somewhere in... blog

`কে বলে আজ তুমি নেই.................' জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করা হোক

বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, মোহাম্মদ রফিক, মফিদুল হক, আবুল হাসনাত, ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের, তুষার দাশ, নাসরিন জাহান, আহমাদ মোস্তফা কামাল, হামিদ কায়সার, প্রশান্ত মৃধা, শামীম রেজা, সফেদ ফরাজী, আশফাকুর রহমান

সত্যিকার অর্থে কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের কোনো দেশ ছিল না। যদিও আজ তিনি এসবের উর্ধ্বে। দেশভাগের পর পরই পশ্চিমবঙ্গ থেকে সপরিবারে তিনি ঢাকায় এসে বসবাস করতে শুরু করেন। শৈশবের সেই অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতা তিনি বহন করেছেন পুরো জীবন। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়, সৃজনকর্মে, এমনকি তার জীবন-যাপনেও এ প্রসঙ্গটি ওঠে এসেছে নানাভাবে। যদিও তৎকালীন ঢাকাকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য জগতের একজন মূর্তিমান পুরুষ হিসেবে সকলের নজর কাড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি তার। বই প্রকাশের পূর্বেই তার লেখা নিয়ে লিখিতভাবে আলোচনা তাকে নিয়ে আসে পাদপ্রদীপের আলোয়।
জন্মভূমি, দেশ ও বাংলা সংস্কৃতির মধ্যে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা এই মানুষ ও তার কাজকে আমরা কেন বার বার স্মরণ করি? বাংলা সাহিত্যের প্রবহমানতায় তার কী অবদান? বাংলা ভাষা নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে তার কলমে। বাংলা ভাষা সম্পর্কে আলাদা ভাবনার কথা তার সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন তিনি। ভাষার গীতল বৈশিষ্ট্য তার রচনায় প্রতীয়মান হয়েছে বিচিত্রভাবে। সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষার অপূর্ব ব্যবহারে তার সৃজনশীল মতা পাঠক সহজেই বুঝে নেয়। সবচে’ বড় ব্যাপারটি হলো, বাঙালি জাতির জীবনে মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল ঘটনা তার রচনার প্রধান অবলম্বন। মুক্তিযুদ্ধের এমন ভিন্ন ইতিহাস পাঠ সমকালীন বাংলা সাহিত্যে বিরল। তার জীবন আমার বোন উপন্যাসটি যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরই অসামান্য এক দলিল। এছাড়া অনুর পাঠশালা, কালো বরফ, মাটির জাহাজ, নিরাপদ তন্দ্রা, খেলাঘর, অশরীরী, পাতালপুরী প্রভৃতি উপন্যাস ও প্রতিদিন একটি রুমাল, মানুষ মানুষ খেলা ছোটগল্পগ্রন্থে তিনি তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
আজ ২ অগ্রহায়ণ। কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের ৭০তম জন্মদিন। জন্মেছিলেন ১৯৪০ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণার বারাসাতে। বাবা সিরাজুল হক ছিলেন অর্থ বিভাগের উপ-সচিব, মা মাহমুদা ছিলেন গৃহিণী। দশ/বার বছর বয়সেই সপরিবারে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশে। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ১৯৫১ সালে ঢাকার আজিমপুর কলোনিতে উঠেন তারা। ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে মাধ্যমিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। পরবর্তীতে জড়িয়ে পড়েন পারিবারিক ব্যবসায়।
খুব ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির শুরু করেছিলেন মাহমুদুল হক। আজিমপুর কলোনিতে থাকার সময় তার পরিচয় হয় কবি মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহর সঙ্গে। তার অনুপ্রেরণায়ই লেখালেখির শুরু। এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক শহীদ সাবেরের সংস্পর্শে তার চিন্তাচেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তার প্রথম বড়দের গল্প উঁচু তলার সিঁড়ি প্রকাশিত হয় কবি আহসান হাবীব সম্পাদিত সাহিত্য সাময়িকীতে। ছাত্র অবস্থায়ই যুক্ত হন বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে গেছেন আজীবন। মাহমুদুল হক ও হোসনে আরা কাজল দম্পতির দুই সন্তান- ছেলে শিমুল হক সিরাজী টোকন, মেয়ে তাহমিনা মাহমুদ মলি। টোকন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে আর মলি কানাডায়।
২১ জুলাই ২০০৮ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেন কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হক। তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। ১৯৮২ সালের পর থেকে তিনি নেন কলম বিরতি। যা অব্যাহত ছিল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এর কারণ আজও আমাদের কাছে রহস্যময়। ১৯৭৭ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ করেননি তিনি। সকলের মধ্যমণিতে থাকা এই মানুষটি শেষ জীবনেও ছিলেন এসব থেকে দূরে।
বাংলা সাহিত্যের এমন অমর স্রষ্টাকে কি আমরা যোগ্য সম্মান দিতে সক্ষম হয়েছি? তার মৃত্যুর পর সুধী সমাজের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাকে সমাহিত করার স্থানটিকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু তার মৃত্যুর প্রায় দেড় বছর পরও সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। ইতিমধ্যেই আরেক প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শহীদুল জহিরের সমাহিত করার স্থানটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাহলে মাহমুদুল হক কেন নয়? অতিসত্বর তাকে সমাহিত করার স্থানটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এছাড়াও তার নামে একটি রাস্তা ও স্মৃতি পাঠাগার স্থাপন করা হোক। আমরা এ ব্যাপারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এবং অতিদ্রুত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
একটি জাতির ইতিহাস নির্মাণ হয় তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সৃজনশীল প্রয়াসের ভেতর দিয়ে। যাদের অবদানে এই ইতিহাস তৈরি হয় জাতি তাদের স্মরণ করে কৃতজ্ঞচিত্তে। অন্যদিকে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের খুঁজে নেয় অনুপ্রেরণা পাওয়ার নিয়ামক হিসেবে। আমরা যদি এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হই তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে কী জবাব দিবো ? আজকের দিনে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে নিভৃতচারী কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের ৭০তম জন্মদিনে তার স্মৃতির প্রতি আমাদের বিনীত শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখকবৃন্দ: মাহমুদুল হক সুহৃদ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১২
৩৭৫ বার পঠিত
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×