এই গর্হিত কাজের সাথে লাইলী নামের এক নারী জড়িত বলে অভিযোগ পরিবারের। যদি সত্যি তাই হয় তাহলে একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীকে কীভাবে এতো বড় সর্বনাশ করতে পারে!
দেশে কমছে না এসিড নিক্ষেপের ঘটনা। ঝলসে যাচ্ছে এ্যাপীদের মতো শত নারীদের শরীর। কখনো সখনো অপরাধীর কালো টাকার কাছে ম্লান হয়ে যাচ্ছে ন্যায় বিচারের আশা। তৎপর হচ্ছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ধরা পড়ছে না সন্ত্রাসীরা। তা না হলে এরশাদ, লাইলীরা কোনো মতে গা ঢাকা দিতে পারতো না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ‘আসামী পাচ্ছি না’ বলে যে দায় মুক্তির ঢেঁকুর তুলছে তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না বিবেকবান মানুষ। প্রতিবাদের ভাষা ফুটে উঠেছে তাদের মুখে। এ্যাপীকে দ্বিতীয়বারের মতো এসিডে ঝলসে দেবার পর দেশের সাত জেলার নয় স্থানে মানববন্ধন হয়েছে। কুষ্টিয়া, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী), মেহেরপুর, বগুড়া, যশোর, কেশবপুর (যশোর), ঝিনাইদহর ছাত্র, শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী এগিয়ে এসেছে মানববন্ধন করে এডিস নিক্ষেপের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে। ১৯ মার্চ’১২ একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি মাসে গড়ে ১০ জন নারীর মুখ ঝলসে যাচ্ছে এসিডে। প্রতি তিন দিনে এসিডে ঝলসে যায় একজন নারীর মুখ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশু ও পুরুষরাও এই এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। নারী নির্যাতন রোধে দেশে কঠোর আইন থাকলেও কেন বন্ধ হচ্ছে না এই পৈশাচিকতা?
এসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী গত ১২ বছরে দেশে এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন দুই হাজার ৪০২ জন। চলতি বছর শুধু জানুয়ারি মাসেই এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ৯৩ জন। এসব ক্ষেত্রে আইনি প্রতিকারের চিত্রও উদ্বেগজনক। মামলা দায়ের কিংবা পরিচালনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। এসিড-সন্ত্রাস প্রতিরোধে সরকার ২০০২ সালে ‘এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন’ ও ‘এসিড অপরাধ দমন আইন’ নামে দু’টি আইন প্রণয়ন করে। এ আইনে বলা আছে, এসিড নিক্ষেপকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। অথচ বিগত ১২ বছরে প্রায় আড়াই হাজার নারীর মুখ এসিডে ঝলসে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামীর মৃত্যুদ- কার্যকর হয়নি। দেশে যখন এমন চিত্র বিদ্বমান তখন অপরাধীরা তো ধরাকে সরাজ্ঞান করবেই। এসিডের সহজলভ্যতা রোধেও আইন আছে; কিন্তু তার পরও হাত বাড়ালেই মিলছে এসিড।
নারীর প্রহিংসতা, বর্বরতা, পৈশাচিকতা রোধে সম্মিলিতভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনি প্রতিকারের কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন কর্মসূচি নিতে হবে যাতে অপরাধী কিংবা সমাজবিরোধীরা কোথাও জায়গা না পায়। পাশাপাশি প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে যাতে গড়িমসি না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৪৪