somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“লাল-সবুজের পতাকা”

১৪ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বসে আছে মামুন, সতর্ক দৃষ্টি...দোস্ত খেয়াল রাখিস ভালভাবে বলল মামুন...আজ শালাদের সবগুলা উড়াইয়া দিমু...কন ভুল করা যাইব না। হ্যাঁ ঠিক বলেছিস...আজ এই শালাদের দেখিয়ে দিতে হবে বাঙালি কি জিনিস...

পল্টন এর একটি ছোট্ট বাসায় ওরা চারজন...মামুন, মল্লিক, রাসেল আর শাম্মি...শাম্মি একমাত্র নারী সদস্য এই দলের...আজ ৪ দিন থেকে ওরা এখানে আত্মগোপন করে আছে। উদ্দেশ্য পাক বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই ৩ টা লরি উরিয়ে দেয়া যেটা এখান দিয়ে যাবে...এই শাম্মি কই গেলরে, রাসেল বলল মল্লিক কে, কি জানি, মনে হয় দু মুঠো খাবার জোগাড় জন্ত করছে। হা হা হা, হেসে উথল মামুন, কিরে রাসেল, শাম্মি কে না দেখলে ভাল লাগেনা বুঝি...শালা, চুপ থাক একদম...ওই কি নিয়া কথা হচ্ছে, আবার আমার নাম ও শুনলাম মনে হল...আরেহ না, তেমন কিছু না, জাস্ট রাসেল তোর খোজ করছিলো। ও, এই শোন তোরা, বহু কষ্টে চারটা ভাত আর আলুভর্তা করেছি...আলহামদুলিল্লাহ মহারানি, আপনে তো দেখি বেহেস্তি খানা পাক কইরা ফালাইসেন আমাগো লাইগা, শুকরিয়া শুকরিয়া মাই লেডি...ভাগ, আমি তোর লেডি হব কন দুঃখে রে।

দুপুরে খাওয়ার পর চারজন বসলো একসাথে...এইযে দেখ, এদিক দিয়েই ট্রাক ৩ টা যাবে, মল্লিক তুই এই রাস্তার পাশে এই বিল্ডিং এর কার্নিশ এ থাকবি...আমাকে আর রাসেল কে ব্যাকআপ দেয়ার জন্য...আর এর আগেই আমরা রাস্তার কাজ চলছে এরকম একটা ব্লক রেখে দিব...শাম্মি ট্রাক ৩ টা এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তুই একটা গ্রেনেড ছুড়বি শেষ ট্রাক এর পিছনে...নিচে গেলেও আপত্তি নেই...আশা করি কুত্তারবাচ্চা পাক বাহিনী বেশি থাকবেনা...এরপর গ্রেনেড দেখে ওরা কিছু বেরিয়ে আসবে...তখন মল্লিক তুই বামদিক আর শাম্মি তুই ডানদিক থেকে ফায়ার করবি...দেখেশুনে খরচ করবি আম্র পজিসন বদলাবি যাতে ওরা বুঝতে না পারে যে আমরা মাত্র ৪ জোন...এরি মাঝে ওরা বিজি হয়ে থাকবে...তখন আমি আর রাসেল বোমা গুলো লাগিয়ে দিব ট্রাক গুলর নিচে...এরপর আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে তোরা ওই গলিটা দিয়ে পালিয়ে যাবি...আজ আমরা ওদের ধ্বংস করবই. মনে রাখবি এখানে যদি আমাদের কারও প্রান ও যায় বা ওদের হাতে ধরা ও পড়ি, কিছুতেই নিজের বাংলা মায়ের ক্ষতি হবে এমন তথ্য আমরা ওদের দিবনা....জয় বাংলা।

বিকেল ৪ টা বাজে, মল্লিক, শাম্মি যে যার পজিসন এ চলে গেছে। রাসেল ও মামুন অপেক্ষা করছে বোমা হাতে নিয়ে...একে একে ৩টা ট্রাক আসছে...মামুন আগেই রাস্তার কাজ চলছে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে...গাড়িগুলোর ৩টাই এসে থামল, ৩-৪ জন পাক হানাদার নেমে আসলো ঘটনা কি দেখার জন্য...এই সময় শাম্মি গ্রেনেড ছুড়ে, আর সশব্দে পিছনের ট্রাক টা কেঁপে উথে, পাক বাহিনী কোথাও আরাল না পেয়ে ট্রাক এর পিছনে আরাল নেবার চেষ্টা করে কিন্তু ওদিকে মল্লিকের হাতের মেশিনগান তখন গরজে উঠে একে একে মারা পড়তে থাকে বেশ কিছু পাক হানাদার...

দোস্ত, তারাতারি লাগা, আর একটা বাকি...বলল মামুন, এইত হ্যাঁ এইত প্রায় শেষ...বম লাগানো হয়ে গেছে, ওদিকে মল্লিক এর মেশিনগান এর পাল্টা জবাব দিচ্ছে হানাদাররা...এমনি সময় শাম্মি মামুন এর সিগনাল দেখে...মামুন শাম্মি কে বলে পালিয়ে যেতে, কিন্তু মল্লিক, সে তো থামছেনা...মামুন এদিক থেকে মল্লিককে সংকেত দেয়ার চেষ্টা করছে...কিন্তু মল্লিক, অবিরাম তার কাজ করে চলেছে, এমন সময় মামুন দেখে উল্টো দিক থেকে পাক হানাদার বোঝাই একটা জিপ আসছে...ও আর রাসেল কয়েকটা গ্রেনেড ছুড়ে দিয়ে গেরিলা স্টাইল এ গুলি করতে থাকে...এদিকে মল্লিক চীৎকার করছে...তোরা যা, তোরা পালা...আমার কসম লাগে তোরা যা...বেগতিক দেখে মামুন ও রাসেল মল্লিক এর দিকে একবার চেয়ে দেখল...মল্লিক ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হেসে শুধু বলল বিদায় বন্ধু...মামুন ও রাসেল দূর থেকে শুধু ঠোট নাড়া দেখতে পেল...এরপর ওরা মল্লিক এর কাভার ফায়ার এর ভিড়ে শাম্মি যে গলি দিয়ে গেছে, সে গলি দিয়ে ছলে গেল...

মল্লিক তার মেশিনগান এর শেষ গুলির ছররা টা লাগাল...এদিকে পাক হানাদার রা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা গ্রেনেড ছুড়েছে কিন্তু কাজ হয়নি...মল্লিক এবার শেষ সম্বল দিয়ে গুলি চালাতে থাকে, হঠাৎ ৩ টি ট্রাক সশব্দে কেঁপে উঠে...একনিমিশে ৩ টা আগুনের কুণ্ডে পরিণত হয় সেগুলো...অনেক পাক হানাদার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে আসেপাসে ছড়িয়ে পরে...মল্লিক তার মেশিনগান এবার সময় নিয়ে নিয়ে চালাতে থাকে...ওদিকে পাক হানাদারদের আরও ২ টা জিপ এসে হাজির...এবার পাক বাহিনী শেষে মর্টার হামলা করে...হঠাৎ একটি শেল এসে মল্লিককে আঘাত করে...মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে আমাদের মল্লিক...দেশের জন্য শহিদ হল মল্লিক...পাকবাহিনী আর কোন আওয়াজ না পেয়ে কাছে গিয়ে দেখে কপালে লাল-সবুজের পতাকা বাধা আর মুখে এক রহস্যময় হাসি নিয়ে মৃত এক যুবকের লাশ...”সালা মুক্তি” বলে গালি দিয়ে লাথি দেয়...দু একজন মুখে থু থু ছিটায়...তারপর তেনে হিঁচড়ে নিয়ে ফেলেদিল ভাগারে...এইভাবে বাংলার এক সূর্যসন্তানের লাশ পচে-গলে মিশে গেল বাংলার মাটিতে...

বিঃদ্রঃ গল্প আমি লিখতে পারিনা...আমার এই গল্পটাতে আহামরি কোন ঘটনা হয়তো আমি লিখিনি, হয়তবা গুছিয়েও লিখতে পারিনাই...তারপরও আমার এই গল্পের মত বাংলার কতো দামাল ছেলে শহিদ হয়েছে, নিজের জীবন বিপন্ন করে অন্যদের বাঁচিয়েছে...তাদের সৃতির উদ্দেশে আমার এই ছোট্ট প্রয়াস উৎসর্গ করলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×