখ। যদি ঘটনাটি এমনই হয় তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কেন তাদের খুঁজে পাচ্ছে না? তাহলে ধরে নিতে হবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এরশাদ-লাইলী-কামালের চেয়ে দুর্বল?
এই গর্হিত কাজের সাথে লাইলী নামের এক নারী জড়িত বলে অভিযোগ পরিবারের। যদি সত্যি তাই হয় তাহলে একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীকে কীভাবে এতো বড় সর্বনাশ করতে পারে!
দেশে কমছে না এসিড নিক্ষেপের ঘটনা। ঝলসে যাচ্ছে এ্যাপীদের মতো শত নারীদের শরীর। কখনো সখনো অপরাধীর কালো টাকার কাছে ম্লান হয়ে যাচ্ছে ন্যায় বিচারের আশা। তৎপর হচ্ছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ধরা পড়ছে না সন্ত্রাসীরা। তা না হলে এরশাদ, লাইলীরা কোনো মতে গা ঢাকা দিতে পারতো না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ‘আসামী পাচ্ছি না’ বলে যে দায় মুক্তির ঢেঁকুর তুলছে তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না বিবেকবান মানুষ। প্রতিবাদের ভাষা ফুটে উঠেছে তাদের মুখে। এ্যাপীকে দ্বিতীয়বারের মতো এসিডে ঝলসে দেবার পর দেশের সাত জেলার নয় স্থানে মানববন্ধন হয়েছে। কুষ্টিয়া, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী), মেহেরপুর, বগুড়া, যশোর, কেশবপুর (যশোর), ঝিনাইদহর ছাত্র, শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী এগিয়ে এসেছে মানববন্ধন করে এডিস নিক্ষেপের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে। ১৯ মার্চ’১২ একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি মাসে গড়ে ১০ জন নারীর মুখ ঝলসে যাচ্ছে এসিডে। প্রতি তিন দিনে এসিডে ঝলসে যায় একজন নারীর মুখ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশু ও পুরুষরাও এই এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। নারী নির্যাতন রোধে দেশে কঠোর আইন থাকলেও কেন বন্ধ হচ্ছে না এই পৈশাচিকতা?
এসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী গত ১২ বছরে দেশে এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন দুই হাজার ৪০২ জন। চলতি বছর শুধু জানুয়ারি মাসেই এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ৯৩ জন। এসব ক্ষেত্রে আইনি প্রতিকারের চিত্রও উদ্বেগজনক। মামলা দায়ের কিংবা পরিচালনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। এসিড-সন্ত্রাস প্রতিরোধে সরকার ২০০২ সালে ‘এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন’ ও ‘এসিড অপরাধ দমন আইন’ নামে দু’টি আইন প্রণয়ন করে। এ আইনে বলা আছে, এসিড নিক্ষেপকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। অথচ বিগত ১২ বছরে প্রায় আড়াই হাজার নারীর মুখ এসিডে ঝলসে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামীর মৃত্যুদ- কার্যকর হয়নি। দেশে যখন এমন চিত্র বিদ্বমান তখন অপরাধীরা তো ধরাকে সরাজ্ঞান করবেই। এসিডের সহজলভ্যতা রোধেও আইন আছে; কিন্তু তার পরও হাত বাড়ালেই মিলছে এসিড।
নারীর প্রহিংসতা, বর্বরতা, পৈশাচিকতা রোধে সম্মিলিতভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনি প্রতিকারের কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন কর্মসূচি নিতে হবে যাতে অপরাধী কিংবা সমাজবিরোধীরা কোথাও জায়গা না পায়। পাশাপাশি প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে যাতে গড়িমসি না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০৪

বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...

ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকৃতপক্ষে একক কোনো কাহিনী নির্ভর বই না। 'ময়মনসিংহ গীতিকা' হচ্ছে কবিতা বা গানের সংকলন, যা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের মুখেমুখে প্রাচীন কাল থেকে ভিন্নভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাটারি অটো রিক্সা বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ?

লিখেছেন চোরাবালি-, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮



বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড় হল এখন অটো রিক্সা, স্বল্প পরিশ্রমে সহজ আয়ের মাধ্যম হিসাবে খুবই জনপ্রিয় একটা পেশা। স্বল্প ভাড়ার জন্য অনেক মানুষ এখন পায়ে হাঁটা ভুলেই গেছে আর হাঁটার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিয়াউর রহমান

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৪



চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি যাত্রা করবেন নাকি রাজনীতি করবেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১১


ইদানীং দেশে রাজনৈতিক দল গজানোর হার দেখলে মনে হয়, দেশের মাটিতে এখন ধান নয়, গজায় দল। ভোট এলেই বুঝি এই দলগুলো দুলে ওঠে, আর না এলেই পড়ে থাকে ফাইলের পাতায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×