somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরেকটি শংকার জন্ম - সীসা

২১ শে মে, ২০১১ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা পুরানো গল্প দিয়ে শুরু করি! আমি তখন ক্লাসে ফোরে পড়ি। আম্মু নিয়মিত স্কুল থেকে আনা নেয়া করে। তো, আমার স্কুলের উলটা দিকে, রাস্তার ওইপাড়ে তখন নতুন একটা ফাস্টফুডের দোকান হয়েছে, নাম “মাইলস”। সে সময় টিভিতে নতুন একটা এড দেয়া শুরু করলো, “শার্ক এনার্জি ড্রিক”। আমার তো এড দেখে মাথা নষ্ট অবস্থা! বাংলাদেশে এর আগে এনার্জী ড্রিংক বলে কোনো পানীয় ছিলোনা, তাই আম্মু’র ও কোনো আইডিয়া ছিলোনা এ সম্পর্কে। আমি একদিন ছুটির পর কান্না-কাটির চুড়ান্তে উপনিত হলাম এই দাবীতে যে, আজকে আমারে শার্ক খাওয়ানো লাগবেই! স্নেহময়ী মা আমারে নিয়ে রাস্তা পাড় হয়ে মাইলসে ঢুকলেন। তখন শার্কের দাম ছিলো খুব সম্ভব ৩৫টাকা, দোকানে ৪০টাকা রেখেছিলো। আমি হাতে নিয়েই আর দেরী করলাম না, বোতোলের মুখ খুলেই মুখে চালান দিবো এমন সময়ে নাক মুখ কুচকে বমি আসলো! এমন বাজে, ওষুধের মতো গন্ধ আগে কখনো খাইনি! জিনিসটা মুখেও নিলাম না, মুখ লাগিয়ে লোকটাকে দিয়ে দিলাম। লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জানালো যে, তিনি টাকা ফেরত দিবেন না। আম্মু কিছু না বলে আমাকে নিয়ে বের হয়ে এলেন।

আমি বের হয়ে বললাম, “আম্মু, পার্ক খাবো (ওইটাও তখন বিটিভিতে নতুন এড দেয়)” আম্মু কোনোক্কিছু না ভেবেই, আকাস-বাতাস কাপিয়ে গগনবিদারী আওয়াজে এক চড় মারলো! ওইদিন আমার শার্ক, পার্ক কিছুই খাওয়া হয়নাই।

গল্পটা শেষ! ইদানিং আমার এরকম আরেকটা ব্যাপারে আম্মুর কাছে বায়না ধরা উচিত ছিলো, কিন্তু আমি খুবি চিন্তিত ব্যাপারটা নিয়ে। আমি মোটামুটি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি, একটা বস্তুর এতো দ্রুত পসার দেখে! জিনিসটা হলো, আমাদের সবার খুব বেশী পরিচিত নয়, আর তা হলো – সীসা বা আধুনিক ফ্লেভার্ড হুক্কা। আমি অবাক হয়ে যাই, মাত্র বছর দেড়েক-দুই এর মধ্যে কিভাবে ক্লাস এইট-নাইনের ছেলে-মেয়েদের হাতে এই জিনিস এসে পরলো!

গ্রাম অঞ্চলে হুক্কা খুব বেশী যে জনপ্রিয়, তাও কিন্তু না! জমিদার গোছের কিছু লোক ভাব দেখানোর জন্য গরর গরর শব্দ করে দামী হুক্কা খেত। আর কোনো দরিদ্রের খোয়াইশ জাগলে নারিকেলের খোসা দিয়ে বানিয়ে নিতো হুক্কা। গ্রাম অঞ্চলে যেই জিনিস আজ বিলুপ্ত, শহরাঞ্চলে আজ তাই জনপ্রিয়!

কোনো এক চতুর মাধ্যমে এই কথা ছড়িয়ে গেছে যে, হুক্কা/সীসা সিগারেটের তুলনায় কম বিষাক্ত মতান্তরে বিষাক্ত নয়। আর বিশ্বব্রহ্মান্ডের এই অন্যতম ডাহা মিত্থ্যে কথাতেই হোক অথবা বন্ধুদের সামনে বুক উচু করে বলার জন্যই হোক, অসম্ভব হারে স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে জিনিসটির কদর বেড়ে চলেছে। বর্তমানে একদম হাতের কাছেই বিড়ি-সিগারেটের মতোই পাওয়া যাচ্ছে। জিনিসটাতে একটা রয়াল ভাব থাকলেও ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যেই অনায়াসে পাওয়া যায়!



আমার সবচেয়ে কষ্টটা এই জায়গায় যে, যেসব ছেলে-মেয়ে কোনোদিন সিগারেট স্পর্শ পর্যন্ত করেনাই, আজ তারা বাপের পকেট কিভাবে খালি করে ধোয়া দিয়ে পেট ভরছে দেখে! জীবনে একটা টাকা ঘুষ খায়নি, এরকম এক পরিচিত খালু। তিনি একজন প্রাক্তন সচীব। তিনি চাইলে আজ তার কোটি কোটি টাকা থাকতো, কিন্তু সততা তার কাছে জীবনের থেকেও দামী। জীবনে কোনোদিন সকাল বেলায় তাজা মাছ কিনেননাই তিনি, বিকেলের পর মলিন হয়ে যাওয়া মাছ কম দামে কিনে আনতেন। একজন সচীব! আজ তার ছোটোছেলে, যে কিনা আজানের আগে দৌড় দিয়ে ইফতারী ফেলে নামাযে চলে যেত, সেও এই সীসায় আসক্ত! কষ্ট কই রাখি?

আমার আরেকটা ভয়, অস্বাভাবিক হারে মেয়েরা সীসায় আসক্ত হয়ে পরছে! চেনা বেশ কিছু বান্ধবী সীসা নিয়ে খুব ওপেন আলাপ করছে, যেনো এটা হোটেল রাজ্জাক থেকে গ্লাসি খাবার মতোই কোনো একটা ব্যাপার!

এবার একটু দেখি, সীসায় আসলেই কোনো বিপদ আছে কিনা। মাঝে মাঝে কাউকে বিশ্বাস করতে নেই, নিজেকেও না! তাই, এই তথ্য খুজে বেড়ানো –

১) এই সীসার ৪টা পার্ট। বেজ, পাইপ, বওল আর মাউথপিস। বওলটাকে এলুমিনিয়ামের কভার দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় আর সেই ফয়েলের মাঝে উত্তপ্ত কয়লা রাখা হয়। যা কিনা ভেতরের টোব্যাকো (তামাক) পুড়াতে সাহায্য করে। অশিক্ষিত মাত্র জানে যে, কয়লা পুরে কার্বন মনো অক্সাইড হয়, যা মানুষের স্বাস-প্রস্বাসে চরম ক্ষতি করে। মৃত্যুও ঘটাতে পারে।

২) এই ধোয়া বেজ এ রাখা সুগন্ধী (যেমনঃ স্ট্র্যবেরী, নারিকেল, চকলেট, গোলাপ) পানির ভেতর হয়ে আসে এবং তা মাউথপিসের সাহায্যে সোজা পাকস্থলিতে পৌছে।

৩) রয়টার্সের নাম তো শুনেছেন? রয়টার্সের এক সংবাদ অনুযায়ী একটা পুর্ণ সেশনের সীসা গ্রহন এক প্যাকেট সিগারেট সেবনের মতোই মারাত্মক।

৪) সিগারেট এদিক থেকে একটু ভালো। সিগারেটে যেখানে ১-৩% নিকোটিন থাকে, সেখানে সীসাতে ব্যাবহৃত তামাক থেকে ২-৪% নিকোটিন থাকে। সুত্রঃ ড. কেনেথ, আমেরিকা একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিক্স এর প্রেসিডেন্ট।

৫) ইয়েমেন এর একটি প্রসিদ্ধ হাসপাতালের কার্ডিয়াক স্পেশালিস্ট ড. আহমেদ আল-মোতাররেব বলেন, “ একবার পুর্ণ ভাবে সীসা গ্রহন করা ৬০টি সিগারেট গ্রহন করবার সমান”। সুত্রঃ Journal of Periodontology (Nov. 2005)

৬) কিছু আধা শিক্ষিত মানুষ যুক্তি দেখায়, “এটা তো পানির মুধ্যে দিয়ে আসে। সব কিছু তো শোষন হয়ে যায়”। আমি তাদের দক্ষিন হাত ব্যাবহার করে বলি, “ওহে মুর্খ, নিকোটিন পানিতে প্রকৃতভাবে দ্রবীভুত হয়নারে ছাগলের ৩নম্বর বাচ্চা”

৭) সুগন্ধী, ঠান্ডা ধোয়া এবং প্রবল বিশ্বাস যে এটি ক্ষতিকর নয়, এগুলোই সীসার প্রতি মোহের একমাত্র কারণ। (সুত্রঃ ড. আল খামেরী, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।)

আমার আর কিচ্ছু বলার নেই। যাদের কথা বললাম, এদের কথায় যদি তারা কান না দেয়, আমার মতো চশমা পরা, হাবাগোবা ছেলের কথায় কান দিয়ে তারা কেনো তাদের জীবনের ক্ষতি করবে! ক্ষতিই তো, আমার কথা মানলে তো সীসা বার গুলা বন্ধ হয়ে যাবে! তখন, এই জমাট বেধে আডা মারা আর সীসা খেয়ে লদকা-লদকি করার মুড আসবে কোথা থেক? আক্রমনাত্মক ভাষা ব্যাবহার করায় দুঃখিত, তবে আমার হাতে শক্তি থাকলে, চাবকায়া সোজা বানিয়ে দিতাম! বাপের নাম ভুলে যেতো, সীসা আর কি জিনিস!

এখন এদের দরকার একটা গাইডেন্স, ঠিক ক্লাস থ্রী তে থাকতে যেমন ছিলো আমার মা। যে কিনা প্রচন্ড স্নেহময়ী কিন্তু দরকারের সময় বজ্রকঠোর। তাদের এখন একটা উপযুক্ত পদক্ষেপের প্রয়জোন যেটা কিনা আমার আম্মু নিয়েছিলো! আমি খুবি শংকিত, নতুন জেনারেশন নিয়ে কেনো যে জাফর ইকবাল স্যার, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এতো আশাবাদী! এদেরকে কি জবাব দিবো? স্যার, আমরা সীসা খাই? সিগারেট খাই? ইভ-টিজিং করি? পারলে আপনারা দেশ বানায় নেন, আমাদের দিয়ে আশা করে লাভ নাই! এই কথা বলবো?


সুত্রঃ
১) Click This Link

২) Click This Link

৩) Click This Link

৪) Click This Link

( পুর্বে ফেসবুকে ও আলী মাহমেদ স্যারের অতিথি ব্লগে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে প্রকাশিত)
২৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হোজ্জা রকস্

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:১৪

একদিন মোল্লা নাসিরুদ্দিন নিজের পোষা গাধাটিকে বাড়ির ছাদে নিয়ে গেলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেল, গাধা আর নিচে নামতে রাজি নয়। মোল্লা বহু চেষ্টা করলেন, পীড়াপীড়ি করলেন, কিন্তু গাধা অনড়।

অগত্যা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যারা সৌদি আরবের সাথে ঈদ করেছে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে দগ্ধ করবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:৪৬



সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১১৫ এর অনুবাদ-
১১৫। কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্যপথ অনুসরন করে, তবে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতে মুসলিমরা কি আসলেই নির্যাতিত?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:৪৩

গুজব রটানো কত সহজ দেখেন! ফেসবুক থেকে নেয়া একসাথে সংযুক্ত এই ৩টি ভিডিও দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কীভাবে গুজব রটিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যা, তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসলেই কি নির্বাচন হবে?

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২৩

আপনারা যদি নির্বাচনের পর সংস্কার সত্যি করতে পারবেন তাহলে ৫৩ বছর পারেননি কেনো?

- উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

এই যে কয়েকদিনের মধ্যে এই কথাগুলো উঠছে এর মানে হলো আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না ভাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

লিখেছেন নতুন নকিব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

রংপুর জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে তৈরী মডেল মসজিদের ছবিটি উইকি থেকে নেওয়া।

বাংলাদেশে ইসলামের নামে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও বাস্তবে তার অনেকগুলোই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×