জুলাই-আন্দোলন বা জুলাই-স্ক্যাম চলাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রায়ই বলা হতো ‘রিয়েলিটি মাইনে নেও’। আন্দোলনকারীরা তাচ্ছিল্য করে শেখ হাসিনাকে এই কথা বলত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন বলা হচ্ছে--‘রিয়েলিটি মাইনে নেও যে আপা আর ফিরবে না’। আন্দোলন চলাকালে এই বাক্য এবং গ্রাফিতির ভাষায় মনে হতো এই কথা উচ্চারণকারীরা ইউনিক কিছু বলছে। অথচ এটা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি।
জুলাই-স্ক্যামাররা শুরু থেকেই প্রতারণার নানা ছক কষে তাদের ষড়যন্ত্রের সফল বাস্তবায়ন করেছে। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নানা উদ্ধৃতি দেওয়া। তারা বঙ্গবন্ধুর নানা উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করতে চাইত, তারা বাংলাদেশের স্বপক্ষ শক্তি। তারা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে প্রমাণ করতে চাইত তারা বাংলাদেশকে ধারণ করে। কিন্তু ক্ষমতা দখলের পর প্রথমেই তারা আঘাত হেনেছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী স্মারক চিহ্নের ওপর, ভাঙচুর করেছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, পুড়িয়ে দিয়েছে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর, আর সবশেষ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ধানমন্ডির এই ঐতিহাসিক স্থাপনা।
‘রিয়েলিটি মাইনে নেও’ বলে যে কথা বর্তমানে বাংলাদেশ সব মহলে আলোচিত, এটা ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন বলে জানা যায়। তিনি পাকিস্তানের জুলফিকার আলি ভুট্টোকে উদ্দেশ করে এই কথাটি বলেছিলেন তখন, যখন স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিচ্ছি। বাংলাদেশকে একেক দেশ তখন স্বীকৃতি দিচ্ছিল, আর ভুট্টো সেই সব দেশের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ভুট্টোকে ‘রিয়েলিটি’ মেনে নিতে হয়েছিল।
রিয়েলিটি মাইনে নেওয়ার আরেকটা প্রসঙ্গের অবতারণা হচ্ছে দেশে এখন, যখন কথিত সমন্বয়ক অথবা কিংস পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছিল। তারা গায়ের জোরে বলছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে, আওয়ামী লীগকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে দেবে না। কিন্তু এটা কি সম্ভব?
সম্ভবত সম্ভব না। কারণ রাষ্ট্র ক্ষমতা হারালেও, এবং আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে বা পালিয়ে থাকলেও দেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এমন না। বরং মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ব্যর্থতায় দিনকে দিন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মানুষ ভুলে যেতে বসেছে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এবং প্রাণহানির ঘটনা।
অথচ আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক করার সবচেয়ে বড় সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি লাঠিয়াল বাহিনী না পুষে তারা যদি সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারত, তাহলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসা কঠিন ছিল।
মুহাম্মদ ইউনূস এবং কিংস পার্টি তথা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের উদ্দেশে এখন বলা যায়-- ‘বাচ্চারা রিয়েলিটি মাইনে নেও, আওয়ামী লীগ ফেরত আসতেছে’; তোমরাই এই পথ রচনা করে দিয়েছ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:২০