somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বৈশ্বিক গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সব সময়ই তলানির দিকে থাকে। এখানে গণমাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপ নতুন নয়। বাক স্বাধীনতা সব সময়ই সংরক্ষিত। বিএনপির শাসনামল, আওয়ামী লীগের শাসনামলসহ সকল সরকারের আমলে গণমাধ্যম মুক্তভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারেনি।

স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে গণমাধ্যম ছিল একইভাবে শৃঙ্খলিত। তবু চেষ্টা ছিল গণমাধ্যমের ঘুরে দাঁড়ানোর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দেড় দশকের শাসনামলে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বিপুল প্রসার লাভ করেছিল। অর্ধশতকের বেশি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এই গণমাধ্যমগুলোর মালিকানা ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল ঠিক, তবে তারা চেষ্টা করেছে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে টেলিভিশন-টেলিভিশনে যে টক-শোগুলো হতো সেগুলোতে শেখ হাসিনার সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করা হতো। প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের হুমকি দেওয়া হতো, কিন্তু সরকার সেগুলোতে কোনোধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেনি। প্রথম আলো-ডেইলি স্টার নামের দুই পত্রিকার বিরুদ্ধে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা উষ্মা প্রকাশ করতেন ঠিক, কিন্তু তাদের প্রকাশনা বন্ধের হুমকি দেননি। পত্রিকাগুলোর কার্যালয় দখলের ঘটনা ঘটেনি। কোন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করতে চাপ প্রয়োগ করেনি।

অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেল আওয়ামী লীগের মালিকানাধিন থাকলেও সেগুলোতে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করা হতো।

প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কেন্দ্রিক দেশে যে এলিট বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজের জন্ম ও বিকাশ লাভ করেছে সেটা আওয়ামী লীগের শাসনামলেই। আওয়ামী লীগের আমলে জন্ম ও বেড়ে ওঠেছে তারা আওয়ামী লীগের আদর্শের নগ্ন বিরোধিতা দিয়ে। দীর্ঘদিন টানা বিরোধিতা সহ্য করে গেছে আওয়ামী লীগ। ফলে শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারের চাইতেও শক্তিশালী ছিল দেশের গণমাধ্যম। এবং এটাই ছিল কাঙ্ক্ষিত।

সরকারের সমালোচনা করা, সরকারকে চাপে রাখা গণমাধ্যমের ধর্ম। আওয়ামী লীগের আমলে দেশের গণমাধ্যম তাদের সে ধর্ম পালন করে গেছে। এমনকি সরকার উৎখাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা কর্মসূচির সময় দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমের ধর্ম ও চরিত্র ভুলে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষাবলম্বন করলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাদেরকে বাধা দেয়নি। কিছু প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, মানবজমিন, যমুনা টিভি, যুগান্তরসহ অনেক গণমাধ্যম সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এখানে শেখ হাসিনা সরকার যে উদারনীতি গ্রহণ করেছিল সেটা গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের সম্মান প্রদর্শনের নমুনা।

দেশের সকল গণমাধ্যম যে আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়েছিল এমন না, অনেক গণমাধ্যম তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ নিয়েছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। চিরায়ত সরকারবিরোধিতা কিংবা সরকারকে চাপে রাখার বিষয়টি তিরোহিত হয়ে গেছে। এখন দেশের গণমাধ্যমগুলো সরকারের স্তাবকশ্রেণি রূপে আবির্ভুত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং সরকারের নানা এজেন্সি সরকারবিরোধী সকল সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করতে বাধ্য করেছে, এবং সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন সংবাদ প্রকাশে আরোপ করা হয়েছে সেন্সরশিপ।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন বাংলাদেশে নেই।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৪০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদৃশ্য দোলনায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



ভোরের রোদ্র এসে ঘাসের শিশিরে মেঘের দেশে চলে যেতে বলে
শিশির মেঘের দেশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঘাসের মাঝে ফিরে আসে-
বৃষ্টি হাসে শিশিরের কথায়। তাহলে আমরা দু’জন কেন প্রিয়?
এক জুটিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×