পাঁচ বছর আগের ২০০৭ এর ১৭ মার্চে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেই প্রয়াত অলরাউন্ডার মানজারুল রানার মৃত্যুশোকে আচ্ছন্ন বাংলাদেশ বলেকয়ে করেছিলো ভারত বধ। মীরপুরের উইকেটে ভারতের ২৮৯ রানের সংগ্রহ বাংলাদেশ টপকে গেলো চার বল আর পাঁচ উইকেট ব্যব্হার না করেই।
তিন বাঁ-হাতি স্পিনার নিয়ে না নেমে তিন পেসার নামানোর সাহস কবে থেকে হলো বাংলাদেশের ?? এই টুর্নামেন্ট থেকেই। ইতিহাস নতুন করেই লেখা হয়। শচীন তেন্ডুলকার নামের ক্রিকেট দেবতা সেটাই প্রমাণ করলেন আবার। শতবার শতরান করা- প্লে স্টেশনের ক্রিকেটেই বা কেউ কখনো করে দেখিয়েছে আজতক ?? সাথে ইনফর্ম বিরাট কোহলি, তুখোড় রায়না আর সবসময়ের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ এমএসডির ক্যামিও ভারতকে আজ তুলে দিলো ২৮৯ রানের পাহাড়ে। ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের শক্তি বিচারে এই রান বড় কিছু নয়, তবে বাংলাদেশের সাথে জিততে বড় কিছু কবেই বা করতে হয়েছে প্রতিপক্ষকে।
১৫ রানের মাথায় সাজঘরে নাজিমুদ্দিন। তামিম খেললো, জহুরুল খেললো। ধোনির একসময় মনে হলো একটু বেশি সময় ধরেই খেলছেন তারা। ততক্ষণে সমীকরণ ২৫ ওভারে একশত নব্বইয়ের কাছাকাছি। কুড়ি-কুড়ি ম্যাচের আদর্শ সমীকরণ।
অভিষেক ফিফটি করে জহুরুল ফিরলেন। এই সিরিজে অচেনা এবং ধারাবাহিক তামিম ফিরলেন। তারপরেও ম্যাচে বাংলাদেশ রইলো ভালো মতই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন বিজ্ঞাপণ নাসির হোসেন ততক্ষণে উইকেটে সেট। আর বরাবরের মতোই, বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব উইকেটে সেট হতে সময় নিলেন না।
অশোক দিন্দার করা ৩৮তম ওভারটা ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। মিড উইকেটের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা সহ এই এক ওভারে সাকিব নিলেন ১৮ রান। শেষ দশ ওভারের সমীকরণে ৮৩ দরকার।
কিন্তু রবিচন্দন অশ্বিনের বিশাল ঘূর্ণিতে পরাস্ত সাকিবের স্টাম্পিং করে ভারতকে আরেকবার জয়ের রাস্তায় এনে দিলেন এমএসডি। এখান থেকে ম্যাচ প্রতিপক্ষের – জানিই তো আমরা।
ছোটখাটো শরীরের মানুষটি- যাকে অভিষেক সফরে ইংরেজ নাকউঁচু মিডিয়া আখ্যা দিয়েছিলো ‘বিস্ময় বালক’ বলে – সেই মুশফিক একেকটা ছয় হাঁকালেন, প্রার্থনারত বাংলাদেশ একেকবার ফেটে পড়লো নতুন প্রাণে। ৩ ওভারে ৩৩- হারকিউলেসের পাহাড়কে আলুটিলা বানিয়ে ওহ ক্যাপ্টেন- মাই ক্যাপ্টেন তীরে তরী নিয়ে এলেন প্রায় নির্বিঘ্নে, নাসির এর উইকেটের বিনিময়ে।
পাকিস্তানের সাথে হতে হতে হয়নি, ভারতের সাথে হলো, শ্রীলঙ্কার সাথে হবেই- ঠিক জানি !!
লাল-সবুজের জার্সির ছেলেরা, কথা সামান্যই। মীরপুরে হলো, দুনিয়ার বাকি অংশে হতে যেন বেশি দেরী না করেন। আপনারা চাইলেই হবে। স্টেডিয়াম আর টিভি পর্দার প্রতিটি প্রার্থনারত মুখ জানান দিচ্ছিলো, এই দেশের প্রানভোমরা আপনারাই।
সাবাস বাংলাদেশ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৪:৫১