ভারত মহাসাগরীয় এলাকা প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর ও পাকিস্তানের করাচিতে চীনা সাবমেরিনের ঘোরাফেরায় দুশ্চিন্তায় নরেন্দ্র মোদির ভারত সরকার৷ ভারতের গা ঘেঁষে চীনের ডুবোজাহাজ কলম্বো ও করাচিতে৷ এ যাতায়াতের মাধ্যমে ভারতের নাভিশ্বাস তুলে দিচ্ছে চীন৷
ভারত জানতে পেরেছে, আরব সাগরের ভারতীয় এলাকা ঘেঁষে গত ২২ মে চীনের নৌসেনার (পিপলস রিপাবলিক আর্মি-নেভি, সংক্ষেপে পিএলএ-এন) একটি ইয়ুন-ক্লাস ৩৩৫ সাবমেরিন করাচি বন্দরে আসে৷ এক সন্তাহ দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় রসদ নেওয়ার পর আবার সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করে চীনা সাবমেরিনটি৷
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি সময় পর্যন্ত কলম্বোতে একাধিকবার চীনা সাবমেরিনের আনাগোনায় ভারত বারবার শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়ে এসেছে৷ যদিও এখনও পাকিস্তানকে কিছু বলেনি মোদী সরকার৷ ভারত সরকারের আশঙ্কা, জলদস্যুবিরোধী অভিযান চালানোর নামে চীন আসলে নিজেদের পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন এবং চিরাচরিত সাবমেরিনগুলোকে মহড়া দিয়ে সামরিক পেশীশক্তি বাড়াচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক সমুদ্র এলাকা তো সব দেশের জন্যই খোলা এবং কোনো বিশেষ দেশের সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণসীমার বাইরে তাই ভারত সরকার চাইলেও কোনো কড়া পদক্ষেপ নিতে পারছে না৷
পরসঙ্গত, করাচিতে যাওয়া চিনা সাবমেরিনটি ডিজেল-ইলেকট্রিক শক্তিচালিত, পরমাণু শক্তিচালিত (নিউক্লিয়ার) নয়৷ তবে এ ধরনের ইয়ুন-ক্লাস ডুবোজাহাজে গতি বৃদ্ধির জন্য বায়ু-নিরপেক্ষ প্রোপালসান (এআইপি) ব্যবস্থা রয়েছে, যা জলের তলায় সাবমেরিনটির সহ্যশক্তি এবং ধ্বংসক্ষমতায়ও কয়েক গুণ বাড়াতে সাহায্য করে৷ নিউক্লিয়ার সাবমেরিন যেখানে টানা কয়েক মাস জলের তলায় থাকতে পারে, সেখানে ডিজেল-ইলেকট্রিক ইয়ুন-ক্লাস সাবমেরিনকে অক্সিজেন নেওয়া এবং ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য কয়েক দিন পরপর জলের উপরে মাথা তুলতেই হয়৷ তবে নিজেদের বন্ধু দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সাবমেরিন সংক্রান্ত সম্পর্ক সম্প্রতি বেশ শক্তপোক্ত করেছে চীন৷ চিরাচরিত ধরনের মোট আটটি সাবমেরিন তৈরির জন্য ইসলামাবাদের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বেজিং৷ চীনের সেই প্রস্তাবিত সামমেরিনগুলির চারটিই পাকিস্তানে তৈরি হবে৷
অন্য দিকে, ভারতীয় নৌসেনায় সাবমেরিনের সংখ্যা চীনের তুলনায় অনেকটাই কম৷ ভারতের হাতে ১৩টি চিরাচরিত অর্থাৎ ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন রয়েছে৷ এর মধ্যেও যে কোনো সময় প্রয়োজন হলে সেগুলোর মধ্যে মাত্র অর্ধেক সংখ্যক (সাকুল্যে ৭টি) সাবমেরিনকে ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় পাওয়া যাবে৷ আর নিউক্লিয়ার শক্তিচালিত সাবমেরিন রয়েছে মাত্র একটি, তা-ও রাশিয়ার থেকে লিজে নেওয়া৷ আর চীনের হাতে রয়েছে ৫১টি চিরাচরিত এবং ৫টি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন৷ তা ছাড়াও, খুব শিগগিরই চীন পাঁচটি উন্নতমানের জেআইএন-ক্লাস নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নিজেদের নৌ-সেনায় যুক্ত করতে চলেছে, যেগুলোতে ৭ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পাল্লা-বিশিষ্ট নতুন জেএল-২ মিসাইল রাখার ব্যবস্থাও থাকবে৷ এ পরিস্থিতিতে যথেষ্ট বিব্রতকর চিন্তায় আছে নরেন্দ্র মোদির ভারত সরকার৷