চরিত্র আধুনিকীকরণঃ
ফটিক - ফ্যাটিক্স
মাখন- ম্যাক্স
মামা বিশ্বম্ভর বাবু - মামা বিসি রিখ
চাকর বাঘা বাগদি- চাকর টাইগার
চক্রবর্তী- চ্যাক্স
অনুপস্থিত মামাতো বোন- মামাতো বোন ফারিশা[/sb
১)
ঈবলিশ পোলাপানদের সর্দার ফ্যাটিক্স! এমন বেয়াদপ, শয়তান, ইতর ছেলে আশে-পাশের দুই এলাকায় আর আছে বলে এলাকাবাসীর জানা নেই। তার ডাক নাম ফ্যাট। যখন তার খেলা করবার মতন কিছু থাকেনা, এলাকাবাসী দরজা-জানালা বন্ধ করে তটস্থ হয়ে থাকে। কেননা তার মাথায় কোনো এক লীলা খেলার ভুত চাপবে। এখনো সেই সময় উপস্থিত হয়েছে। তারা ঠিক করেছে, তাদের দলের সবচেয়ে মোটা ছেলেটাকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে পাশের এলাকার ডাস্টবিনে ফেলবে। তারা যেইনা ঠেলা শুরু করলো, ওমনি ফ্যাটজ এর ছোটভাই ম্যাক্স এসে উপস্থিত। সে এসে ওই ভুঁড়ি ওয়ালা ছেলের কাঁধে উঠে বসে রইলো যে সে এখান ছাড়া কোত্থাও বসবেনা। ফ্যাটজ এর মাথায় তো জাউরামী ঠাসা! সে ম্যাক্সকে নিয়েই ঠেলতে শুরু করলো, আর ম্যাক্স পরে গেলো। সে রেগেমেগে এসে ফ্যাটজকে আন্ডারটেকারের মতো চোকস্ল্যাম দিতে উদ্যত হতেই ফ্যাটজ তাকে ধরে বাতিস্তার মতো একটা ফ্লাইং বাস্টার দিলো। ম্যাক্স চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে লাগলো, চোখ বুজার আগে দেখলো তাদের বাড়ির চাকর টাইগার তাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে ।
ফ্যাটজ খুবি ঝামেলায় পরে গেলো, মম যদি জানে সে ম্যাক্সকে মেরেছে তাহলে তার হাত-খরচ বন্ধ হয়ে যাবে, নেক্সট মান্থে তার রিসেন্ট গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে। গিফট না দিলে ......... সে আর ভাবতে পারছেনা!
এমন সময় একজন গোবিন্দ কালারের হাওয়াই শার্ট পরিহিতা লোক এসে তাকে জিজ্ঞেস করলো, “হেই ইয়াং ম্যান, মিসেস চ্যাক্সদের বাড়ি কোনটা বলতে পারো?” ফটিক কোনো উত্তর না দিয়ে এক বিশেষ আঙ্গুল প্রদর্শনী করায় লোকটি উদভ্রান্তের ন্যায় ছুটতে লাগলো।
২)
“ইউ ব্লাডি ডাফার! ম্যাক্সকে আবার মেরেছো তুমি? বারবার মানা করেছি, তাও কেনো ওকে মেরেছো? তোমার ক্রেডিট কার্ড তুমি কিভাবে ইউজ কর, দেখছি আমি............” কথা শেষ করবার পূর্বেই সেই হাওয়াই শার্ট পরা লোকটা বাড়িতে এসে হাঁক ছেড়ে ডাক দিলো, “ মলি!!”
- ব্রো !! তুমি !! এতদিন পরে!!
- ইয়াপ! আর থাকতে পারলাম না তোকে না দেখে। ৫ দিনের জন্য এসেছি, রিটার্ন টিকেট করে”
ফ্যাটজ শুধু হা করে তাকিয়েই রইলো! এই ভুঁড়িওয়ালা লোক তার মামা !
“ ফ্যাটি! মিট মাই ব্রো, তোমার মামা! ইনি তোমার বিসি রিখ মামা”
বিসি মামাও হা করে রইলেন, এক বাঙ্গালী মশা উনার মুখে ঢুকে জিহ্বায় কামড় দেয়ায় তাড়াতাড়ি মুখ বন্ধ করে ফেললেন।
ডিনারে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে ডিনার করছিলো, তখন হঠাৎ ফ্যাটজ এর মা বললো, “ ফ্যাটজ তো কোনো পড়াশুনা করেনা। একশোটা গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছে, লেখাপড়া তো ছেড়েছে সেই ডাইনোসররা যখন নিচু হয়ে পানি খেতো সেই আমলে!”
- “ তাই নাকি? আমার সাথে ইউ.এস.এ নিয়ে যাই তাহলে! ওখানে নাহলে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করে দিবোনে! অনেক পড়াশুনা করবে!”
- “ কি? যাবে মামা’র সাথে ইউ.এস.এ?”
এও কি সম্ভব? ভাগ্য কি এতোটাও কারো ভালো হতে পারে? যেই ন** আমেরিকা দেখতে দেখতে তার শৈশব পাড় হলো, সেই আমেরিকায় যাবে সে! না বুঝেই চিৎকার দিয়ে উঠলো, “এম রেডী!”
৩)
কিছুক্ষন পরেই ফ্যাটজ এর ফ্লাইট। যাবার আগে দিয়ে ফ্যাটজ তার ছোটোভাই ম্যাক্সকে তার রেটেড ডিভিডি কালেক্সন, পিসি’র পাসওয়ার্ড আর তার এক্স গার্লফ্রেন্ডদের ফোন নাম্বার দিয়ে গেলো। পৃথিবীর বুকে প্রথমবারের মত, বড়ভাই এর জন্য ম্যাক্স এর চোখে পানি এসে গেলো।
৪)
- বেইবী! কোথায় গেলে? এই দেখো, কাকে নিয়ে এসেছি!
- এই গেয়ো ছেলেটাকে নিয়ে এসেছো কেনো? কে ও ?
ফ্যাটজ এর খুব মন খারাপ হলো, ওর মামী হাজার হট হোক, তার দুর্ব্যাবহার সে সইতে পারলোনা। সে তার জন্য যে ঘর ঠিক করে রাখা হয়েছে সেখানে গিয়ে কাদতে লাগলো। দুই মিনিট পর কান্না থামিয়ে সে হাসতে লাগলো, “মামা’র মেয়েটা হট!”
৫)
দিনের পর দিন মামীর অত্যাচারে ফ্যাটজ বিরক্ত হয়ে পরলো। মামা’ও ইদানিং তার সাপোর্ট নেয়না। সে যে তার মামাতো বোনের সাথে লাইন মারে, মামা মনে হয় জেনে গেছে। ইদানিং তার মামাতো বোন, ফারিশাও তার সাথে বাজে ব্যবহার করে। সে বসে বসে তার আগের কথা মনে করতে লাগলো। কি আকাশ ছিলো, কি সুন্দর সুন্দর ইংলিশ মিডিয়ামের মেয়েগুলা ছিলো, কতো কতো গার্লফ্রেন্ড ছিলো- সে সব মনে করে শুধুই চোখের পানি গড়াতে লাগলো।
বারবার মামাকে সে জিজ্ঞেস করতে থাকলো, “মামা! উইন্টার ভ্যাকেশন কবে দিবে? আমি মমের কাছে যাবো”। মামা বললো, “ এইতো সামনেই, বেশী দেরি নাই”।
৬)
ক্লাসে পড়া কিছুই বুঝতে পারছেনা। স্যারের দিকে তাকাবে নাকি কোনোমতে স্কচট্যাপ দিয়ে স্কার্টটা জোড়া লাগানো মেয়ের দিকে তাকাবে, বুঝার আগেই ক্লাস শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে সে তার ল্যাপটপ হারিয়ে “নাচার” হয়ে পরলো। মামীর কাছে বলতে সে খুবি ভয় পাচ্ছে কিন্তু ল্যাপটপ ছাড়া সে নাজেহাল হয়ে পরছে। তাই সাহস করে একদিন বললো,
- মামী, আমি ল্যাপি হারিয়ে ফেলেছি।
- ভালো করেছে, মাসে ৩বার করে তোমাকে আমি ল্যাপটপ কিনে দিতে পারবোনা। পকর পকর পকর পকর ..................
ফ্যাটজ অবাক হয়ে গেলো, কবে তাকে ৩বার করে ল্যাপটপ কিনে দেয়া হয়েছিলো! অপমানের ভারে সে মাটির সাথে মিশে যেতে লাগলো। দুঃখে-কষ্টে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। বাইরে তুষারপাতের মধ্যে হাটতে লাগলো সে, হাটতে হাটতে সে একটা বারে ঢুকে মদ খেতে লাগলো।
এদিকে রাত পেড়িয়ে ভোর হয়ে গেলো, কিন্তু ফ্যাটজের কোনো খোজ না পেয়ে বিসি মামা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো, সে দ্রুত পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাকে খুজতে গেলো। সন্ধ্যার পর তাকে আধা-মরা টাল অবস্থায় ঘরে আনা হলো। জ্বরে সে কাপছিলো ঠক ঠক করে।
৭)
মেডিক্যাল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ফ্যাটজের রক্তে এইচ.আই.ভি পজেটিভ। তার স্বাস্থ্য দিনকে দিন খারাপ হতে লাগলো। মামা বিসি রিখ তার বোন মলিকে খবর পাঠালো, মলির ফ্লাইট ক্যান্সেল হওয়ায় সে এক সপ্তাহ দেরী হবে বলে জানালো।
- মামা, মম আসেনি?
- আসবে, এইতো রাস্তায়। ভয় পেয়োনা বাবা।
- মামা, ভ্যাকেশন কি শুরু হয়েছে?
মামা দুঃখে কোনো কথা বলতে পারলোনা, তার দু’চোখে পানি এসে গেলো।
- মামা, একটা কথা বলি?
- বলো বাবা।
- আমার এই অবস্থার জন্য আপনার মেয়ে দায়ী। দ্রুত ওর ব্যবস্থা না নিলে আপনাদের ড্রাইভার, ওর টিচার, ওর গোটা দশেক বয়ফ্রেন্ড কেউ বাঁচবেনা।
মামা যতোটা অবাক হলেন, তার থেকেও বেশী রাগ হলেন। একটা রাম থাবর মেরে তার ঘরে চলে গেলেন। ফটিক মনে করতে লাগলো, প্লেনে আসার সময় পাইলট যখন মেঘের জন্য কিছু দেখতে পাচ্ছিলোনা, তখন সে গাইছিলো – “ এক পা দেখিনা, দুই পা ও দেখিনা আ আ আ ............” সেও সুর করে গাইতে থাকলো।
৮)
৩দিন পরে মা আসলো, এসেই ফ্যাটজকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাদতে লাগলো।
- বাবা, কি হয়েছে আমার বাবার?
- “এ”- ইডস।
- না, আমার ছেলের এইডস হতে পারেনা। আমি তোকে সবথেকে বড় ডাক্তার দেখাবো।
পাশেই ওভেনে পিৎজা গরম হচ্ছিলো, টিং টিং করে ঘন্টি বেঁজে উঠলো।
- অনেক দেরী হয়ে গেছে মা। মা, আমার উইন্টার ভ্যাকেশন শুরু হয়েছে মা, আমার ছুটি হয়েছে, আমি বাড়ি যাচ্ছি।
ফ্যাটজ চোখ বন্ধ করলো, আর চোখ খুললনা।