১)
- শুনেছো?
- হুম
- কেমন হয়েছে?
- সত্যি বলবো? নাকি বানিয়ে বলবো?
- বানিয়ে বলো। তোমার বানানো কথা ভালো লাগে।
- ঘেন্না লেগেছে শুনে! মনে হয়েছে বমি করে দেই ! আমার বিড়ালটা পর্যন্ত হড়হড় করে ঘিয়া কালারের বমি করে দিয়েছে।
- বাহ ! চমৎকার ! এত্তো সুন্দর করে কিভাবে মিত্থ্যা কথা বলো! আচ্ছা, এবার সত্যি সত্যি বল!
- আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে সুন্দর সুর! তুমি এতো সুন্দর সুন্দর সুর কিভাবে বানাও? কখন চিন্তা কর?
সুহৃদ চারুকলার ছাত্র। সারাদিন প্রেম করে! প্রেমিকার নাম সুমনা। সুহৃদের জীবন বলতে এখন দুইটা জিনিস। এক – সুমনা, দুই – সুর ! মাত্র ২১ বছর বয়সে অসাধারণ সব সুর সৃষ্টি করে সারা দেশে নাড়াচাড়া ফেলে দিয়েছে! সারাদিন শুধু কি-বোর্ড, বাঁশি আর বেহালা বাজায়, আর ফোনের ঐ পাশে সুমনা মন দিয়ে শুনে। সুমনা অবশ্য সুহৃদকে প্রথম দিকে পাত্তাই দেইনি ! চালতা আচার থেকে শুরু করে মাথার ক্লীপ, গরমে কাগজের পাখা, শীতে কোত্থেকে কোত্থেকে ফ্লাক্স ভর্তি কফি নিয়ে সুমনার ক্যাম্পাসে হাজির হয়ে যেতো ! সুমনা প্রচন্ড বিরক্তের ভঙ্গী করতো, দুই-একটা ঝাড়ি দিতো। সেই ঝাড়ি খেয়ে সুহৃদের মুখের হাসি একান-ওকান বিস্তৃত হতো। আরো পুর্ণ উদ্যমে সে সুমনার পিছে লেগে থাকতো।
২)
দু বছর আগের কথা। সুমনা এই মাত্র ক্যাফেটেরিয়াতে সুহৃদকে তার বান্ধবীদের সামনে প্রচন্ড অপমান করলো। “বস্তির ছেলেদের মতো জামা-কাপড় পরো, মাথার চুলটা পর্যন্ত আচড়াওনা, জীবনে শেভ করেছো বলেও মনে হয়না, কি যোগ্যতা নিয়ে আমার কাছে আসো” - আরো অনেক কিছু! সুহৃদ হাসি মুখে সব শুনলো। সুমনা চুপ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, এতো আজে বাজে কথা শুনেও কিভাবে একটা মানুষ এরকম করে আধা হলুদ দাঁত বের করে তাকিয়ে থাকতে পারে ! লজ্জা শরমের অভাব নাকি মানষিক ভাবে ভারসাম্যহীন !
“ সুমনা, বিশ্বাস করো। আমি তোমার এতো কথায় কিছুই মনে করিনি। তুমি যা যা বলেছো, সবই সত্যি। আমি আসলেই এক পাঞ্জাবী ১৫ দিন পরে ঘুরি। আমার আসলেই মাথার চুল আচড়ানোর জন্য চিরুনী নেই। আমার দাড়িতে উকুন আছে বলে অনেকের ধারণা। দুই-তিন দিনে একবার গোসল করি, যদি মনে পরে ! এইসব আমি জেনেও তোমার কাছে শুধু একটা জিনিস চাইবো! শুধু একটা সন্ধ্যা ! আমার সাথে শুধু আজকের সন্ধ্যাটা এক কাপ চা খাও। আর কোনোদিন আমি তোমাকে বিরক্ত করবোনা।”
সুমনা আধা ঘন্টা ধরে সুহৃদকে লক্ষ্য করছে। চুপ করে এক নজরে লেকের দিকে তাকিয়ে থাকে ১৫ মিনিট, তারপর কি যেনো পেন্সিল দিয়ে লিখে খাতায়। আবার, ধ্যান ধরে লেকে তাকিয়ে থাকে, আবার লিখে! কি এতো লিখে পাগলটা ! পড়াশুনার ভান ধরে নাকি অন্য কিছু! সুমনা কাছে গেলো।
“বলো, কি জন্য ডেকেছো? চা খাবে? চা কই ? চা অর্ডার দাও। চা খেয়ে চলে যাবো।আমার টিউশনি আছে”
“ আমি আজকে গোসল করেছি। আড়ং থেকে একটা নতুন পাঞ্জাবীও কিনেছি। মাথায় তেল দিয়ে আধা ঘন্টা বসে ছিলাম, ছোটো বোন বললো, এটাকে নাকি চাম্পি না টাম্পি কি একটা বলে। তারপর শ্যাম্পু করলাম। এখন খুবই ঝামেলা হচ্ছে, শ্যাম্পু করায় চুল সিল্কি হয়ে গেছে, পিছন থেকে চুল চোখের সামনে এসে যাচ্ছে”, প্রমান করবার জন্য সুহৃদ জান-প্রান দিয়ে চুল পেছনে রাখবার চেষ্টা করে দেখালো।
“ থাক, আমার বিশ্বাস হয়েছে! আমার জন্য এতো কষ্ট করলে, এখন কি তোমার প্রেমে পরে যেতে হবে? পৃথিবীতে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি হবে! বই বের হবে, সেই বই বেস্ট সেলার অফ দি ইয়ার ঘোষিত হবে। বই এর নাম দিবে- “গোসল – মেয়ে পটানোর সহজ উপায়”। সুন্দরী মেয়েরা লাইন ধরে তোমার বই কিনে তোমার থেকে অটোগ্রাফ নিবে ” – সুমনা মাথা নেড়ে নেড়ে বলতেই লাগলো !
সুমনা লেকের দিকে তাকিয়ে চা খেতে লাগলো। সুহৃদের দিকে তাকাতে মেজাজ খারাপ লাগছে। সে তার বেহালা বের করে রবীন্দ্রনাথ টাইপ একটা ভাব নেবার চেষ্টায় আছে। উদাস উদাস মুখে লেকের দিকে তাকিয়ে আছে, সন্ধ্যার হলুদ আর লাল আলো তার মুখে পরে কেমন একটা রবী বাবু টাইপের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। সুমনা সেদিকে না তাকিয়ে চা খেতে লাগলো। হঠাত সুমনা বিস্ফারিত চোখে চা এর কাপের দিকে তাকিয়ে রইলো ! তার কাপের চা নিজে নিজেই কাপছে! শুধু কাপছে বললে ভুল হবে, চা যেনো চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে, সে চা আবার একীভুত হয়ে যাচ্ছে। সে সুহৃদের দিকে তাকালো, তার দম বন্ধ হয়ে আসলো! সুহৃদের সারা দেহ ঘামে ভিজে একাকার! সে খুব শক্ত ভাবে বেহালায় কিছু একটা করছে। আস্তে আস্তে সুমনা কিছু একটা শুনতে পেলো! খুব চিকন একটা সুর, আস্তে আস্তে তীব্রতা বাড়তে থাকলো। কাপ থেকে চা যেনো ছিটকে বেড়িয়ে আসবে। সুমনার মনে হলো, সে পৃথিবীতে নেই। চোখ বন্ধ করে সে বেহালার সুর শুনতে লাগলো। সুমন কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা, কেনো তার বুক ফেঁটে কান্না আসছে! কি এমন আছে এই বেহালার সুরে ! তার বন্ধ চোখ নোনতা পানিতে ভেসে যাচ্ছে। সে চোখ খুললো। সুহৃদ তখনো বাজিয়ে চলেছে, তার ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে, তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে পাগল হয়ে যাবে! সুমনা সুহৃদকে জড়িয়ে ধরলো, কানে কানে বললো – “সুহৃদ, আমি তোমাকে ভালোবাসি”
৩)
- বাবা, আমি বিয়ে করবো।
- গুড ! তোমার বয়স যেনো কতো হলো?
- তেইশ।
- আর মেয়ের?
- তেইশ।
- ভেরী গূড! তো, বাসা ভাড়া করে ফেলেছো?
- মানে কি?
- বৌ নিয়ে কি রাস্তায় থাকবে নাকি? এই বাসায় তো জায়গা হবেইনা! অসম্ভব ব্যাপার! অন্ততঃ আমি যতোদিন বেঁচে আছি। তোমার জন্য সর্বোচ্চ যা করতে পারি, তোমার কালাম চাচাকে বলে দিতে পারি সে যাতে তোমার থেকে বাসা ভাড়া দু হাজার টাকা কম রাখে। এর বেশী আমার থেকে আশা করোনা।
- বাবা, আমি তো শখে বিয়ে করছিনা! আমি নিরুপায়!
- আই এম নিরুপায় টু মাই পুত্র! নাও, হারিয়ে যাও! মানে, গেট লস্ট !
সুহৃদ দ্রুত কিছু হিসেব করে ফেললো মনে মনে। মিউজিক ইন্ড্রাস্টীতে তার বেশ ভালো একটা অবস্থা এখন। তার ভালোই আয় হচ্ছে। সে চাইলে সুমনাকে নিয়ে সংসার করতে পারে এখন। খোর্মা খেয়ে মসজিদে বিয়ে পড়িয়ে কালাম চাচা’র বাড়িতে বৌ নিয়ে উঠলো সুহৃদ। সুমনার বাবা এখন এপলোতে। তিনি মৃদু হার্ট এটাক করেছেন।
- বিয়ে তো হয়ে গেলো! আমার অবাক লাগে, তোমার মতো একটা ভ্যান্দা মার্কা ছেলেকে আমি বিয়ে করেছি! কি অস্থির অবস্থা! তুমি কিভাবে আমাকে পটালা ! এর আগে কয়টা মেয়ে পটিয়েছো এইভাবে?
- সত্যি বলবো নাকি বানিয়ে বানিয়ে?
- বানিয়ে বানিয়ে! বানিয়ে কথা বলতে আমি খুব মজা পাই। এতে ক্রিয়েটিভিটির একটা ব্যাপার থাকে!
- বানিয়ে কিংবা সত্যি, একটাই কথা বলি – তুমিই প্রথম। তুমিই খুব সম্ভব শেষ!
- খুব সম্ভব মানে? তোর সাহস বেশী বেড়ে গেছে? বিয়ে করে পার পেয়ে গেছিস ভেবেছিস ?
সারারাত সুমনার প্যান প্যান চলতেই থাকলো। লাল জামদানী পরা এক অতিমানবীর প্যান প্যান শুনাটাও অনেক আনন্দময়। সুহৃদ বারবার মনে মনে বলতে থাকলো, “ আল্লাহ! তুমি মহান”
৪)
ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে সুমনা বারান্দায় এসে সুহৃদের কাধে হাত রাখলো।
- কি ব্যাপার? ঘুমাবেনা?
- উহু।
- সারাদিন এমন চুপ করে কি শুনো?
- সুর। চারিদিকে অনেক সুর, অনেক। তোমার আমার ধারণার বাইরে! প্রতিটা গাছের, প্রতিটা পাখির আলাদা আলাদা সুর। বিশ্বাস করবে, আমি মাঝে মাঝে তোমার ভেতর থেকেও মায়া ভরা একটা সুর শুনতে পাই! চুপ করে খুব মন দিয়ে শুনলে মেঘ থেকেও সুর শোনা যায়। বর্ষার মেঘের সুর এক রকম, শরতের টা আলাদা! শরতের মেঘের সুরটা কেমন যেনো হাই নোটের আবার বর্ষার সুর কেমন কান্না পাওয়ার মতো!
- আজ আট-নয় বছর হয়ে গেলো, তুমি শুধু চুপ করে থাকো আর কি যেনো শুনো। তুমি চাইলেই আবার মিউজিক শুরু করতে পার। শুধু শুধু কেনো নিজেকে, আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছো? এতো বড় একটা গড গিফটেড প্রতিভাকে কেনো কাজে লাগাচ্ছোনা? দুটা টাকাও তো আসতো! কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতা করে আমি কিইবা পাই! না পারি নিজের জন্য কিছু কিনতে না পারি তোমাকে একটা পাঞ্জাবী কিনে দিতে। বাবুর পেছনেই সবটা শেষ। তুমি কেনো এমন হয়ে গেলে? আমি তো তোমার সুরেই তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। এভাবে কেনো সব ছেড়ে দিলে?
- সুমনা। আমি কিছুই ছাড়িনি। আমি শুধু ইন্ড্রাস্টি থেকে বেড়িয়ে এসেছি। আর কিছুইনা। আর কয়েকটা দিন, প্লীজ। আর কয়েকটা মাস, আমি কিছু একটা বানাতে চাই। খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছি। পৃথিবীকে আমি এমন এক সুর দিতে চাই, যে সুর এর আগে কখনো কেউ শুনেনি। যে সুর, স্রষ্টা আর কাউকে ভাবার অবকাশ দেননি। আমি বানাবো সুমনা, তুমি ভরসা রাখো আমার উপর। আর কয়টা দিন।
- কি লাভ? কি হবে তারপর? আমাদের অবস্থা বদলাবে? গত আট বছরে প্রতিটা মুহুর্ত আমি কিভাবে কাটিয়েছি, তুমি সেগুলো আমাকে এনে দিতে পারবে? আট বছর ধরে বলতে পারবে একটা বারের জন্য আমাকে কাছে টেনে নিয়েছো? গভীরভাবে আমায় ভালোবেসেছো? প্রতিটা রাত আমি দরজায় দাঁড়িয়ে কাটাতাম, তুমি? তোমার বেহালা নিয়ে বারান্দায় রাত কাটাতে। জীবনটাকে কেনো এমন করে দিলে তুমি?
- তোমার একটা প্রশ্নেরও আমি জবাব দিতে পারবোনা সুমনা। তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমাকে আর কটা দিন সময় দাও। আমি কাজ শেষ করে এনেছি প্রায়।
- সুহৃদ।
- বলো
- আমি তোমাকে ভালোবাসি। বাবা-মা ছেড়ে যদি তোমার মতো একটা ভ্যান্দা ছেলের সাথে জীবন কাটাবার রিস্ক নিয়ে এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে আসতে পারি, তোমাকে আরো কিছু সময় ও দিতে পারবো।
বাবু কাঁদছে, কি তীক্ষ্ণ সে কান্না। সুমনা দৌড়ে গেলো বাবুকে আদর করতে। সুহৃদ মন দিয়ে সে কান্না শুনছে। সে কান্নাতেও লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক এক সুর। সুহৃদ খুব মন দিয়ে সে কান্না শুনতে লাগলো আর খাতায় নোট করতে লাগলো।
৫)
প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা বাশি বাজানোর কারণে ফুসফুসে ব্যাপক অসুখ বেধেছে সুহৃদের। খুব বাজে অবস্থা, সুমনা ডাক ছেড়ে কাদবে, সেই সময়টুকুও নেই। বিয়েতে মামা যেই সামান্য গয়না দিয়েছিলো সেটা আর সুহৃদের কি-বোর্ডটা বিক্রী করে হাজার পঞ্চাশেক টাকা জোগাড় হয়েছে। আরো এক লাখ টাকা লাগবে। সুমনা চোখে অন্ধকার দেখছে। সুহৃদকে ছাড়া সে কিভাবে বাঁচবে? বাবু কাকে “বাপ্পুস” বলে ডাকবে?
- মিসেস সুহৃদ?
- জ্বী।
- আমি মুশফিক খান। “নীলাম্বর” অডিও প্রোডাকশনের মালিক।
- ও।
- আপনার হাজবেন্ড, সুহৃদ আমার সাথে আগে কাজ করেছিলেন। কয়েকটি এলবাম বের করেছিলেন আমার প্রোডাকশন থেকে। ভাবলাম, এই সময় আমি আপনাদের পাশে এসে না দাড়ালে সুহৃদের সাথে বেইমানী করা হবে। শুনলাম, আরো নাকি লাখখানেক টাকা লাগবে?
- জ্বী।
- দেখুন, হায়াত-মউত সব আল্লাহর হাতে। আমরা সবাই উসিলা মাত্র! আপনি এক কাজ করুন না ! সুহৃদের কোনো সুর করা থাকলে আমার কাছে নিয়ে আসুন? আমি সেটা মার্কেটিং করার ব্যবস্থা নেই, আর নগদে আমি পরিশোধের ব্যবস্থা নেই!
সুমনা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে! এরকম সময়েও একটা মানুষ ব্যবসার কথা কিভাবে চিন্তা করে! সুমনা আস্তে আস্তে চিন্তা করতে থাকে। এছাড়া আর কিছু করারও নেই, তাদের সাহায্য করবার ও কেউ নেই। যা করার, যা সিধান্ত নেবার তাকেই নিতে হবে। সুহৃদকে বাঁচাতে হবে।
৬)
“সুহৃদ, আমি শুধু মাত্র তোমাকে বাঁচানোর জন্য ওই কাজটা করেছিলাম। আমার জন্য না, আমাদের বাচ্চার জন্য তোমার বেঁচে থাকাটা অনেক দরকার ছিলো। তোমার কাছে তোমার সুর আমাদের থেকে দামী হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে তুমি পৃথিবীর সব থেকে দামী, সুহৃদ। আমি ঐদিন তোমার খাতাটা বিক্রী না করলে তোমার চিকিতসার টাকা উঠাতে পারতাম না। আমি তোমাকে মরতে দেখতে পারতাম না, আর কি করতাম আমি? আমাকে তুমি মাফ করে দাও। আমি, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। একবার আমাকে জড়িয়ে ধরো, কানের কাছে একটাবার জিজ্ঞেস করে দেখো ফিসফিস করে। আমি আজও তোমাকে সেরকম করেই পাগলের মতো ভালোবাসি, সেই লেকের বেহালা শুনে যেভাবে বেসেছিলাম। সুহৃদ, আমাকে মাফ করে দিও। বাবু তোমাকে খুব মিস করে। আর আমি? আমাকে শুধু মাত্র আমার দুইটা বাবুর জন্য বেঁচে থাকতে হচ্ছে, অনেক জোর করে। তা না হলে, হয়তো অনেক আগেই চলে যেতাম, অনেক দূরে। যেখানে কোনো সুর নেই। আমি একটা সুরবিহীন ভালোবাসা চাই সুহৃদ। আর কিছু বলতে পারছিনা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। পাগলের মতো ভালোবাসি”
সুহৃদ চিঠিটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিলো। সে আজও বিশ্বাস করে, সে একটা মহান সুর সৃষ্টি করে যাবে। পৃথিবীতে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। এই মহাবিশ্বের বাইরে সে সুরের সৃষ্টি, সে সুর হবে পরম ভালোবাসার। পরম আবেগের। সুহৃদ বারান্দায় গেলো। মানষিক হাসপাতালের এই বারান্দা থেকে খুব সুন্দর একটা নদী দেখা যায়। নদীর নিজস্ব সুর সে ধরতে পারছে। চিকন একটা সুর, কেপে কেপে আসছে। সে চোখ বন্ধ করে শুনতে লাগলো। সারা পৃথিবীর সকল বস্তুই যেনো সুরেলা হয়ে গেলো। ঘাস, ঘাস ফড়িং, ফুলের পাপড়ি, ডাক্তার, স্টেথেস্কোপ, ঔষধের বোতল – সব কিছু থেকেই যেনো আলাদা আলাদা সুর বের হচ্ছে। সুহৃদ দু কান চেপে ধরলো।
- মা
- বলো বাবা
- বাপ্পুস কোথায়? আসে না কেনো?
সুমনা চোখের পানি আটকাতে পারলোনা। “আছে বাবা, জগতের সব সুন্দর সুরেই তোমার বাপ্পুস আছে”।
(গল্পের শিরোনামটি চমক ভাইয়ার " কিছু সুর এসে" গানটি থেকে নেয়া)