একথা সত্য যে ব্লগে প্রায় সবারই রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা থাকে। নিজেদের পছন্দ-অপছন্দের দলও থাকে হয়তবা। দলীয় সমর্থন-অসমর্থন যে পক্ষেই থাকুক না কেন মানবীয় অবস্থান থেকে কিছু বিষয় বিবেচনা করা কখনো কখনো জরুরী হয়ে পড়ে। কারণ রাজনৈতিক চিন্তা তো মানুষেরই থাকে। মানুষই যদি না হই আমরা তাহলে রাজনীতি দিয়ে লাভ কি? যতদূর জানি জংগলে রাজনৈতি দল, গণতন্ত্র, নির্বাচন এসবের অস্তিত্ব নেই, প্রয়োজন হয়না। যদি দেশকে জংগল বিবেচনা না করে থাকেন তাহলে মানবীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:
তিন তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল একটি অভিযোগে। পুলিশ যথাসম্ভব তদন্ত করে, টি এফ আই সেলে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিযোগের সত্যতা পায়নি। যে তরুনীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা যে রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত তার বিরোধী পত্রিকার সংখ্যা অজস্র। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া যেরকম তাতে যদি সমান্য ক্ষুদ্র কোন কিছু পাওয়া যেত (সত্য মিথ্যা যাই হোক) তাহলে সেই পত্র-পত্রিকা গুলো প্রবল উৎসাহে সেসব রিপোর্ট করত। যেহেতু এসব কিছুই হয়নি তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে ঐ তরুনীদের বিরুদ্ধে আনীত “জঙ্গীবাদের সাথে জড়িত” থাকার অভিযোগ সঠিক নয় এবং তারা অন্তত এই অভিযোগ থেকে নির্দোষ।
অথচ পত্রিকা মারফত (দৈনিক আমার দেশ) জানতে পারলাম তাদের যখন মুক্তি দেয়া হল তখন জেলগেটে গুন্ডারা আক্রমণ করেছিল। যাদের বিরুদ্ধে ঐ তরুণীত্রয়কে উত্তক্ত করার অভিযোগ উঠেছিল, সেই গুন্ডা ও তার দলের লোকেরাই আক্রমণ করেছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ। এই আক্রমণের মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার হল যে, ঐ গুন্ডাদের বিরুদ্ধে যে উত্তক্ত করার অভিযোগ এসেছে তা সত্য হবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ, কেননা যারা এভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় জেল গেটে হামলা করবার মত উগ্র তাদের জন্য রাস্তাঘাটে নারীকে উত্তক্ত করার বিষয়টি একটি “মামুলী” কাজ হবার কথা।
অন্যদিকে এই ঘটনা প্রতিদিনের মত আমাদের আবার মনে করিয়ে দিল যে বর্তমান সরকার গত কয়েকমাসের শাসনে যে নৈরাজ্য এবং দলীয় গুন্ডাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে তা বজায় রাখতে এবং ক্ষেত্রবিশেষে এই ধারা জোরদার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গেলবার শাসনে জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, হাজী সেলিমের মাধ্যমে সারা দেশে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল তা মানুষ ভুলতে চেয়েছিল। ভেবেছিল দ্বিতীয়বারের শাসনে প্রথমবারের করা ভুলগুলো এই দলটি করবেনা, দলীয় গুন্ডাদের নিয়ন্ত্রয়ণ করতে পারবে। কিন্তু হায়! অভাগা জাতি! ছয়মাসে গুন্ডাতন্ত্রের যে জয়জয়কার ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে তাতে সরকারের বাকি সময়গুলোতে কিভাবে কাটবে এই চিন্তায় মানুষ চোখে শর্ষে ফুল দেখছে। মিথ্যা অভিযোগে প্রতিপক্ষকে গ্রেফতার করিয়ে এবং জেলগেটে আক্রমণ করেই তারা ক্ষান্ত নয় বরং খবরে প্রকাশ যে তাদের পরিবার পরিজনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা ভয় পাচেছ সামনের দিনগুলোতে হয়ত তাদের জন্য আরও ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে।
সেনাসমর্থিত সরকারের বিদায়ের মাধ্যমে জনগণ চেয়েছিল একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সে আশায় মানুষ ভোটও দিয়েছিল প্রবল উৎসাহে। কিন্তু গণতন্ত্রের বদলে প্রতিষ্ঠিত হল গুন্ডাতন্ত্র।
জয় গুন্ডাতন্ত্র। জয় বাংলার গুন্ডাবাজ লোকসকল।