আগের পর্ব
[এটি একটি গল্প মাত্র। কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিল খুঁজতে যাবেন না প্লিজ। আর এটি সম্পূর্ণ আমার মনগড়া গল্প। আমি কোন পর্ণস্টারের সাক্ষাৎকার নিয়ে এটা লিখতে বসিনি। ধন্যবাদ।]
যত বড় হচ্ছিলাম তত এই কথাটা বেশী করে শুনতাম যে আমি ‘সুন্দরী’। এ কথা শোনার সাথে সাথেই অজানা এক আশঙ্কায় আমি কাঁপতাম। তারউপর বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজের শারীরিক পরিবর্তনগুলোও যেন আমার জন্য অভিশাপ ছিল।আমার দুরন্তপনা দিন দিন কমে যাচ্ছিলো। সেই দিন শুধু সেই আঙ্কেলই না, পরে সুযোগমত অনেকেই আমার গায়ে হাত দিয়েছে বা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। আমার প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো খুব। অনেক সময় কান্নাকাটিও করতাম। পরে একটা সময়ে এসব কেমন জানি গা সওয়া হয়ে গিয়েছিলো। পরেরদিকে এধারার ছুঁয়ে যাওয়াটা আমি এনজয় করতে লাগলাম।
একদিন বিকালের কথা। আমি তখন রোজ বিকেলে নিয়ম করে সুইমিং শিখতে যেতাম। সেদিন সুইমিং শেষে বাইরে এসে দেখি ‘ক’ আর ‘খ’ দাঁড়িয়ে আছে। ওরা আমাকে নিতে এসেছে দেখে আমার খুব খুশী লাগলো। বের হওয়ার পর ‘ক’ বললো, “চল আইস্ক্রিম খাই।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন রে? কি হয়েছে? কোন উপলক্ষ নাকি??
- উপলক্ষ্য তো একটা আছেই, সেটাই আইস্ক্রিম খেতে খেতে বলবো। চল আগে।
এ কথা বলে ও বিটকেল একটা হাসি দিল। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে ‘খ’ এর দিকে চাইতেই ‘কিছু জানিনা’ এরকম একটা ভাব করলো।
এক চামচ ভর্তি চকো চিপস আইস্ক্রিম মুখে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ‘ক’ বললো, “আমার ডিরেক্টর তোকে ডেকেছেন।”
আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। ওর ডিরেক্টর আমাকে ডাকতে যাবে কেন?
‘ক’ মাঝেমধ্যে টুকটাক অভিনয় করে। তেমন সিরিয়াস কিছু না। কিন্তু তাও অনেকবার আমি আর ‘খ’ ওর সাথে গিয়েছি ওর স্যুটিং দেখতে। আমার মনে মনে এটাও ইচ্ছা ছিল, যদি আমাকে কেউ ডাকে। কিন্তু কখনোই কোন ডাক পাইনি। তাই আজ হঠাৎ এই কথায় আমি অবাকই হলাম।
পরে ‘ক’ আমাকে জানালো ও যে ডিরেক্টরের কাজ বেশী করে, তিনি একটা নতুন টিভি অ্যাডের জন্য নতুন একটা মেয়ে খুঁজছেন। তখন ‘ক’ আমার কথা বলায় উনি আমাকে চিনতে পারেন এবং স্ক্রীন টেস্টের জন্য ডাকেন।
এরপরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত।
আমি ডিরেক্টর মি. ‘পি’ এর সাথে গিয়ে দেখা করলাম। ‘ক’ পরিচয় করিয়ে দিল। সেই দিনই আমার স্ক্রীনটেস্ট হয়ে গেল। পরে মেকাপ করে আমার কয়েকটা প্রোফাইল ফটো নেওয়া হলো। এরপর একদিন সময়মত নির্দিষ্ট জায়গায় পোঁছে ডিরেক্টরের নির্দেশমত শট দিতেই এক টেকেই শট ওকে হয়ে গেল। সবাই হাত তালি দিল। খুব আনন্দ হচ্ছিলো আমার। আমার শ্যুটিং এর পুরোটা সময়ই ‘ক’ আর ‘খ’ সাথে থেকে আমাকে খুব উৎসাহ দিয়েছিল। সেই অ্যাড খুব হিট হয়েছিল আর সেই সাথে আমিও।
এরপর আমি আরো বেশ কয়েকটা কাজ করেছিলাম। মিডিয়াতে আমার ব্যস্ততা দিন দিন বেড়েই চলেছিল। যত দিন যায় তত আমি নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হই আর আমার নতুন নতুন কাজের অফার আসতে থাকে। এরই মধ্যে একদিন আমাকে একজন সিনেমায় কাজ করার প্রস্তাব দিলেন। আমি তো শুনেই খুশীতে আত্মহারা। সাথে সাথে এক কথায় আমি রাজী।
বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততার জন্য আমি আমার বন্ধুদের সাথে ঠিকমত দেখা সাক্ষাতও করতে পারতাম না। কিন্তু সিনেমায় কাজ করার অফার পাওয়ার পর ‘ক’ আর ‘খ’ কে ডেকে নিয়ে আমি ওদেরকে এ কথা জানালাম। আমার এ নতুন সাফল্যের কথা শুনে ‘খ’ খুব খুশী হলো কিন্তু ‘ক’ কেমন জানি গোমড়া হয়ে গেল। কিছুপরে ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
- সিনেমার গল্প কি ধাঁচের রে?
- তা তো জানি না।
- কেন? তুই স্ক্রিপ্টটা পড়িসনি ভাল করে?
- স্ক্রিপ্ট তো দেয়নি।
- মানে??? তোর চরিত্রটা কি সেটা জানিস তো?
- না।
- আজব!! তোকে স্ক্রিপ্ট দেয়নি, তুই গল্পটা জানিস না, কি চরিত্র তাও জানিস না আর তারা সিনেমায় কাজ করার কথা বল্লো আর তুই হুট করে হ্যাঁ করে চলে এলি? শোন, তুই এই সিনেমা টা করিস না।
- কেন?
- আমি তোকে মানা করছি। মিডিয়ার ভাল দিকে কাজ করছিস, ওখানেই থাক। সিনেমার দিকে ঝুঁকিস না, অনেক সমস্যা আছে।
এ কথা শোনার পর আমার বেশ রাগ হলো। মনে হলো যেন কোন কারণে ‘ক’ আমাকে হিংসা করছে। এত অল্প সময়ে আমার খ্যাতি, পরিচিতি, জনপ্রিয়তা ও সহ্য করতে পারছে না। এতটা সময় কাজ করেও ও তো জনপ্রিয় কেউ হতে পারেনি। নিশ্চয় ও আমাকে হিংসা করছে। সে কথা আমি সরাসরি ওকে বল্লামও। আমার এ কথা শুনে ‘ক’ খুব রেগে গেল। সেদিন আমাদের এক চোট ঝগড়া হয়ে গেল। ‘খ’ আমাদের থামানোর অনেক চেষ্টা করেও পারেনি।
পরদিন যখন আমার ডিরেক্টরের সাথে দেখা হলো, আমি তাকে সিনেমার নাম, কি গল্প, আমাকে কি ধরণের চরিত্র করতে হবে সব কিছু জিজ্ঞেস করলাম।
সব শুনে উনি একটু মুচকি হাসি দিলেন তারপর উত্তরে দেওয়া শুরু করলেন, “নামটা এখনও ফাইনাল করিনি। আর যে সিনেমায় তোমার মত এরকম সুন্দরী একজন আছে সেখানে আর তো কেউ মেইন ক্যারেক্টার হতে আপ্রে না, তাই না। সুতরাং তুমি হচ্ছো আমার সিনেমার নায়িকা। আর কিছু জানতে চাও কি?”
উনার কাছ থেকে এরকম একটা কথা শোনার পর আমার আর কিচ্ছু জানার ইচ্ছে হয়নি। আমি তখন হাওয়ায় ভাসতে লাগলাম আনন্দে। আমার খুব আনন্দ হচ্ছিলো এই ভেবে, যেখানে সিনেমায় কাজ করাটাই আমার জন্য একটা স্বপ্নের মত, সেখানে প্রথম কাজেই একেবারে সরাসরি নায়িকা!
স্বপ্নের ভেলায় ভাসতে ভাসতে সেদিন বাড়ি গেলাম। রাতে বিছানায় শুয়ে কিছুতেই আর ঘুম আসছিলো না। বিভিন্ন রকম চিন্তা করতে করতে কখন জানি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ফোনের রিঙ্গারের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফোন করেছেন আমার ডিরেক্টর।
-হ্যালো।
- গুড মর্নিং বালিকা। রেডী তো? আজ থেকে শ্যুটিং শুরু হচ্ছে কিন্তু। ১০ টার সময় তোমার বাসায় গাড়ি যাবে চলে এসো।
- কিন্তু আমি যে এখনও কোন স্ক্রীপ্ট পাইনি। আমি জানিও না আমাকে কি ক্যারেক্টার করতে হবে।
- কোন সমস্যা নেই। আগে সো, তারপর সব বুঝিতে দেব। এখন যাও তাড়াতাড়ি ভাল করে নাস্তা করে নিয়ে রেডী হয়ে নাও। প্রচুর এনার্জির দরকার হবে তোমার। গুড লাক।
কথা বলেই ফোন রেখে দিলেন উনি। কি ক্যারেক্টার করতে যাচ্ছি এটা জানি না। তাই মনটা একটু কেমন কেমন জানি করতেসিলো। সেই অবস্থায় বিছানা ছেড়ে উঠলাম। বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে কল খুলে মুখে পানির ঝাপটা দিতেই সব ঠিক হয়ে গেল। আমার ভাল লাগাটা আবার ফিরে আসতে লাগলো। আবারো সেই আনন্দানুভূতি। আমি নায়িকা হবো। আমি ফিল্মস্টার হবো!!
ফোটো কার্টেসিঃ আর্ট পিকস
চলবে.....
যারা এটির অপেক্ষায় ছিলেন তাদেরকে বলছি, দেরীতে এই পোষ্টটি দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
পরবর্তী পোষ্ট